ফাইনাল! অবাক হচ্ছেন, সবেতো কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা চলছে, এরপর সেমিফাইনাল, তারপর না ফাইনাল। বলা হচ্ছে আর্জেন্টিনা-জার্মানির মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালের কথা। বলা হচ্ছে এ ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল কেউ কেউ তো আরও সরেস, বলছেন এই ম্যাচ উৎরালেই বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত।
কিন্তু এতটা বলা কি উচিত? অন্যদের কথা বাদই দিলাম কিন্তু সেমিতে যে স্পেন-প্যারাগুয়েও বড় বাধা হতে পারে এটা মাথায় রাখা উচিত। বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে কেন ম্যাচই সহজ নয়, কাল সেটা একবার প্রমান হয়েছে ব্রাজিল-নেদারল্যান্ড ম্যাচে। তবে এক অর্থে এখন সব ম্যাচই ফাইনাল। তারপরও অনেকেই আর্জেন্টিনা-জার্মানির এ ম্যাচে ফাইনালের আগে আরেক ফাইনালের আমেজ খুঁজবেনই। কেপটাউনের গ্রিন পয়েন্ট স্টেডিয়ামে আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে জার্মানি।
জার্মানির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার মহারণে কে এগিয়ে? বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই দুই দলকে নিয়ে বাজি ধরার পক্ষে তেমন কাউকে পাওয়া না গেলেও বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই দারুণ খেলছে এই দুই দল। জার্মানির দলটি একেবারে নবীন। তবে, বিশ্ব মঞ্চে একেবারেই ঘাবড়ে যায় নি তারা বরং ঘাবড়ে দিচ্ছে সবাইকে। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে ৪-১ গোলের বিশাল জয় দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু। এর পরের ম্যাচেই পতন, হেরেই গেল জার্মানি। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার অনিশ্চয়তা কাটাতে প্রয়োজন ছিলো জয়। ঘানার বিপক্ষ ওই জয় এলোও ন্যূনতম ব্যবধানে। ঘানা ভালো খেললেও পেরে উঠেনি জার্মানির সাথে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে ৪-১ গোলের ব্যাবধানে একেবারে গুড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসা জার্মানিকে এখন দেখতে হচ্ছে অন্য আলোয়। অনেকের মতেই প্রতিভা, গতি, ছন্দ আর পরিকল্পনা মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সেরা খেলাটা জার্মানিই খেলেছে।
আর্জোন্টিনা তাই জার্মানিকে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছে, না দেখে উপায়ওযে নেই। জার্মানির খেলায় উত্থান-পতন থাকলেও আর্জেন্টিনার খেলায় অবশ্য অত উত্থান পতন নেই। ৪ জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসা আর্জেন্টিনা চায় গত বিশ্বকাপের প্রতিশোধ। ওই বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়া আর্জেন্টিনা এবার সরাসরি জয় চায়। ওই ম্যাচে টাইব্রেকারের কয়েক মিনিট আগে আর্জেন্টিনার নিয়মিত গোলকিপার আহত হয়ে মাঠ ছাড়ায় স্বাগতিক দলের জয় অনেকটাই নিশ্চত হয়ে যায়।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত আসরের ওই ম্যাচে সাইড লাইনে বসে থাকা মেসি এখন আর্জেন্টিনার প্রধান ভরসা। গতবারের মতো স্বাগতিক দলের সুবিধাও পাচ্ছে না জার্মানি, তারওপরে বিশ্বকাপে নেই জার্মানির মিডফিল্ড ভরসা বালাক। আর্জেন্টিনার মতো দলের বিপক্ষে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ একটা দলের খেলা যথেষ্ট কঠিন। তাই বলে এবারের বিশ্বকাপে ওজিল, পোডলস্কিরা যা দেখিয়েছে তাতে বালাকহীনতায় তেমন ভুগবে বলে মনে হয় না তরুন এই জার্মান দল।
দুই দলের শক্তির পার্থক্য যাই থাকুক এই ম্যাচ সহজ হবে না। তবে গত মার্চেই মিউনিখে জার্মানিকে হিগুয়েনের লক্ষ্যভেদে ১-০ গোলে হারানো আর্জেন্টিনা সেই জয় থেকে প্রেড়না নেবে। তবে, একটানা ১৫ আসর ধরে শেষ আট নিশ্চিত করা জার্মানিই বা পিছিয়ে থাকে কি করে।
তারায় ভরা আর্জেন্টিনার এই ম্যাচে ফিরিয়ে আনছে ডিফেন্ডার স্যামুয়েলকে। প্রথম থেকেই মাঠে নামতে পারেন জোনাস। নজর রাখতে হবে মেসি-তেভেজ-হিগুয়েনের দিকে। জার্মানির আছেন মুলার, পোডলস্কি, বাস্তিন। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন সবচেয়ে জমজমাট লড়াই হবে মার্টিন ডেমিকিলিস এবং মিরোস্লাভ ক্লোসার মধ্যে। দুই বায়ার্ন তারকার লড়াইয়ে যে এগিয়ে থাকবে সেই দলই শেষ হাসি হাসবে বলে অনেকের দৃঢ় বিশ্বাস।
আর্জেন্টিনার কোচ দিয়েগো ম্যারাডোনা জার্মানিকে হারিয়ে সেমিতে খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, এটা এমন একটা ম্যাচ যে ম্যাচে হারার কথা আমি ভাবতেই পারি না। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ আসরের ফাইনালের সাথে তুলনা না দিলেও তিনি বলেছেন, জার্মানি একটি কঠিন দল। মেক্সিকোর চেয়ে জার্মানি অনেক শক্তিশালী। কিন্তু আমার যেসব অস্ত্র আছে তা দিয়ে এদেরকে হারাতেই পারি।
অন্যদিকে মিরোসস্নাভ ক্লোসা বলেছেন, কাগজে কলমে আর্জেন্টিনা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল। ইংল্যান্ডও তাই ছিলো। আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞতায় তারা অনেকদূর এগিয়ে ছিলো। তবে, মাঠে সেসবের কিছুই কাজে আসেনি। আমরাও একটা ভালো দল, মাঠে কি করতে হবে সে ব্যাপারে আমাদের ভালো ধারণা আছে। ইংল্যান্ড ম্যাচের পূনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে আর্জেন্টিনাকে হারানো কঠিন হবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



