somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিজীবনে হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জিলা স্কুলের হোস্টেলে জীবনের সবচাইতে রঙ্গিন সময়গুলো কাটাতে কাটাতে আমি পড়তাম চাচা চৌধুরী কমিকস, সাইমুম সিরিজ ইত্যাদি। খেলাধূলায় তেমন পটু না হওয়ায় বিকের বেলায় মাঠে ঘাসের উপর বসে বসে অবসর কাটাতাম। তেমনি এক বিকেলে পাশের মসজিদ মার্কেট থেকে  হাতখরচের টাকা দিয়ে প্রথম কিনেছিলাম হুমায়ূন আহমেদের "কিছু শৈশব"। সেই থেকে শুরু।

তথাকথিত পন্ডিতদের কাছে যিনি সস্তা লেখক। বস্তুত, তারা কিসের ভিত্তিতে হুমায়ূন আহমেদকে সস্তা লেখক বলে। সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে যিনি বইমুখী করেছে। এক বইমেলায় যার হাজার হাজার কপি বই বিক্রি হয়। যার অটোগ্রাফের জন্য লাইন বাড়তে বাড়তে মেলা প্রাঙ্গন পেরিয়ে যায়। তিনি সস্তা লেখক?
"নন্দিত নরক" দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে যাত্রা করে। যিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ।

" কিছু শৈশব" পড়ার পর ধীরে ধীরে কিনতে থাকলাম হিমু সিরিজের বইগুলো। মনে আছে স্পষ্টত, বাড়ি থেকে যে টাকা দিত হাতখরচের জন্য সেটা দিয়ে বই কেনার পর তেমন কোন টাকাই হাতে থাকত না। কখনো কখনো সকালের নাস্তায় ৫ টাকার ডালভাজি, চা দুিজনে ভাগাভাগি করেছি।

হিমু হওয়ার বাসনা অনার্স ৩য় বর্ষ পর্যন্ত বেশ ভাল ভাবে ঝেঁকে বসেছিল। এখনো মাঝে মাঝে পুরনো রোগ উগলে উঠে। আসলে, বই এবং বইয়ের চরিত্র গুলোও এক ধরনের নেশা তৈরী করতে পারে।
জুনিয়র বৃত্তি পরিক্ষার আগের রাতেও বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে লুকিয়ে হিমু সিরিজের বই পড়েছি।

মিসির আলী'কে নিয়ে কখনোই কোন আগ্রহ আমার ছিল না। কেন আগ্রহ ছিল না? সে প্রশ্নের সমাধান আমার কাছে নেই।
অষ্টম শ্রেণীর পর কোন এক কারণে জিলা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হবার পর আমি যে পরিবেশে বসবাস করতে লাগলাম। বখে যাওয়াটা তখন স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু, একমাত্র হূমায়ূন স্যারের মত মানুষদের লেখা আমায় আঁটকে রেখেছে বইয়ের মাঝে।

বইয়ের প্রতি অধম্য আগ্রহ থাকলেও পাঠ্য বইয়ের প্রতি মাধ্যমিকেন পর আর কোন আগ্রহ ছিল না।

ক্লাস টেনে যখন স্যার জিজ্ঞেস করতো। এইম ইন লাইফ কি? মা চাইতেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার হই। বাবা চাইতেন, ডাক্তার।
আর আমি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বাদ দিয়ে যখন লেখক হতে চাইতাম। ক্লাস ভর্তি হাসির রোল পড়ে যেত। একজন মানুষ কিভাবে এমন রিখতে পারত। সেই পিচ্ছি বয়েসে, সেটা ভেবেই অবাক হতাম।

ইন্টারে ভর্তি হয়ে ক্লাস রুমের পরিবর্তে আমি হয়ে উঠলাম কলেজ লাইব্রেরীর নিয়মিত যাত্রী। সে সময় অজস্র বইয়ের মাঝে হুমায়ূন আহমেদ থেকে খানিকটা বিচ্যুত ঘটলেও, তিনি হৃদয় থেকে মুচে যান নি। সে সময় এমন এক বন্ধুবর শিক্ষকের সান্নিধ্য পেলাম। শ্রদ্ধেয় ঈসমাইল মাহমুদ স্যার। তিনি তিনি আমাকে সন্ধান দিতে লাগলেন। নতুন নতুন বই আর লেখকের। হুমায়ূন স্যারের মৃত্যুর কিছুদিন আগে স্যারের প্রতি এমন আগ্রহ দেখে, ঈসমাইল স্যার আমাকে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার কথা বললেন। কিন্তু, হুমায়ূন স্যারকে আর দেখা হয় নি।

বাংলার অজস্র তরুণ তরুণী সহ সকল বয়েসের মানুষকে যিনি বইমুখী করেছেন। তার হাত তৈরী হয়েছে হিমু, মিসির আলি আর শুভ্র'রা।
বাকের ভাই এর মত চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেছেন। একটা চরিত্রের জন্য ফাঁসি রুখতে দর্শকের মিছিল করার মত ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।
তার হাতে তৈরী হয়েছে  ঘেটু পুত্র কমলা'র মত বিখ্যাত চলচ্চিত্র।

প্রত্যেক বাংলাদেশী এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে স্যারের জোছনা ও জননীর গল্প এবং দেয়াল উপন্যাস দুটি পড়া প্রয়োজন। তিনি কতখানি রাজনীতি এবং রাষ্ট্র সচেতন ছিলেন, সেটা বুঝতে পারা যায় তার উক্ত রচনাদ্বয়ে।

এখনো, প্রতিটি বইমেলায় এক জোড়া, এক জোড়া করে। আমার মত লক্ষ লক্ষ জোড়া চোখ খোঁজে হুমায়ূর স্যারকে।

এখনো, নিমফুল ফোটে রয় সবুজ সাথী'দের পথ চেয়ে উড়ে যায় বকপঙ্খী এই মেঘ এই রৌদ্রে। কোথাও কেউ নেই জেনেও তারা তিন জন হেঁটে যায় নক্ষত্রের রাতে।

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ।




সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×