সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম
নেদারল্যান্ড ফুটবলের সেরা সময় কোনটা? ডাচ ফুটবলের ইতিহাসের খবর যারা রাখেন না তারা হয়ত স্নাইডার, রোবেন, পার্সি, কাইটের এবারের বিশ্বকাপে চমক লাগিয়ে ফাইনালে চলে আসা দলটার কথা বলবেন। কিন্তু বর্তমান ডাচ দলের একজন খেলোয়াড়ও যে ডাচ কিংবদন্তি জোহান ক্রুয়েফের ধারে কাছেও এখনো পৌছতে পারেননি। জনি রেপ, জোয়ান নেসকেন্স, এরি হান, মার্কো ভন বাস্তেনদের মতো প্রতিভাবানও বলা হয়না নতুন প্রজন্মের ডাচদের।
তেমনি এই দলটা এখনো সেই খ্যাতি পায়নি যেই খ্যাতি পেয়েছিল ক্রুয়েফের টোটাল ফুটবল খেলা কিংবদন্তির ডাচ শিবির। সারা বিশ্ব কাঁপানো সেই দল শুধু সুন্দর ফুটবলই খেলেনি, ফুটবল দুনিয়ার চেহারা পালটে দিয়েছে টোটাল ফুটবলের মুর্ছনায়। বিখ্যাত সেই ডাচ দল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছ পরপর দুই টুর্নামেন্টে, দুবারি হেরে গেছে তারা স্বাগতিকদের কাছে। ক্রুয়েফের সেই দলকে আজ অবধি শুধু সেরা ডাচ ফুটবল দলই নয় বরং গণ্য করা হয় বিশ্বকাপ না জেতা ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দল হিসাবে।
১৯৭৪ এর ডাচ দলটার কোচ ছিলেন আরেক কিংবদন্তি, রাইনাস মিশেলস। মিশেলসকেই মানা হয় টোটাল ফুটবলের আবিষ্কর্তা। শুরুতে ডাচ ক্লাব এজাক্স এবং তারপর নেদারল্যান্ডের জাতীয় দলের কোচ হয়ে সারা বিশ্বকে উপহার দিয়েছিলেন টোটাল ফুটবল। আর মিশেলস এর এই টোটাল ফুটবলের মাঠের কারিগর ছিলেন ডাচ ক্যাপ্টেন জোহান ক্রুয়েফ। রক্ষনাত্বক ফুটবলকে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়া টোটাল ফুটবলের আসল জাদুকর মানা হতো ক্রুয়েফকে। ৭৪ এর বিশ্বকাপেও ড্রিবলিংএর ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, ৩ গোল, বহু গোলের সুযোগ তৈরি করে আর দলগত টোটাল ফুটবলের ট্যাকটিকে নেতৃত্ব দিয়ে নেদারল্যান্ডকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। এবারের মতোই ফাইনালে যাওয়ার আগে তাদের সেরা নৈপুন্য ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। ফাইনালে তাঁরা পৌঁছেছিল তারকা খচিত ব্রাজিলকে ২-০ তে পরাজিত করে। সেই ম্যাচে ক্রুয়েফ আর নেসকেন্সএর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্রাজিলের ডিফেন্স চেরা নেসকেন্সএর গোল এখনো টোটাল ফুটবলের সুন্দরতম উদাহরণগুলোর একটি হিসাবে স্বীকৃত হয়ে আছে। অদম্য সেই ডাচ দলের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক জার্মানি। জার্মানির নেতৃত্বে তখন ছিলেন আরেক কিংবদন্তি, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মান দলে ছিল সময়ের শ্রেষ্ট স্ট্রাইকারদের একজন, জেরার্ড মূলার। শুরুতে ১ গোল করে এগিয়ে গেলেও সেই ম্যাচ ২-১ এ হেরে যায় নেদারল্যান্ড, মূলারের করা জার্মানির দ্বিতীয় গোলে রানার্সআপ হয়ে সেবার দেশে ফিরতে হয় ডাচদের।
১৯৭৮ সালেও দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে পৌঁছায় নেদারল্যান্ড। কিন্তু ভাগ্য তাদের সেবারো ফিরিয়েছে খালি হাতে। স্বাগতিক আর্জেন্টিনার কাছে হেরে তারা পরিণত হয় বিশ্বকাপ ইতিহাসে একমাত্র দল হিসাবে যারা পরপর দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে, কিন্তু একটিতেও জেতেনি। ৭৮এর পরাজয় অবশ্য সহজ ভাবে নেয়নি ডাচ সমর্থকরা। স্বাগতিক আর্জেন্টিনার সমালোচনায় মুখর ছিলেন অনেকেই। আর্জেন্টিনা তখন ছিল সামরিক জান্তার অধীনে। ফাইনালে স্বাগতিক ফুটবলারদের ফাউল করে খেলা, নোংরা ট্যাকটিকের আশ্রয় নেয়া আর মারমুখী সমর্থক গোষ্টিকে আজো দায়ী করেন অনেক ডাচ সমর্থক। তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ডাচদের নায়ক থেকে সেই বিশ্বকাপে খানিকটা ভিলেন হয়ে যাওয়া ক্রুয়েফকে। নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থেকেও সেবার বিশ্বকাপই যে খেলতে জাননি ক্রুয়েফ। ক্রুয়েফের এই সিদ্ধান্ত তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে ছোট্ট একটা কলঙ্কের দাগ হয়ে টিকে আছে আজো। ক্রুয়েফ অবশ্য পরে দাবি করেছিলেন, তার এবং তার পরিবারের জীবন বাঁচাতেই বিশ্বকাপ খেলেননি তিনি, অস্ত্রের মুখে তাকে এবং তার পরিবারকে নাকি কিডনাপ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ফাইনালটা সেবার নেদারল্যান্ড হেরেছিল ৩-১ গোলে। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেই দলের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকে বিশ্বকাপ না জেতা।
৩২ বছর পর আবারো যেন জেগে উঠেছে ডাচ ফুটবল। মাঝের সময়টায় ইউরোপের অন্যতম সেরা দল হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও বিশ্বকাপের ফাইনালে আর উঠতে পারেনি অরেঞ্জ শিবির। আবারো তাদের সামনে সুযোগ বিশ্বকাপ জয়ের, পুরনো ক্ষত মুছে দেয়ার। ক্রুয়েফ, নেসকেন্স, বাস্তেনরা যা পারেন নি স্নাইডার, রোবেন, কাইটরা কি তা পারবে। কিংবদন্তির সেই ডাচ দলের সমকক্ষ হতে হলে যে তাদের পারতেই হবে। আর যদি পারেই, তবে শুধু সমকক্ষ না, অন্তত ফলাফলের দৌড়ে পুরনো সেই কিংবদন্তিদের পেছনে ফেলতে পারবে এই নতুন ডাচ শিবির। কে জানে? হয়তো খ্যাতির দৌড়েও।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



