মানুষ কয়বার ইজ্জত হারাতে পারে ? আর মানুষের ইজ্জত আসলে কোনটা ? যাই হোক, আমি আমার এই সুদীর্ঘ জীবনে ইজ্জত কয়েকবার হারিয়েছি !!! আজকে আবার ইজ্জত প্রায় হারিয়ে ফেলিছিলাম। কাহিনী শুনেন।
আমার বয়স তখন ৫/৬ বছর। নিজের জামাকাপড় নিজেই পড়ি ! একবার আমার জ্বর হওয়াতে আম্মু আমাকে নিয়ে গেলো ডাঃ বাকির কাছে। উনি প্রথমেই আমাকে যা বললেন “আঙ্কেল, তোমার হাফপ্যান্টের চেইন খোলা !”
আমি তড়িৎ গতিতে আমার ইজ্জত সামলানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ততক্ষনে অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। চেম্বারে থাকা তার এক সহকারী শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। আম্মুও হাসতে লাগলো ! ভাবখানা এমন যে আমি বাচ্চা বলে আমার কোনও ইজ্জত নাই ! এর পর থেকে আমি আমার প্প্যান্টের চেইন কিংবা বোতাম বারবার চেক করি। রাস্তায় থাকলে আরও বেশি করি। মেয়েরা থাকলে আরও বেশি করি। বলা যায় না, কখন ইজ্জত পাংচার হয়ে যায়। তবে অনেক সময় মেয়েরা লজ্জা পায়। বিশ্বাস করেন ভাই, কোনও খারাপ ইঙ্গিত না এটা। আমার নিজের নিরাপত্তার খাতিরে করতে হয়।
গতবছর আমারা কয়েক বন্ধু বান্ধবি মিলে বান্দরবন ঘুরতে গেলাম। হোটেলে বসে আক রুমে আড্ডা দিচ্ছি (বিঃদ্রঃ- ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা রুম ছিল)। আমি থ্রি কোয়ার্টার পরে পদ্মাসনে বসে আড্ডা দিচ্ছি খাটের উপর। হঠাৎ এক বান্ধবী আমার দিকে তাকিয়ে হেসে আঙ্গুল তুলল । আমার দৃষ্টি তার আঙ্গুল অনুসরণ করে আমারই বিশেষ জায়গায় এসে স্থির হল !সেখানে কাপড়ের জায়গায় বিশাল এক গর্ত। আমি লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে হামাগুড়ি দিয়ে আরেক রুমে গেলাম। ততক্ষনে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি প্যান্ট পাল্টে এসে দেখি সবাই আমার দিকে তাকায় আর খালি হাসে। ভাইরে , কষ্টে মইরা গেলাম। তবে ইজ্জত পুরা যায় নাই। ভাগ্যিস নিচে প্রতিরক্ষা বর্ম ছিল।
আজ বিকালে কলেজ মাঠে ফুটবল খেলতে গেলাম। বন্ধুরা তখন বলছিল যে আমার থ্রি কোয়ার্টার নাকি সুন্দর। আমি দাঁত বের করে বললাম, কক্সবাজার থেকে কেনা। কিন্তু হাঁটতে গিয়ে মনে হল সেলাই বেশি একটা সুবিধার না। যাই হোক খেলা শেষ হল। আমরা মাঠে গোল হয়ে বসলাম। এবার আমি নিজেই খেয়াল করলাম যে নিচে বিশাল না, মহাবিশাল গ্যাপ। তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। ডন ভাই বলল, “কিরে কই যাস”
“জরুরী ফোন আসছে, মেসে যাই”
“তুই না ফোন আনস নাই?” কামাল ধরে ফেললো।
আমি কোনও মতে ভেগে গেটে গেলাম। ওইখানে গিয়ে চেক করে দেখি কিছুই নাই। এই জিনিস পরে গেলে যেই, না গেলেও একই। সামনে উপরের বর্ডার থেকে ৩ ইঞ্চি নিচ থেকে শুরু করে পেছনে উপরের বর্ডারের ৪ ইঞ্চি নিচ পর্যন্ত ছেঁড়া। এই অবস্থায় রিক্সা নেয়া সম্ভব না।নিলে বরং বেকায়দা। তাই হেটে কলেজ থেকে মেসে রওনা দিলাম। দুই পা এমনভাবে একসাথে লাগিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম যেন কেউ প্রথমবার না বুঝে। লেডিস ক্লাবের সামনে যেতে দেখি সামনে একটু দূরে একটা মেয়ে দাঁত বের করে হাসছে। আমি তো শেষ। কাছাকাছি হতে দেখি আমাদের ক্লাসের নেপালি এক মেয়ে। হাই জানিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। আরেকটু সামনে দেখি এক জুনিয়র মেয়ে আর তার বান্ধবী। এ আবার আমার ক্লাসমেটের জি এফ। তাড়াতাড়ি চলে এলাম। সর্বশেষ বিপদ ছিল মেসের নিচের গলির পোলাপান। ওরা বিকালে গলিতে ক্রিকেট খেলে। খেলা মনে হয় তুমুল পর্যায়ে ছিল। নাহয় এত মারাত্মক একটা জিনিস মিস করার কথা না। অথবা দাড়িওয়ালা মুরুব্বি দেখে কিছু বলে নাই। সিঁড়িতে উঠে মনে মনে আল্লাহকে ধইন্না দিলাম।আর থ্রি কোয়ার্টারের ইলাস্টিকের ফিতা টানতে টানতে ৫ তলায় উঠে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:৪৩