somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লাড ডায়মন্ডঃ হীরা নয়,রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে ডায়মন্ড মানুষকে অস্ত্রের মুখে ফেলে দে,কিছু মানুষের ব্যবসার জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণ নিমিষে চলে যায় সেটা হলো ব্ল্যাক ডায়মন্ড।


৯০’র দশকে সিয়েরা লিওনে গৃহ যুদ্ধ শুরু হয়।এটি চলে ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত।সিয়েরা লিওনের গৃহ যুদ্ধ এবং মিলিওন মিলিওন টাকার ডায়মন্ড ব্যবসা নিয়ে একটি অসাধারণ মুভি আছে ব্ল্যাক ডায়মন্ড।

মুভির শুরুটা সিয়েরা লিওনের মেন্ডে (সিয়েরা লিওনের অধিবাসীদের মেন্ডে বলা হয়) সলোমন ভ্যান্ডি(জিমন হসুউ) এবং তার ছেলে ডিয়া ভ্যান্ডিকে নিয়ে।সলোমন পেশায় ছিল জেলে।সে তার পুত্র,কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে একটি গ্রামে বাস করত।এমনি সময়ে বিদ্রোহী সংগঠন আর ইউ এফ(Revolutionary United Front) ঐ গ্রামে হামলা চালায়।এ হামলায় সলোমন তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।আর সলোমনের স্থান হয় আর ইউ এফের অধীনে একটি হীরার খনিতে।এ হীরার খনিতে কাজ করার সময় সে একটা ভিন্ন রকম হীরার খন্ডের সন্ধান পায়। কৌশলে সে এটি লুকিয়ে ফেলতে যায়।তখনি আর্মি ঐ খনিতে হামলা চালায়।সে কোনো মতে হীরক খন্ডটি জংগলের কাছে মাটিতে পুঁতে ফেলে।

অন্যদিকে ড্যানি আর্চার(লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও)একজন স্মাগলার। সে অস্ত্রের বিনিময়ে আর ইউ এফ এর কাছ থেকে হীরা কিনে। আর এই হীরা পাচার করা হয় বিভিন্ন দেশে।বিশ্বের বড় বড় হীরা কোম্পানি গুলো এই হীরা পাচারের সাথে জড়িত।সলোমন ভ্যান্ডির পুঁতে ফেলা পিঙ্ক কালারের সে হীরার খন্ড টিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে সলোমন ও আর্চার মুভির কাহিনীটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাদের এই এডভেঞ্চারাস পথে সহায়তা করে ম্যাগাজিনের জার্নালিস্ট ম্যাডি ব্রাউন(জেনিফার কলেনি)।

মুভির পরতে পরতে আছে এডভেঞ্চার আর সাসপেন্স।আর শেষের দৃশ্য গুলো দাগ কেটে যাবে আমাদের মনে আর রেশ টা বহু দিন পর্যন্ত থেকে যাবে। এমনি এক গল্প নিয়ে এডওয়ার্ড জুইক ২০০৬ সালে থ্রিলার জনরার মুভিটি পরিচালনা করেছেন।



কাকে ব্যবহার করে কে কতটুকু সুবিধা আদায় করতে পারে এ নিয়মে যেন পৃথিবী টা চলছে। মনুষ্যত্ব ভূলন্ঠিত হচ্ছে।এ মুভিতে ডি ক্যাপ্রিও এর চমৎকার একটি ডায়লগ আছে। “Will God ever forgive us for what we’ve done to each other?” আসলেই তো তাই।কিভাবে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে ক্ষমা করবে।কিভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য,কিভাবে নিজে উপরে উঠার জন্য অন্যকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হয় আমরা এটা খুব ভালো করেই শিখে গেছি। সৃষ্টিকর্তা যেন বহু বছর আগেই এই পৃথিবী ত্যাগ করে গেছেন। নাহলে তিনি কিভাবেই বা সইছেন এতো কিছু।

প্রভাবশালীদের ক্ষমতা পৃথিবী জুড়ে সর্বত্র।ছোট একটা গরীব রাষ্ট্রও তাদের লোভ লালসা থেকে মুক্তি পায় না। এমনি এক ডায়মন্ড কোম্পানি ভ্যান ডি ক্যাপ-কে দেখানো হয়েছে যারা কিভাবে নিজেদের ব্যবসার জন্য একটি গরীব রাষ্ট্রকে শুষে নিচ্ছে।পৃথিবীর মোট হীরার দুই-তৃতীয়াংশ হলো আফ্রিকা এবং রাশিয়ায়।এতো হীরা থাকার পরেও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশই দরিদ্র।সিয়েরা লিওনের ৭০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।তাদের মূল উপজীবিকা কৃষি কাজ এবং মাছ ধরা। আর তাদের দেশেরই মিলিওন মিলিওন ডলারের হীরা পাচার হয়ে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে যা কিনা তাদের সম্পদ।সিয়েরা লিওনের এক হিরার খনির শ্রমিকের মুখে বলতে শোনা যায়- “আমরা হীরা উৎপাদন করি কিন্তু একটা সাইকেল কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। এই দেশের ভূমি আমাদের, সবকিছু আমাদের, তবু কিছুই যেন আমাদের না।” আর উন্নত দেশের ব্যবসায়ীরা এই সাধারণ মানুষ গুলোকে পুঁজি করে ফুলে ফেঁপে উঠছে দিন দিন।কর্পোরেট কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করছে এই শ্রমিকের হাত ধরেই।বিনিময়ে তাদের মজুরি হয় দৈনিক এক ডলারেরও কম।এ যেন আমাদেরকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি,ব্রিটিশ শাসনামল ও নীল চাষীদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

আফ্রিকার এই দেশগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে গৃহযুদ্ধে।বিদ্রোহী সংস্থা গুলো ছোট বাচ্চাদের ভায়োলেন্ট করে তুলছে।আই এস(Islamic State) এর মতো জংগী সংস্থা গুলো যেভাবে ধর্মের নামে তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করছে একই ভাবে আর ইউ এফ বাচ্চাদের দেশের দোহাই দিয়ে মগজ ধোলাই করে চলেছে।তাদেরকে বলা হচ্ছে তাদের পরিবার হচ্ছে ট্রেইটর। তার হয়ে যাচ্ছে হিংস্র,রক্তপাতের নেশা তাদেরকে পেয়ে বসেছে।আর উন্নত দেশগুলো এ জংগী সংস্থা গুলোর অস্ত্রের মূল যোগানদার।

এমনকি আর ইউ এফের সাথে যোগাযোগ ছিল অনেক দেশের রাষ্ট্রপতিরও। লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলর এই সব কনফ্লিক্ট এরিয়া থেকে ডায়মন্ড কিনে নিতো।বিনিময়ে তিনি অস্ত্র সরবরাহ করতেন এই সব বিদ্রোহী সংগঠনকে। ১৯৯৭ সালে এক নৈশ ভোজে যান টেলর।সেখানে তার সাথে সাক্ষাত হয় ব্রিটিশ সুপার মডেল নাওমি ক্যাম্পবেলের।এই সুপার মডেলের রূপে মুগ্ধ হয়ে সেই রাতেই টেলর তাকে মূল্যবান হীরার পাথর উপহার দেন।পরবর্তীতে টেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে অস্ত্র ও হীরা চোরাচালানের।

ভারতের ডন দাউদ ইব্রাহীমের কথাও আমরা অনেক শুনেছি। এই দাউদ ইব্রাহিমও কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড অর্থাৎ ব্লাড ডায়মন্ড ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। আফ্রিকা থেকে লোক ভাড়া করে দুবাইয়ে এই হীরা আনা হয়।দুবাইয়ে দাউদের একটি ডায়মন্ডের দোকান ছিল।তবে তার আগে এই হীরা প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য পাঠানো হয়ে ভারতে।এই কনফ্লিক্ট ডায়মন্ডগুলো খনি থেকে উত্তোলন করা হয় অবৈধভাবে যার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। এভাবে গোটা বিশ্বটা শুষে নিচ্ছে কিছু দরিদ্র মানুষকে।



১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং দশ হাজার মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর নারী ও শিশু। এটি ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ।আমরা বিত্তশালীরা আমাদের প্রিয় জনকে লক্ষ লক্ষ টাকার ডায়মন্ড উপহার দিচ্ছি। আমরা জানিও না হয়তো এই হীরার পিছনে আছে কত মানুষের রক্ত মাখা ঘাম।


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×