somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুরালি, সবাইকে ছাড়িয়ে

২৩ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে'। ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে কিন্তু মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবস্থানটা সেই তালগাছটার মতোই আকাশছোঁয়া! ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির এই লঙ্কান কিংবদন্তি বোলিং কৃতিত্বে ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে।

ক্যান্ডির কাছের ছোট্ট একটি গ্রাম কুন্দাসালে থেকে সেন্ট অ্যান্থনি'জ কলেজে পড়তে এসেছিলেন চিন্নাস্বামী মুত্তিয়ার বড় ছেলে মুত্তিয়া। খ্রিস্টান মিশনারিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ক্রিকেটের চলটা ছিল সেখানে। সেখানেই ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয়। শুরুতে মিডিয়াম পেস বল করতেন। কিন্তু স্কুল দলের কোচ সুনীল ফার্নান্দো তাঁকে বদলে দিলেন অফ-স্পিনে। স্কুল ক্রিকেটে বর্ষসেরা হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সফরে আসা অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে দলে ঠাঁই হলো। সেখানেই কবজির ভেলকিতে বাজিমাত আর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই রানাসিংহে প্রেমাদাসায় অভিষেক। সেই থেকে ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদদের ব্যস্ত রেখেছেন 'দ্য উইজার্ড'। রেকর্ড বুকের পরতে পরতে কতভাবেই না ছড়িয়ে আছে মুরালিধরনের নাম! 'বোল্ড মুরালিধরন'_এই শব্দ দুটি স্কোরবোর্ডে লেখা হয়েছে ১৬৭ বার। সিকি শতাব্দীর বেশি পুরনো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই 'শব্দজোড়ের' চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে কেবল 'রান আউট'। বোল্ড ছাড়াও সবচেয়ে বেশি বার স্টাম্পড (৪৭) এবং কট অ্যান্ড বোল্ড (৩৫) ডিসমিসালের রেকর্ডও মুরালিধরনের।

জুটি নাকি দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে হয় কিংবা বোলার-উইকেট কিপার। যেমন, গর্ডন গ্রিনিজ-ডেসমন্ড হেইন্স অথবা শেন ওয়ার্ন-ইয়ান হিলি। কিন্তু মুরালিধরনের জুটিটা সবচেয়ে দারুণ জমেছে 'ফিল্ডার' মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে। মুরালির বলে মাহেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যাটসম্যানের বিদায়_এমন ঘটনা ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে ৭৫ বার। উইকেটরক্ষক বাদে কোনো ফিল্ডারের সঙ্গে একজন বোলারের এমন সফল জুটির 'নজির' আর নেই। জীবনের শেষ এবং ৮০০তম টেস্ট উইকেটেও মুরালির সঙ্গে ছিল মাহেলারই যুগলবন্দি।

'অ্যান্ড আওয়ার ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইজ মুত্তিয়া মুরালিধরন'_ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে এই বাক্যটাই উচ্চারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি ১৮ বার। এখানে অবশ্য একজন সঙ্গী আছেন তাঁর_জ্যাক ক্যালিস। প্রোটিয়া অলরাউন্ডার এখনো টেস্টকে বিদায় জানাননি, আরো ম্যাচসেরার পুরস্কারও হয়তো উঠবে তাঁর হাতে। কিন্তু বিদায়বেলায় শীর্ষেই ছিলেন লঙ্কান স্পিন জাদুকর।

বরাবরই পরিসংখ্যানবিদদের ব্যস্ত রাখা মুরালিধরন ৩৫০, ৪০০, ৪৫০, ৫০০, ৫৫০, ৬০০, ৬৫০ ও ৭০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সবচেয়ে দ্রুত। আর প্রজ্ঞান ওঝার উইকেট নিয়ে পৃথিবীর বুকে ৮০০ টেস্ট উইকেট শিকারি একমাত্র বোলার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন মুরালি। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানোর কৃতিত্বটাও এই ডানহাতি অফ-স্পিনারের।

এখানেই থেমে যাচ্ছে না 'মুরালি-কাব্য'। টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ১০ উইকেট (২২ বার) নেওয়া মুরালিধরন সব কটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই ম্যাচে ১০ উইকেট করে পেয়েছেন। ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বেও তিনি সবার শীর্ষে_৬৭ বার স্কোরকার্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা আছে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট। টানা ৪ টেস্ট ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলারও তিনি; এবং এ কাজ তিনি করে দেখিয়েছেন দুইবার! টেস্ট আঙিনার ৯ প্রতিপক্ষের মধ্যে ৫ দেশের বিপক্ষেই অন্তত একবার ইনিংসে ৭ কিংবা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন মুরালিধরন। এ ছাড়া সব দেশের বিপক্ষেই অন্তত ৫০ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলারও তিনিই। টেস্টে ৮০০ উইকেট শিকারি এই একমাত্র বোলারের নামের পাশেই লেখা দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি (৪৯৩) উইকেট শিকার কিংবা একই মাঠে সবচেয়ে বেশি (১৬৬) উইকেট শিকারের মতো বিচিত্র কিছু রেকর্ডও। তাই বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে যতই 'চাকার–', 'জ্যাভেলিন থ্রোয়ার' বলুক না কেন, পরিসংখ্যান কিন্তু মুরালির শ্রেষ্ঠত্বকেই স্বীকার করবে।

লেখক: সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ
সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×