somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়া সাহার দুটি হাত আর বেগম জিয়ার পৌষের পত্রখানি

২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্য প্রায় হপ্তাকাল হইতে চলিল হস্ত দু'খানি চূড়ান্ত নিশপিশ স্বত্বেও প্রাণমনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম না বুঝিয়া কিছুই লিখিব না। অবশেষে আজিকার পড়ন্ত বৈকালে ট্রাম্পের সহিত প্রিয়া সাহার ক্ষণকালের ক্লিপ ভিডিও না দেখিয়া পরিপূর্ণ ২৫ মিনিটের সাক্ষাৎকার পর্বটিই দর্শন করিয়া ফেলিলাম যে’স্থলে ষোল দেশের সাতাশজন প্রতিনিধি উপস্থিত হইয়াছিলেন।

আমার লেখনির এক্ষণে অনুধাবন করিতে সক্ষম হইলাম যে সাধু ভাষার দৌড় আমার বিশেষ আর নাই। নিম্নে উক্ত পরিশেষ্ট বক্তব্য তাই চলিত রীতিতে লিখিতে বলিতে গেলে বাধ্যই হইলাম।

ট্রাম্পের সাথে এই আলোচনানুষ্ঠানের মধ্য থেকে শুধুমাত্র প্রিয়া সাহার ভিডিওটুকু দেখলে যেকোন বাংলাদেশির, শতভাগ অসাম্প্রদায়িক হলেও- মন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে, দেশের অপমানের এই অকারণ উপস্থাপনা দেখে রাগে দুঃখে বুক ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু কেউ যদি সম্পূর্ণ ভিডিও দেখে তাহলে তাঁর শুধু দুঃখই লাগবে না, প্রিয়ার প্রতি প্রেম-দৃষ্টি তো নয়ই, বরং অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেও তাদের বিন্ধুমাত্র দোষ দেওয়া যাবে না। এর প্রধানতম ও সম্ভবত একমাত্র কারণ এই যে, ওখানে ট্রাম্পের অতিথিদের মাঝে বাকি সবার সাথে প্রিয়ার কোন তুলনাই চলে না।



ইরাকের যে আইনজীবী মেয়েটি ইসলামিক সন্ত্রাসীদের কাছে বন্দি থেকে নির্যাতিত হয়েছে, সুদানের যে মুসলিম মহিলাটি অন্ত্বঃসত্বা অবস্থায় মৃত্যুদন্দপ্রাপ্ত হয়েছিল, চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিম যে মেয়েটি নির্ভুল ইংরেজিতে বলল ২০১৩ সালের পর সে তাঁর বাবাকে দেখে না, চীনের সরকার সুমলিমদের উপর অত্যাচারের অংশ হিসেবে তাঁর বাবাকেও নির্যাতন শিবিরে আটকে রেখেছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের পৃথিবী কাঁপিয়ে দেয়া সাম্প্রতিক হামলায় বেঁচে যাওয়া মুসলিম বৃদ্ধ লোকটি, মিয়ানমারের সেনা ও বৌদ্ধ জঙ্গিদের হাতে নিপীড়িত রোহিঙ্গা- এরা সবাই ট্রাম্পের কাছে নিজেদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের কথা দুই এক লাইনে বলেছেন, এদের মধ্যে কারও সাথে কি আমাদের প্রিয়া সাহার অবস্থার তুলনা চলে? এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুযোগ-সুবিধাভোগী শ্রেণীর একজন প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে হিন্দু নির্যাতন চলে- যা আমরা অনেকে অস্বীকার করে পুলকানন্দবোধ করি- তাদের প্রতিনিধি প্রিয়া সাহার মত বিত্তশালী নারী নন।



তবু ধরে নিলাম সকলের কপালে শিকে ছিঁড়ে না, কিন্তু তাঁর ছিঁড়েছে। ট্রাম্পের মত উৎকট এক বর্ণবাদীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ ঘটেছে। কিন্তু ওখানে গিয়ে তিনি যে পরিমাণ হাত আক্ষরিক অর্থে কচলিয়েছেন, অনেকের কথার ভিড়ে বার বার নিজে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছেন, তাতে কারোরই বোঝার বাকি থাকে না যে প্রিয়ার এই বক্তব্য আগে থেকেই প্রস্তুতকৃত নয়। ওখানে সবাই এলোমেলোভাবে (random) কথা বলছিলেন, সিরিয়াল মেনে নয়। এমনকি ২৭ জনের অনেকেই কোন কথা বলেনি। ট্রাম্পেরও কথা বলার সময় ছিল না, কারণ তিনি শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন বেশি সময় নাই, নর্থ ক্যারোলাইনার উদ্দেশ্যে তাঁকে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হবে। কথাবার্তা চলাকালীন ট্রাম্পের বার বার এদিক ওদিক তাকানো, ঘড়ি দেখা তাঁর জরুরতের বিষয়টির পাশাপাশি নির্যাতিত মানুষদের কথা শুনতে তাঁর অনীহাও প্রকাশ পেয়েছে। 

কয়েকবারের চেষ্টায় প্রিয়াসাহা কথা বলতে সক্ষম হলেন এবং যে নতজানু ভঙ্গিতে তিনি সাহায্য চাইলেন তাতে বাংলাদেশের মাথা হেঁট হয়েছে। এরকম অনুনয়-বিনয় দেখে বাঙ্গালির হাজার বছরের দাসত্ব আর মোসাহেবি মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে।

তবে প্রিয়াসাহার কথায় হিন্দু নির্যাতনের সত্যতা থাকলেও, ভেবেছিলাম তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন। তিনি পরবর্তীতে পঁয়ত্রিশ মিটিং তিন সেকেন্ডের যে ভিডিও তিনি প্রকাশ করেছেন, তারমাঝে কোন অনুশোচনাবোধ দেখলাম না। বরং প্রধানমন্ত্রীর নাম নিতে নিতে নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এলো তাঁর। যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা পান বললেন, সেই প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের আমেরিকা গিয়েই রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “রোহিঙ্গা বিষয়ে আমরা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে কোন সাহায্য চাইনা আশাও করি না, কারণ আমরা ইতিমধ্যেই শরণার্থী বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভাব জানি“। প্রিয়া সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শেখেন, এই শিক্ষাটা ফসকে গেল কীভাবে?

এখন আসি আসল কথায়। প্রিয়ার এই কথায় যারা তাঁর বিচার দাবি করছেন, ফাঁসি চাইছেন, দেশদ্রোহী বলছেন, তারা কেন একটিবারও ভেবে দেখেন না যে, তাঁর একটা অভিযোগও যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলেও আমাদের মাথায় দুশ্চিন্তায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া উচিত। সেটি হয় না কেন? সংখ্যায় যারা অল্প, তাদের অভিযোগ অনুযোগ যথেষ্ট সংবেদনশীলতা আর সমতার দৃষ্টি নিয়ে কেন আমরা সবাই একযোগে দেখতে ব্যর্থ হচ্ছি। কেন আমরা শতভাগ মুসলমান একটা হিন্দু নির্যাতন হলেও সেটার প্রতিবাদ থেকে দূরে থাকি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের অহমিকায় তাদের বেদনার কথা অনুভব করতে সক্ষম হলাম না? যারা নিজেদের নীতিবান মানুষ বলে দাবি করেন, সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন বলে মনে করেন, তারাই যেন আজ বেশি প্রিয়ার বিরুদ্ধে রুষ্ট। ততটা রুষ্ট কেন কোথাও মন্দির ভাঙলে হতে দেখি না।



যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন এক বন্ধু শিশিতে রক্ত নিয়ে স্কুলে আসল। আমি বললাম রক্ত কেন। সে বলল প্রেমপত্র লিখবে। আমাদের প্রশ্নের তাড়নায় বন্ধু স্বীকার করতে বাধ্য হল এটি মুরগীর রক্ত। সেকালে আবার রক্ত ছাড়া চিঠি লিখলে মানসম্মান থাকত না। বন্ধুর কথা, প্রেম হয়ে যাওয়ার পর বহু রক্ত দেওয়া যাবে, তার আগে এক ফোঁটাও নয়। কিন্তু ২০১৩ সালের পৌষ মাসের শীতের এক সন্ধ্যায় আমাদের বেগম জিয়া এমন এক চিঠি লিখলেন, তাতে বিদীর্ণ হয়ে রক্তাক্ত হল বাংলাদেশের হৃদয়। আমেরিকার অখ্যাত এক পত্রিকা ওয়াশিংটন টাইমসে (ওয়াশিংটন পোষ্ট নয়) লেখা সেই চিঠিতে তিনি হাসিনার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে ব্যবস্থা নিতে বললেন। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যাতে কমে যায় তাই জিএসপি সুবিধা তুলে নিতে আমেরিকাকে অনুরোধ করলেন তিনি।

আমার প্রশ্ন, আজকে যারা প্রিয়াকে দেশদ্রোহী বলছেন, সেদিন কজন খালেদা জিয়ার বিচার চেয়েছিলেন?


ধন্যবাদান্তে,
জাহিদ কবির হিমন
বন্ধু শহর বার্লিন থেকে
২৫ জুলাই ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৩:২১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×