somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক ময়মনসিংহনিবাসীর খুলনা-বাগেরহাট ভ্রমণকাহিনী(উইথ ফটোব্লগ)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুলনা স্টেশনের বাইরের মলিন অবস্থা দেখে একটু দমেই গিয়েছিলাম প্রথম প্রথম । তিনজনে প্রায় ২০০কেজি+ এক রিকশায় চেপে শহরের শিববাড়ি মোড়ে হোটেল টাইগার গার্ডেনের দিকে যেতে যেতে কিছু বড় বড় বিল্ডিং দেখে স্বস্তি পেলাম । টাঈগাড় গার্ডেনে গিয়ে জানলাম এক রুমে চারজন থাকা যাবে না । আমাদের খুলনা-এক্সপার্ট বন্ধু আগে থেকেই সেখানে ছিল । কাজেই আর কি করা, ডাবল রুমই নিতে হল, তারমানে দুইদিনে প্রায় ১০২০টাকার ধাক্কা । হোটেলে উঠে গোসল করে নিলাম, এরপর একটু ভাল ভাল লাগতে লাগল । দুপুরে বেশ ভাল একটা খাওয়া দিলাম, প্রায় চারশ টাকার চাইনিজ খাওন ছিল । এরপর একটু রেস্ট নিয়ে ৬টার দিকে চিড়িয়াখানা দেখতে বের হলাম । যাওয়ার সময় খুলনা স্টেডিয়াম, মেরিন একাডেমী দেখতে পেলাম কোনভাবে ভিতরে যাইতে পারলে ভাল হত । ফুলবাড়ী মোড়ে নেমে অটো দিয়ে চিড়িয়াখানায় পৌঁছলাম ।

গোধূলীর আলোয় খুলনা নগর
খুলনা চিড়িয়াখানা বেশ ভালই সমৃদ্ধ । আসল বাঘ, চিতাবাঘ, ভাল্লুক, বান্দর, মদনটাক(একটা আবার দর্শকদের দিকে পিঠ দিয়ে ভাব ধরে বসেছিল), খরগোশ, হরিণ, ম্যাকাও, গিনিপিগ সহ আর কিছু জন্তু জানোয়ার ছিল । সবচাইতে আজব ব্যাপার হল, বাঘ আর হরিণের ডেরা একেবারে পাশাপাশি । চিড়িয়াখানাতে বেশিক্ষণ সময় থাকিনাই । একবার দেখা হয়ে গেলেই খুলনা শহরে ফিরে আসলাম ।


মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য, শিববাড়ী মোড়, খুলনা
রাতে আরেকটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাটার নান আর মুরগীর রোস্ট দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম । খরচ হইল প্রায় দুইশ টাকা । এরপরে হোটেলে ফিরে আসলাম । হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ টিভি দেখে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

পরেরদিনের শিডীউলে ছিল বাগেরহাট ভ্রমণ । বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য অটোতে উঠে খুলনা শহর দেখতে দেখতে গেলাম । একটা মার্কামারা রেস্টুরেন্ট(আলিবাবা রেস্টুরেন্ট) আর এরশাদ শিকদারের বাড়ি “স্বর্ণকমল” দেখা গেল । ৬০টাকা লাগল, বাগেরহাট যেতেও প্রায় বেশ কিছুক্ষণ লাগল কিন্তু পরে দেখলাম দূরত্ব তেমন একটা বেশি ছিল না প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটারের মত হবে । যাই হোক, বাগেরহাট খান জাহান আলী(রহঃ) এর মাজারের সামনে গিয়ে দেখলাম, রোদের ভয়াবহ প্রকোপ । মাজারে ঢুকতে ঢুকতেই গরম জেঁকে ধরল । শুনেছি মিশরের কায়রোতে নাকি দোকানদাররা পথচারীদের ডাকতে ডাকতে কিছু সময় পাশাপাশি হাঁটেও, এখানের অবস্থা সেরকম না হলেও অনেকটা কাছাকাছিই । খাবারের দোকানগুলো, আগরবাতি-মোমবাতির দোকানগুলো থেকে সমানে দোকানদারদের বিরক্তিকর ডাকাডাকি চলছিলো । আর সত্যি কথা বলতে, আমি মাজারকে ঘিরে এই ধরণের ব্যবসা ও মাজারে ইসলামের নামে অদ্ভুত অদ্ভুত রীতি-নীতি পালন একেবারেই পছন্দ করি না । যাই হোক, মাজারের আশেপাশে আমার এতদিনের পরিচিত ইসলামকে দেখতে না পেয়ে একটু অস্বস্তির সাথে মাজারের সময়টা কাটালাম । সবশেষে খান জাহান আলী(রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করে বেরিয়ে পড়লাম ।








শুটআউট এট বাগেরহাট

মাজার থেকে বেরিয়ে আমরা বাইরের দোকানগুলোতে জিনিসপত্র দেখতে লাগলাম । আমার প্রথম প্রথম এখানে টাকা খরচ করার কোন ইচ্ছা ছিল । একপর্যায়ে আমার মনে হল, খুলনা যে ঘুরে গেলাম তার কিছু সুভেনির তো রাখা উচিত । এর জন্য, ওর জন্য কিনতে কিনতে দেখি প্রায় সাড়ে তিনশো টাকার মত খরচা হয়ে গেছে । যাই হোক, এরপরে ষাট গম্বুজ মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলাম ।

ষাট গম্বুজ মসজিদের ওখানে গিয়ে উপলব্ধি হল এতদূর থেকে ছুটে আসা অবশেষে সার্থক হল । নামে ষাট গম্বুজ হলেও আসলে এই মসজিদের গম্বুজ হল ৮১টি, মূল গম্বুজ হল ৭৭টা, মসজিদের ভেতরে পিলারের সংখ্যাও তাই জানি । মসজিদে ঢুকেই আমি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নজর এড়িয়ে পিলার, প্রবেশপথ, দেয়ালের কারুকাজ ইত্যাদির ছবি তুললাম । দেখলাম বেশিরভাগ থাম ইটের আবরণ দিয়ে ঘেরা থাকলেও একটা থামে কোন ধরণের আবরণ ব্যবহার করা হয়নি । এই থাম ষাট গম্বুজ মসজিদের আদি ও আসল ডিজাইনের একটা নিদর্শন হিসেবে রাখা হয়েছে । মসজিদ থেকে বেরিয়ে ঘোড়াদীঘি দেখে বের হলাম । ও হ্যাঁ, আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদের মিউজিয়ামও দেখেছিলাম । জাদুঘরটার সংগ্রহ বেশ ভালই । বাংলাদেশে যে এত সুন্দর সুন্দর ঐতিহাসিক মসজিদ আছে তা আবার মনে পড়ল । সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে পড়লেও ভুলে গিয়েছিলাম । আমাদের দলের দুইজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ । এই দুইজায়গার বেশ কয়েকটা মসজিদের ছবি চোখে পড়ল । কিন্তু তারা আগে সেভাবে জানত না এগুলোর কথা । একারণে তাঁদের মাঝে কিছু খোঁচাখুচি হয়ে গেল ।







বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে খুলনা শহরে পৌছালাম । পরেরদিন আমাদের খুলনা থেকে চলে যাওয়ার কথা । সেদিন রাতে আর সেভাবে বের হওয়া হয়ে উঠেনাই । রাতে হোটেল রুমে টিভি দেখে অলস সময় কাটালাম । রাতে নাস্তা করে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম । তবে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না, এত বিশাল খুলনা শহরের রাস্তা, তারপরও যানবাহন এত কম কেন? জিয়া হলের সামনে বিশাল শিববাড়ি মোড়ের রাস্তাটা অনেকাংশেই খালি থাকে ।





(বাঘ ও হরিণের ছবি বন্ধুর তোলা)


পরেরদিন সকালবেলা উঠে তৈরি হয়ে ১২টার আগেই হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম । বাস ছাড়ার কথা হল সন্ধ্যা সাতটার সময়, তারমানে এই সাতঘণ্টা আমাদের খুলনা শহরের চিপায়-চুপায় ঘুরে কাটাতে হবে, তার ওপর আমার সেই হোঁতকা ব্যাগ আর হোঁতকা আকার ধারণ করেছে । হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে । এই জাদুঘরটা যথেষ্ট রিচ, এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরতে গেলে অনেক সময় লাগে । তবে এক জিনিস কয়েকবার করে রাখা আছে । নানা আমলের মুদ্রা, কোরআন শরীফ, শিল্পকর্ম, ফলক, কারুকাজ করা ইট পাথর, নানা জিনিস ছিল ।

জাদুঘর থেকে বেরিয়ে অটো দিয়ে খানজাহান আলী রোডের দিকে গেলাম । ওদিকে প্রচুর হেঁটেছি । হাঁটতে হাঁটতে খুব খারাপ লাগছিল, আর খুলনায় বোতলের পানি ছাড়া ভাল পানি পাওয়া পাওয়া মুশকিল । হেঁটে কিছুক্ষণ পর জাতিসংঘ পার্কে গিয়ে তিনমূর্তি কিছুক্ষণ বসে থাকলাম । একটু পর টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল । আমরা অটোতে করে দুপুরের খাবার খেতে “কেইফুং” নামে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম ।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে দেখি আরো চার ঘণ্টা বাকি । এ সময়টুকু কাটাতে বয়রা চলে গেলাম, সেখান থেকে মুজগুন্নীতে । যাওয়ার পথেও সে একই ব্যাপার, অনেক বড় রাস্তা কিন্তু মানুষ কম, চারপাশের অনেক জমি খালি পড়ে আছে কিন্তু বাড়িঘর সেই তুলনায় কম । যাই হোক, মুজগুন্নীতে যেই যায়গায় গিয়েছিলাম সেটা কোন এককালে শিশুপার্ক হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু কালের বিবর্তনে লুল প্রেমিক-প্রেমিকা গোষ্ঠী এই পার্ক আর শিশগু পার্ক রাখেনাই । আমি জীবনে একসাথে এত জুটি দেখিনাই । ক্যামেরা বের করে প্রকৃতির যে দুই একটা ফটো তুলব তার উপায় রাখেনাই । যাই হোক, পার্কের এক নিরাপদ জায়গায় বসে আমরা তিনজন “এলিয়েন” পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম । সময় কাটানো বলে কথা ।

বেলা পাঁচটার দিকে বের হলাম সেখান থেকে । বাকি দুজন দিনের আলোয় বাঘ দেখবে বলে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল । আমি নিমরাজি থাকা সত্ত্বেও গেলাম দিনের আলোয় সব দেখলাম । আমার এক বন্ধু বাঘ, হরিণের ছবি তুলল । সবশেষে ভ্যানে চড়ে শেষবারের মত খুলনা শহরের সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে শহরে চলে এলাম ।

বিয়ারটিসির বাস যখন ছেড়ে দিল তার একটু পরে খেয়াল করলাম আমি যেই সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলটা নিয়ে এসেছিলাম(৩০০-৪০০টাকা দাম হবে) সেটা হারিয়ে ফেলেছি । কিন্তু বাসায় ফিরে আসার কথা ভেবে আমার এত ভালো লাগছিল যে তখন আমি এই ব্যাপার তেমন একটা পাত্তাই দেইনি । নয় ঘণ্টার জার্নির পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমার প্রিয় শহর ময়মনসিং হে এসে পড়লাম । ঘরে ফেরার আনন্দ যে কি, সেটা উপলব্ধি করার জন্য হলেও মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া । এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় ।

এক ময়মনসিংহনিবাসীর ঢাকা-খুলনা ভ্রমণনামা-১(ঢাকা পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫২
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×