প্রথম পর্ব এখানে
Click This Link
যে নুর-নাহার হিসেব করে জীবন চালাত,যার জীবনের প্রতিটি দিন,প্রতিটি ক্ষন ছিল রুটিন মাফিক,যে কোন কিছুতেই উদ্ধিগ্ন হত,পরিবারের সবার সাথে আনন্দ-বেদনা,সুখ-দুঃখ কে ভাগাভাগি করে চলত,সে এখন ভিষন রকম পাল্টে গেছে,আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। পরিবারের সবার সাথে মন খোলে মিশতে পারে না। পরিবারের সবাই তাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দিন পূ্র্বেও এরকম ছিল না। সে ছিল সকলের প্রিয় পাত্রী, সকলের নয়নের মনি,যাকে ঘিরে ছিল স্বপ্ন ও সম্ভবনা। এখন তার নাওয়া খাওয়া সব গোল্লায় গেছে, শরীর শুকাচ্ছে,সুন্দর মুখটিতে কালো কালো দাগ পড়ছে।যে নুর নাহার প্রান খোলে হাসত,অন্যদের হাসাতো, যার রস বোধ ছিল অতুলনীয়,সেই নুর নাহার শুকনো মুখে বসে থাকে মরা গুঁড়ির মতো,শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে রং ওঠা দেয়ালের দিকে।নুরনাহারের ছোট বোন নুশরাত প্রায়ই ওকে বলে, "তোর জন্যই আমার জীবনটা অনিশ্চত হয়ে গেল,একমাত্র তোর কারনে আমার প্রতিও বাবা-মায়ের বিশ্বাস হারিয়ে গেছে,তাই তোর আগেই আমাকে বিয়ের সাজে সাজতে হলো। আমার উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জীবনের প্রতিবন্ধকতার জন্য তোকেই দায়ী করব"। তারপরও নিরবে নিভৃতে শিমুলের জন্য পাগলের মত কাঁদে। যার আত্মমর্যাদা বোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর,সে-ই কিনা নিজকে অপমানিত হতে দি্চ্ছে একটা অপদার্থ নেশাখোর অর্থলোভীর কাছে। সে এখনও বুঝতে চায় না স্বামীনামক ঐ হিন্দু ছেলেটি তাকে ধোকা দিয়েছে। সে আমারও খুব আদরের ছিল,ছোট বেলা থেকেই আদর যত্মে বড় করেছি। কিন্ত বর্তমানে তার বোধবুদ্ধিহীন প্রেমটি দেখলে আমার খুর বিরক্ত লাগে কস্ট হয়। নুর নাহারের বর্তমান যাপিত জীবন কেবল ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ নিয়েই কাটে না, কাটে সীমাহীন যন্ত্রনায়...........।
আমার ধারনা পুরুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কারার পর কোন কারনে যদি সেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, নারী যদি একা থাকে তাহলে তার মস্তিস্কে কিঞ্চিত অসুস্থতা আসতে বাধ্য। পুরুষ মানুষ নাকি নারীদের কাছে একটি রোগের নাম। সেই রোগ নাকি কখনোও কখনোও নারীদের মন এবং শরীরে ওষুধের কাজ করে। এটা নুরনাহারের ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক নয়, কারন প্রথম দৈহিক আনন্দ সে পেয়েছে শিমুলের কাছ থেকে।তাই এখনও তাকে ভুলতে পারে না। নুরনাহারের বাবার বংশ মর্যাদাও কোন দিক দিয়ে কম ছিল না। যদিও তিনি বেশী শিক্ষিত ছিলেন না,তবে শিক্ষিত সমাজে ছিল তার অবাধ বিচরন।শিক্ষাকে,শিক্ষিত মানুষকে সব সময় শ্রদ্ধা করতেন। ব্যক্তি হিসাবেও ছিলেন অমায়িক। মানুষকে নিজের ভালবাসা,সরলতা দিয়ে সহজেই আপন করে নেবার একটা অসম্ভব ক্ষমতা সর্বদা তার ভিতর কাজ করতো। অন্যের বিপদে নিজের সর্বস্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ত। তাই মেয়েকে শিক্ষিতা করতে তিনি কখনোই কার্পন্য করেননি।অভিজাত স্কুল এবং বাড়ীতে গৃহশিক্ষক রেখে ছোট বেলা থেকেই মেয়ের শক্ত ভিত তৈরী করেছিলেন্। ছাত্রী হিসাবে সব সময়ই প্রথম শ্রেনীর ফল করত। খুব সুন্দর ইংরেজীও বলত। কিন্ত অল্প বয়সে নিজকে শক্ত মাটির উপর দাঁড় না করিয়েই প্রেমে পড়ে নিজের জীবনটাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিল।
(চলবে........... )