মূল লেখকঃ অপু আল ইমরান
আমরা যদি মানুষের রক্ত খাই, তাহলে অন্যরা কি করে???
মানবাধিকার(!!!!!!!) কমিশনের চেয়ারম্যান মিযানুর রহমান এই উপাধিটা ডাক্তারদের দিয়ে ভালই করেছেন। তার মতে ডাক্তাররা পাঁচ মিনিট রুগী দেখার জন্য ৫০০/১০০০ টাকা নেয়। তারা হাসপাতালে ঠিকমত ডিউটি করতে আসেন না। বরং ক্লিনিকে হাজার হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসা করেন। রুগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন ইত্যাদি ইত্যাদি......। অভিযোগের কোন শেষ নেই এই সরকারী গোলামদের বিরুদ্ধে।
তাহলে আমাদের কি করা উচিত???? ডাক্তারি বাদ দিয়ে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে হবে। কারন এগুলা খুবই পরোপকারী কাজ। কিভাবে? বোকার দল তোমরা দেখো না যে ১জন সন্ত্রাসীকে ক্রসফায়ারে মারলে বা জেলে জবানবন্দি নিলে আমাদের মানবাধিকার কমিশন ও মানবাধিকার কর্মীরা কিভাবে সন্ত্রাসী ভদ্রলোক (!!!!!!!!) টিকে বাঁচানোর জন্য মিসিল-মিটিং, সেমিনার, স্মারকলিপি আরও কত কিছু দিয়ে বিচার কাজই বন্ধ করে দেয়? কোন ডাক্তারকে মারার পর কখনো তারা এসব করে? তার মানে কি দাঁড়াল?? সন্ত্রাস করা মানুষের অধিকার কিন্তু ডাক্তারি করা দোষের। তা না হলে তাঁদের মতন বিজ্ঞ, জ্ঞানী (!!!!!!) লোকেরা কি সন্ত্রাসিদের জন্য এত কিছু করেন?????? তাই আমরা চোর, দাকাত, সন্ত্রাসী হই। তাহলে অন্তত আমাদের গালি খেতে হবে না।
ডাক্তাররা ৫০০/১০০০ টাকা ভিজিট নিবে কেন? আমাদের এই পরিমান ভিজিট নিতে একজন স্পেশালিষ্ট হতে হয়। তা হতে লাগে প্রায় ১০/১৫ বছর। আমরা কত গাধা যে এত সময় নিয়ে এই যোগ্যতা অর্জন করি। নন ডাক্তারি পেশায় আমাদের বন্ধুরা ১০/১৫ বছরে বাড়ি, গাড়ি, নারী সবই অর্জন করে ফেলে। আমাদের মত গাধাদের তাহলে মানুষ এত টাকা ভিজিট দিবে কেন? আবার শুধু এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের মিযান সাহেবেরা দেখান না। কারন তাঁদের তো যোগ্যতাই নেই তাঁদের (মিযান সাহেব) চিকিৎসা করার। স্পেশালিষ্ট না হলে কি আর তারা দেখাতে পারেন? তাঁদের প্রেস্টিজে লাগে। ক্লিনিকে গিয়ে কারা চিকিৎসা নেয়? মিজান সাহেবের মত যারা সরকারী হাস্পাতালের নোংরা পরিবেশে থাকতে পারেন না। সবাই অতিরিক্ত কাজের জন্য টাকা নিতে পারবে, শুধু ডাক্তাররা নিলেই দোষ। তারা তো কলুর বলদ!!!
কয়েকদিন আগে হোস্টেলের সামনে চায়ের দোকানে এক লোক ডাক্তারদের সমানে গালাগালি করছে। আমি বসে বসে শুনলাম। কি আর করব? কারন মিযান সাহেবের মত একজন অভুক্তভোগী যদি গালি দেয় তাহলে একজন ভুক্তভোগী তো দিতেই পারে। তার অভিযোগ ছিল হাসপাতালে তাকে কেন ফ্রি ওষুধ দেয়া হল না? এটার জবাব সরকারের দেয়ার কথা থাকলেও গালিটা খেতে হল ডাক্তারের। কারন সবাই এখন জানে যে- ডাক্তারকে গালি দাও, মারো, কাটো যা খুশি তাই কর কেউ কিছু বলবে না। তারা তো সরকারের গোলাম।
আরেকটা কমন কথা সবার কাছে যে, আমরা সরকারের টাকায় পড়াশুনা করি। তাই দেশের সবার ফ্রি তে চিকিৎসা করতে হবে। আমরা যদি ফ্রি তে চিকিৎসা না করি তাহলে এই মহান পেশায় আসলাম কেন? আমরা শুধু সরকারের টাকায় পড়ি আর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবাই বাপের টাকা খরচ করে পড়ে!!!!!!! তাঁদের তো দেশের মানুষের প্রতি কোন কর্তব্য নেই। তারা পাস করে বড় বড় অফিসার হবে আর আমাদেরকে রক্তচোষা বলবে- এটাই তাঁদের কর্তব্য। এ জন্যই তারা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাপের টাকায়(!!!!!) পড়াশুনা করে।
ডাক্তাররা তো মানুষ না, তাঁদের পরিবার, সমাজ, সুখ, দুঃখ কিছুই নেই। তাঁদের জীবনের তো কোন চাওয়া পাওয়া নেই যে তাঁদের টাকা লাগবে। ডাক্তাররা না খেয়ে মরুক তাতে কি? মানুষের সেবা কর সারাদিন তারপর সন্ধ্যাবেলা রুগীর লোকজন এসে তোমাকে ওষুধ না দেয়ার জন্য খাবার হিসেবে ধোলাই দিয়ে যাবে ফ্রি তে। এটাই কম কি?
বাস ড্রাইভার- হেল্পারকে যদি অনিয়ম করার জন্য মানুষ মারে তাহলে তারা ২/৪ দিন ধর্মঘট দিয়ে মানুষের জীবন অচল করে দেয়। কিন্তু ডাক্তাররা এতই অধম যে তাদের অন্যায়ভাবে কেউ আঘাত করলে তারও প্রতিবাদ করার উপায় নেই। কারন এই ডাক্তার অমানুষ গুলো হাসপাতালে না থাকলে তো সাধারন গরিব রুগীগুলা মরবে। তাই জীবন গেলেও অমানুষগুলো কাজ করে যায়। মানুষের বাহবা পাবার জন্য নয়, নিজের ভিতর যে বিবেক, ভালবাসা আর মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে তার তাড়নায়। হায়রে ডাক্তার......... তোমরা সত্যিই সেলুকাস!!!!!!!
৬ বছর এম বি বি এস, তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন (কতদিনে হবে আল্লাহ জানেন), তারপর আরও ডিগ্রী অর্জন, তারপর একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বিনিময়ে গালি খেতে আমাদের অভ্যাস করতে হবে। রুগীর লোকজন যখন তখন গায়ে হাত তুলবে তা সহ্য করতে হবে। কারনে অকারনে মানুষ ডাক্তারকে গালি দিবে তাও মেনে নিতে হবে। এসবের প্রতিবাদ করা যাবে না। কারন আমরা মহান পেশায় এসেছি, আমাদের মহামানব হতে হবে।
যারা ডাক্তারদের গালি দেয়, নীতিবাক্য শুনায় তাদেরকে একটা কথাই বলব- আসেন ভাই, শুধু এম বি বি এস কোর্সটা করে যান। তারপর আমরা দেখি আপনি কত বড় মহামানব!!!! এসি রুমে বসে থেকে এইসব চাপাবাজি বন্ধ করে নিজের কাজটা করেন। তাতে দেশের ও মানুষের উপকার হবে। তা যদি না পারেন তাহলে নিজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ঘরে চুপচাপ বসে থাকেন। তাহলে কারো উপকার না করলেও ক্ষতি অন্তত করতে পারবেন না।
(লিখার ফেবু লিংকঃ আমরা যদি মানুষের রক্ত খাই, তাহলে অন্যরা কি করে??? )