সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম
ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি কিংবা আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ডএর মধ্যকার ফুটবল ম্যাচগুলোর খেলার বাইরেও আলাদা আমেজ আছে। এ আমেজ ইতিহাসের। শুধু ফুটবল দ্বৈরথের ইতিহাসই নয়, এসব দেশের আছে মরণপণ লড়াইয়ের ইতিহাস, পারস্পরিক ঘৃণার ইতিহাস। আর তাই এসব দেশের সামনা সামনি ফুটবল আর খেলা থাকেনা, হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা ফকল্যান্ড যুদ্ধের রক্তপাতহীন ধারাবাহিকতা।
এসব ম্যাচে তাই লড়াইয়ের মাত্রাও থাকে ভিন্ন। আর সে লড়াইয়ে ফুটবল দ্বৈরথে জয় পরাজয়ের হিসাবে জমে নতুন ক্ষোভ, নতুন ইতিহাস, নতুন প্রতিশোধ আর প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা। তাই শুধু এসব দেশই নয়, বরং এদের মধ্যকার ম্যাচ উপভোগ করতে আগ্রহী সব দেশের ফুটবল সমর্থকরাই।
অনেক ফুটবল সমর্থকরা হয়তো ফাইনাল নিয়ে তাই খানিকটা হতাশ, দুই ফাইনালিস্টের মাঝে কোন ঐতিহাসিক যুদ্ধ বা ফুটবল দ্বৈরথের তিক্ত সম্পর্কের কোন খবর তো জানা যায় না। কিন্তু, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই দুই দল এই প্রথম এমন জীবন মরণ লড়াইয়ে নেমেছে বলেই উঠে এসেছে ইতিহাস। নেদারল্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীতকে বলা হয় আধুনিক যুগের সবচেয়ে পুরনো জাতীয় সংগীত। সেই ১৫৬৮ সাল থেকে এই গান তারা গেয়ে আসছে। স্পেনের বিপক্ষে আজকের ফাইনালে নেমেও তারা খেলা শুরু করবে এই জাতীয় সংগীত গেয়েই। কিন্তু এই জাতীয় সংগীতের কিছু লাইন শুনে চমকে উঠবেন যে কেউ। ডাচদের এই জাতীয় সংগীতের কিছু লাইন এমন, " স্পেনের রাজাকে আমরা সব সময় সম্মান করেছি, কিন্তু তিনি আমাদের কয়েকজন কাউন্ট'কে হত্যা করলেন, ক্যালভিনিস্টদের নিধন করলেন, আর আমাদের উপর চাপালেন অন্যায় করের বোঝা"। এই গানে আরো আছে, "হায়, আমাদের রাজার এই সুন্দর ভূমি, স্পেনিয়ার্ডদের হাতে কলুসিত হলো, ও আমার মধুর নেদারল্যান্ড, একথা চিন্তা করলে আমার হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ"। এমনি স্পেন বিদ্বেষী ডাচদের জাতীয় সংগীত। স্পেনের শাসন থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ ৮০ বছর যুদ্ধ করেছে ডাচরা। সে সময় ডাচদের উৎসাহ দিতেই রচিত হয় এই জাতীয় সংগীত। আজ রাতেও এই জাতীয় সংগীত গেয়ে যখন স্পেনের বিপক্ষে খেলতে নামবে ডাচরা, ৫০০ বছর আগের সেই যুদ্ধের আবেগ কি একটুও কাজ করবেনা? করার তো কথা।
তবে এই ঐতিহাসিক বিরোধিতার ইতিহাস ছাড়াও ফুটবলিয় ইতিহাসের ছড়াছড়ি থাকবে এই ম্যাচে। স্পেন-নেদারল্যান্ডস ফাইনাল হওয়ার পথেই তৈরি হয়েছে বহু ইতিহাস, আজ রাতে নিশ্চিত ভাবেই হতে যাচ্ছে আরো বেশ কিছু। ফাইনালিস্ট এই দুই দেশেরই আছে সুদীর্ঘ ফুটবল ঐতিহ্য। বহু বিশ্ব বিখ্যাত তারকা ফুটবলের জন্ম হয়েছে এই দুই দেশেই, ক্লাব পর্যায়ে সাফল্যের ইতিহাস আছে দুই দেশেরই একাধিক ক্লাবের। অথচ এই দুই দেশ একবারও বিশ্বকাপ জেতেনি। নেদারল্যান্ডস তবু দুইবার ফাইনালে খেলেছে, কিন্তু স্পেনের জন্য এবারি প্রথম। স্পেনের এই ফাইনাল খেলাও তাই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। আর আজ রাতে যে দেশই জিতুক, সেটাও হবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতার ইতিহাস। আজ পর্যন্ত কোন ইউরোপীয় দেশ ইউরোপের বাইরে বিশ্বকাপ জেতেনি, সেই ইতিহাসটাও নিশ্চিতভাবেই রচিত হতে যাচ্ছে আজ। আর আজ যদি স্পেন যেতে তাহলে রচিত হবে আরেকটা ইতিহাস, বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে হেরেও কোন দলের চাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা এর আগে যে ঘটেনি একবারও। তবে ইতিহাস রচনার এই উৎসবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য স্পেনকেই এগিয়ে রাখবেন। স্পেনিয়ার্ডরাও আজ মাঠে নামবে নিজেদের ফেভারিট গণ্য করেই। কিন্তু আজ যে কি ইতিহাস রচিত হবে, তা আগেভাগে বলার কোন অবকাশই নেই, ৫০০ বছর আগেও যে ডাচদের বিপক্ষে ফেভারিটই ছিল স্পেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



