somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হিমন
পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

বঙ্গবন্ধু ও জামাতিরা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাল আমলের বাংলা সাহিত্যের খোঁজ পাত্তা যারা রাখেন তারা মাত্রই জানেন এই ভাষার সাহিত্যাকাশে মাসরুর আরেফিন নামের এক নক্ষত্রের আগমন ঘটেছে। তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস "আগস্ট আবছায়া" এই মুহুর্তে বাংলা সাহিত্য আড্ডায় প্রধান বিষয়। অন্তত দশ হাজার কারণে এই বইটি একটি অনন্য বই। তাঁর একটি কারণ হল পুরো বই জুড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে নায়কের চরম আচ্ছন্নতা। দেশ কাল স্থান ভেদে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে শুধু তাই নয়, তিনি মানুষ নামক বিশেষ প্রাণীর পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য, নিষ্ঠুর হতে হতে মানুষের মহিষ হয়ে উঠা আর নিষ্ঠুরতাই মানুষের ভবিতব্য ছিল আছে এবং থাকবে- ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুররতম হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটে।

একটা মানুষকে হত্যা করার পরই তো সব শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে সেটি হতে পারেনি। তাঁকে খুনের পর তাঁকে নিয়ে জঘণ্য মিথ্যাচার করতে হয়েছে খুনীচক্রের, পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের কাছে যাতে বঙ্গবন্ধুকে ভিলেন হিসেবে দাঁড় করানো যায়। ইতিহাস-অজ্ঞ বাঙ্গালির বেলায় খুনিরা অনেকটাই সফল। তাই আজ দেখা যায়, যারা জানেনা, যারা বোঝেনা একটা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, সেই স্বর্নালী ইতিহাসকে যারা তাচ্ছিল্য করে, পাকিস্তানের বীজ এখনো যাদের হৃদয়ে বিধৃত, তারা মাত্রই বঙ্গবন্ধুকে এখনো চিনে উঠতে সক্ষম হয় না।



উক্ত উপন্যাসের একটি ছোট চরিত্র ইব্রাহিম। এই ইব্রাহিম আসলে আর কেউ না, আমাদের আশেপাশে এমন ইব্রাহিম নিযুত লক্ষ যাদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্থূল আপত্তির শেষ নেই। উপন্যাসের নায়ক সেই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি তর্কের মাধ্যমে দেননি, আবার এমনভাবে দিয়েছেন যে পাঠকমাত্রেরই তাতে ভাবের উদয় হবে। চিন্তার উদ্রেক করবে।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিয়ে মিথ্যাচার যে সীমা অতিক্রম করেছে তার একটি প্রমাণ হল শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি। একটা দেশের রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে, যার সারাক্ষণ ব্যস্ততা ফুটবল খেলা, গানবাজনা করা, মঞ্চ নাটক করা, নাটক লেখা, সাংস্কৃতিক সংগঠন করা, সে নিজে অস্ত্র নিয়ে টাকার জন্য ব্যাংক ডাকাতি করতে গেছেন। রাষ্ট্রনেতার ছেলের টাকার জন্য যে সশরীরে ব্যাংক ডাকাতির প্রয়োজন হয় না তার প্রমাণ তো তারেক। কিন্তু বাঙ্গালিকে এই নির্জলা মিথ্যা গেলানো গেছে। কেন গেছে সেটি বোঝা যায় এমনকি এই বর্তমানেও। ২০১৩ সালের ভাদ্র মাসের গরমের মাঝে কোন এক রোমান্টিক পুর্ণিমা রজনীতে চৌদ্দশিকের ভেতর থেকে এক যুদ্ধাপরাধী মওলানা হঠাৎ উদয় হলেন চাঁদের মধ্যিখানে। বাঙ্গালি সেটি বিশ্বাস করলো, একদিনে সারা দেশে প্রাণ ঝরল ১১৩টি। পদ্মাসেতুর জন্য মাথা লাগবে- এই মুর্খতার আরেক সাম্প্রতিক উদাহরণ।

পৃথিবীর দেশে দেশেই এই জামাতি চিন্তাধারার মানুষরা একই রকম নিচু বুদ্ধি আর রুচিহীন চিন্তা চেতনার হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে দেখেছিলাম, ট্রাম্পের সমর্থকদের পচাত্তর শতাংশ কলেজের গণ্ডিও পার হয়নি, আর্থিক, সামাজিক বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে তারা সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষ। তবে বাংলার জামাতিদের মধ্যে শিক্ষিত অশিক্ষিত বলে কিছু নাই। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে পাশা করা, জার্মানিতে উচ্চতর ডিগ্রীধারী একজনকে বলতে শুনেছি তিনি বাঙ্গালি ও বাংলাদেশির মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডিধারী এক জামাতি বলল আজ হতে স্টীফেন হকিংয়ের কোন বই পড়বেন না, কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।

এরা তো সামান্য সমর্থক। কিন্তু তাদের নেত্রী আরো এক ডিগ্রি এগিয়ে। হঠাৎ করে কে অনুরোধ করলো, দিগ্বিবিক না ভেবে তিনি শুরু করলেন আড়াইমণ ওজনের বাহারি কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন। ইতর শ্রেণীর গ্রাম্য কোন মহিলাকে দিয়েও এই রুচিহীন কাজ করানো কখনোই সম্ভব নয়, কিন্তু উনাকে দিয়ে করানো গেছে। তাই যারা কথায় কথায় দুই নেত্রীর মিলনের কথা বলেন, তারা যেন অন্তত দুটি কথা মনে রাখেন। এক, এই অভব্য জন্মদিন পালন এবং জিয়ার সেই ইনডেমনেটি আইন যে আইনে বলা হল পচাত্তুরের আগের হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হওয়া যাবে না। জি ভাই, জিয়া সত্যিই এই আইন করেছিলেন। একুশে আগস্টের কথা না হয় বাদই দিলাম।


কী বলেন আমেরিকা, কী ইন্ডিয়া তুরস্ক বা ইউরোপ, এই জামাতি চিন্তাধারা তথা উগ্রবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকের পৃথিবীর মানুষেরা যদি এই অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদ থেকে পৃথিবীকে পরিত্রাণ দিতে চায়, তবে আমাদের বার বার ফিরে যেতে হবে সেই বঙ্গবন্ধুর কাছে, গান্ধী, ম্যান্ডেলা বা মার্টিন লুথার কিংদের ধর্মনিরপেক্ষ, সমতা আর মানবিক মর্যাদার আদর্শের চৌহদ্দিতে।



জাহিদ কবীর হিমন
১৫ আগস্ট ২০১৯
বার্লিন থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:৩০
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×