somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় পানীয়ঃ বিয়ার, ওয়াইন, স্পিরিট, কফি, চা আর কোলা- কার কোনটা!!

২০ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






বেয়ার, ওয়াইন, স্পিরিট, কফি, চা আর কোলা এই ছয়টি পানীয় দ্বারা নাকি মানব সভ্যতার বিকাশকে মূল্যায়ন করা যায়! আর Tom Standage এর A History of the World in 6 Glasses নামক বইয়ে সভ্যতার বিকাশের সাথে বিভিন্ন ধরনের পানীয় এর আভির্ভাব/প্রভাব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। যারা বইটি পরেছেন তারা আরো ভালো বলতে পারবেন।





এসব পানীয়ের মাঝে সর্বপ্রথম তৈরি হয় বিয়ার, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে (Fertile Crescen era) এবং মেসোপটেমিয়াতে বিয়ার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ পানীয় কারণ তখনকার সময় শ্রমের মূল্য পরিশোধ করা হতো এই বেয়ার দিয়ে। এর পর আসে ওয়াইন (জর্জিয়া/গ্রীস), তারপর স্পিরিট মানে ব্র্যান্ডি আর রাম (Age of Exploration)। সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রাগ ক্যাফেইন মানে কফির বিস্তার হয় ১৫০০ শতাব্দিতে এবং এর যাত্রা শুরু হয় ইথোপিয়া থেকে। অ্যালকোহলের বিকল্প হিসাবে আরব বিশ্বে এর বিস্তার লাভ ঘটে। ১৮ শতকে (Age of Reason / Age of Enlightenment) ইউরোপে এর বিস্তার লাভ করে এবং তৎকালীন সময়ে কফি হাউজ গুলো ছিল দার্শনিক মত বিনিময়ের কেন্দ্র, মানে জ্ঞানী(ধনী!) লোকদের আড্ডার স্থান। চায়নিজরা প্রথম চা পান শুরু করে এবং তা ১০০ বছরেরও আগে, পরে এটি ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বশেষ ১৯ শতকে আসে কার্বনেটেড ড্রিংক্স যার মধ্যে অন্যতম কোকা কোলা।



কফিঃ
এই ছয় ধরনের পানীয় এর মাঝে একেক জনের কাছে একেকটা প্রিয়!! এই লেখা পড়ে অনেকের হয়তো প্রথম দিকের কয়েকটা পানীয়ের জন্য কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে, ঠিক বলিনি;);)?!! তবে এই ছয় ধরনের পানীয়ের মাঝে প্রতিদিনের পানীয় হিসাবে আমি সবার আগে যেটাকে স্থান দেই সেটা হলো কফি। কফি না হলে কি দিন চলে, অঃন্তত আমি ভাবতে পারি না:D! কাজের ফাঁকে ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ কফি টনিকের মতো কাজ করে! তবে এই কাপ কফির তৈরি প্রক্রিয়াও কিন্তু দেশ/স্থান ভেদে ভিন্ন হয়।


ভূমিকাতেই যেমনটি বলেছি যে পানীয় হিসাবে কফির যাত্রা শুরু ইথোপিয়া থেকে ১৫০০ শতাব্দিতে। এই ক্যাফেইন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রাগ যা সারা বিশ্বব্যাপি পান করা হয় এবং ফিনল্যান্ড এটি সবচেয়ে বেশি পান করা হয়, প্রতি জন বছরে গড়ে ৬০৮.২ লিটার কফি পান করে। তুরস্কতে কফির মিহি গুড়া একটা কপারের পাত্রে ফুটানো হয় যেটাকে ibrik বলে। সম্ভবত টার্কিশ ভাষায় সকালের নাস্তাকে kahvaltı বলে যার অর্থ কফি পানের আগে (before coffee)। টার্কিশ কফি সাধারণত খুব কড়া, ঘন এবং মিষ্টি, যা ছোট কাপে পরিবেশন করা হয়।


ইতালীয়ান এসপ্রেসচ (espresso, এক অসাম কফি:)) যা অধিক চাপে প্রায় ফুটন্ত পানিকে কফির গুড়ার মধ্য দিয়ে চালনা করা হয় এবং ৩০ সেকেন্ড কফির এই নির্যাস ছোট এক কাপে সংগ্রহ করা হয় যার ওজন সাধারণত ১ আউন্স হয়(ইলেক্ট্রিক কফি মেশিন বা stovetop pot দুই ক্ষেত্রেই এভাবে তৈরি হয়)। এই কফি খুবই কড়া এবং ঘন যা বেশির ভাগ ইতালীয়ান চিনি ছাড়া পান করে। আমাদের অনেকের হয়তো প্রথম বার চিনি ছাড়া এই কফি পান করলে বমি হয়ে যেতে পারে, আমার ক্ষেত্রে এমন্টাই হয়েছিল। আর এখন আমি এই কফির প্রচন্ড রকম ভক্ত যদিও আমি চিনি দিয়ে পান করি। আমার বিশ্বাস কেউ যদি এই কফিতে একবার অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে সারা জীবন আর অন্য ধরণের কফি পছন্দ করবেনা!! ইতালীয়ানরা সারাদিনই এই এসপ্রেসচ (espresso) পান করে তবে সকালে সাধারণত cappuccino and caffé latte(এসপ্রেসচ এর সাথে দুধ আর দুধের ফেনা মিশিয়ে তৈরি হয়) পান করে। এরা সাধারণত খাবারের পর গরম দুধ খায় না, এদের পুর্ব পুরুষদের ধারণা ছিল খাবারের পর গরম দুধ খেলে পুরো পাকস্থলি গরম হয়ে যায়B-)!! আর এখন মনে হয় এটা এদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে।


ব্রাজিলিয়ানরা কফি বানায় আমাদের দেশে চা এর মতো করে। গরম পানিতে কফির গুড়া আর চিনি দিয়ে পরে ছাকনি দিয়ে ছেকে কফি পান করে। জাপানে বিখ্যাত হলো কোল্ড কফি, এরা প্রথমে গরম কফি বানায় এবং বানানোর পর সাথে সাথে ঠান্ডা করে ফেলে। থাইল্যান্ডেও কোল্ড কফি বেশি জনপ্রিয়।

ভিয়েনার কফি হাউজ কালচারকে তো জাতিসংঘ অস্ট্রিয়ার National Inventory of Intangible Cultural Heritage হিসাবে ঘোষনা দিয়েছে! ভিয়েনার কফি হাউজগুলো (kaffeehaüser) ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এদের বিখ্যাত কফি wiener mélange (coffee with steamed milk, topped with milk foam)। এরা মগ ভর্তি করে কফি খায়। ভিয়েনাতে আমি যে ল্যাবে কাজ করতাম সেখানে এক মহিলা ছিল যে কিনা সকালে প্রায় হাফ লিটার কফি পান করতো:|। বেশ কিছুদিন ভিয়েনা থাকার সুবাদে অনেকবার এই কফি টেস্ট নেয়ার সুযোগ হয়েছে কিন্তু আমার মাঝে কোন আবেদন তৈরি করতে পারেনি;)! ঐ যে আগেই বলেছি যে একবার Italian espresso কফির স্বাদ পেয়েছে তার পক্ষে অন্য কিছুতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়!

আমেরিকায় চলে আমেরিকান কফি, যাকে বলে Americano (espresso mixed with hot water)। আমেরিকায় কফি জনপ্রিয় হয় যখন Peet’s Coffee and Tea (১৯৬৬) and Starbucks (১৯৭১) প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশেও মনে হয় এই টাইপ কফি তৈরি হয়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যরা এই কফির প্রচলন করে।

অন্যতম কফি উৎপাদন কারী দেশ কেনিয়াতে ট্র্যাডিশনালী এক ধরনের তিতা (Kahawa chungu, or “bitter coffee”) কফি পান করা হয় এবং তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় পিতলের কেটলি আর কয়লার চুলা। এই তিতা কফি সাধারণত পুরুষরা পান করে। যদিও বিশ্বের ভালো কোয়ালিটির কফি এরা তৈরি করে কিন্তু নিজেরা পান করার সুযোগ পায় না, সব চলে যায় ইউরোপ আমেরিকায়!! অনেকটা আমাদের গার্মেন্টস সামগ্রীর মতো!

যাই হউক, ঈদে সবাই যার যার পছন্দের পানীয় নিয়ে আনন্দে মেতে উঠুক! সবাইকে ঈদ মোবারক!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩৪
৮৪টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×