somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেত্রাঘাতের বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগেই নির্ধারিত ছিল যে হাদিস অনুসারে সুরাইরা তারকার উদয়ের পরেই করোনা নির্মুল হোক না বা হোক, মন্ত্রীকে বেত্রাঘাত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেত্রাঘাত শেষে পিএ এসে মন্ত্রীকে নিয়ে যাবে। যে ঘরে তাঁকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে সে ঘরে ছোট ছোট কর্তারা বসে আছে, কিন্তু পশ্চাৎদ্দেশের ব্যাথায় মন্ত্রীর বসার অবস্থা নাই। এর মধ্যেই ঘরে ঢুকল পিএ।



পিএঃ স্যার গাড়ি রেডি, চলেন।

মন্ত্রীঃ বাইরে শুয়োরের বাচ্চা কয়টা?


পিএঃ বিশজনের মত স্যার। বারো জন ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে, আর আটজনের মতো প্রিন্ট মিডিয়া থেকে। কিন্তু চিন্তার কিছু নাই। শুয়োরের বাচ্চাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আপনাকে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। 

মন্ত্রীঃ কি ব্যবস্থা?

পিএঃ গতবার ম্যাডাম তাঁর ফাইভ পাশের বিয়াল্লিশ বছরে পূর্তিতে ভারত গেলেন মার্কেটিং করতে, সেখানে তামিলানড়ু থেকে বাহাত্তুরটা কাঞ্জিভরম শাড়ি এনেছিলেন। সেখান থেকে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা এনেছি আপনার জন্য। সময় নষ্ট না করে পরে নিন স্যার। কেউ টের পারে না।


মন্ত্রীঃ বলিস কি? তাই বলে শাড়ি! বোরকা পেলি না?

পিএঃ করোনার জন্য মার্কেট বন্ধ স্যার। ম্যাডাম তো পর্দা করে না। তাঁর কাছে বোরকা নাই। 


মন্ত্রীঃ বিরাট ভুল হয়েছে। বাসায় গিয়েই তোর ম্যাডামের জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক করা হবে। ভবিষ্যতে বোরকা আবার কাজে লাগতে পারে। দে, শাড়িটাই দে।

পিএঃ স্যার কালার ম্যাচ করে মেকআপও এনেছি, এই ধরেন। 


মন্ত্রীঃ ফাইজলামি করস আমার সাথে? আমি দিব মেকআপ? জীবন দেব কিন্তু মেকআপ না। আমার এক বাপ, এক জবান।

মন্ত্রী গেলেন পাশের রুমে শাড়ি পড়তে। একটু পর পিএ কে ডাকলেন কুচি ঠিক করতে। বহু কষ্টে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে শাড়ি পরা হল। সাথে লম্বা ঘোমটা। আয়নায় মন্ত্রী এদিক সেদিক দেখে সন্তুষ্ট হতে পারছেন। বাইরে গেলে সাংবাদিকরা চিনে ফেলবে। কিছুতেই তা হতে দেওয়া যাবে না।

মন্ত্রীঃ মেকআপ বক্সটা নিয়ে আয় তো দেখি। জীবনে তো আর সুযোগ পাবো না। একবার যখন সুযোগ হয়েছে, কাজে লাগাই। কি বলিস।
পিএঃ অবশ্যই স্যার। আমার তো ধারনা মেকআপে আপনাকে আরো বেশি সুন্দর লাগবে।

কাঞ্জিভরম তামিল শাড়ি আর কড়া মেকআপ দিয়ে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে মন্ত্রী গাড়িতে উঠলেন।


মন্ত্রীঃ বাঁচা গেল বাবা, কোন শুয়োরের বাচ্চা বুঝোতে পারেনি। পারবে কেমনে এমন সাজ দিছি। যাই হোক, গতকাল সন্ধ্যায় “থাকিতে পারি না আমি যৌবন জ্বালায়” নামের আইডি থেকে যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আইছে সেটা কি একসেপ্ট করেছিস।

পিএঃ স্যার এসব তো ফেক আইডি। এর আগেও বিরাশি বার এই ধরণের আইডি থেকে রিকু আসার পর তদন্ত করে দেখা গেছে সব ছেলেদের আইডি। 


মন্ত্রীঃ কবি বলেছেন এক বার না পারিলে দেখ শতবার। পড়াশোনা তো কিছু করিস নাই। শতবার হতে এখনো আঠারো বার নাকি। চিন্তা করে দেখ একটা তরুণী যৌবন জ্বালায় টিকতে না পেরে আমাকে রিকু দিছে, আমি কি পাথর নাকি রে!!

পিএঃ ঠিক আছে আছে স্যার। বেত্রাঘাতের পর আপনার ইমেজ পুনরুদ্ধারে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালানোর জন্য যে দশজনের টিম ঠিক করেছি, তাদের এখনি বলে দিচ্ছি স্যার।


মন্ত্রীঃ দে দে বলে দে, সব ঠিক থাকলে শবে বরাতের আগেই এর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা কর। পবিত্র শবে বরাত ক্ষমার রজনী। যা করার তার আগেই করতে হবে।

পিএঃ আপনার ক্ষমা না চাইলেও অসুবিধা নাই স্যার। প্রতিদিন আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। আপনার তো কোন পাপই দেখি না স্যার। 



মন্ত্রীর চোখ গোপন খুশিতে চিকচিক করে উঠলো। বার কয়েক ঠোঁট কেঁপে উঠলো হালকা হাসিতে। পিয়ের মুখে প্রশংসা শুনে বুক থেকে কিছুটা পাথর যেন নেমে গেল। এর মধ্যেই বেজে উঠলো পিয়ের ফোন। কার সাথে যেন কথা বলে তার মুখ ভারী।

পিএঃ স্যার একটা একটা খারাপ খবর আছে। ম্যাডামের করোনা পজিটিভ। আপনি বাসায় যেতে পারবেন না।

মন্ত্রীঃ বলিস কি? এটা খারাপ খবর হবে কোন দুঃখে। এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এই ছুতায় আমিও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে চলে যাব। সিলেটের বাগান বাড়িটা রেডি করতে বল, বাইজীকে আসতে বল। ভাবতেই ভাল লাগছে, ১৪ দিন আর শুয়োরেরবাচ্চা সাংবাদিকের সামনে আসতে হবে না। গাড়ি ঘোরা।



এর মধ্যে আবার ফোন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। মন্ত্রীর বুকটা চিন চিন করে উঠলো। পিএ কথা বলে মুখটা ভার করে রইল।

মন্ত্রীঃ ঘটনা কি?
পিএঃ ঘটনা সাংঘাতিক খারাপ স্যার। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন একশ একটা বেত্রাঘাত করতে। বেতের বাড়ি নাকি একটা কম পড়েছে। এখনি যেতে বলেছে আবার। এবার কাঁচা কঞ্চি দিয়ে পুনরায় একশ একটা বেত্রাঘাত পুর্ণ করা হবে। নইলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। অপশন দুইটা।

মন্ত্রী ঘামতে লাগলেন। বুকটা চেপে ধরলেন। কী থেকে কী হয়ে গেল?


মন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রীর দিল কত বড় চিন্তা করে দেখ আমাকে অপশন দিছে। যদি একটা অপশন দিত তাহলে সমাজে মুখ দেখাইতে পারতাম?
এই দেশে পদত্যাগ আর প্রাণত্যাগ সমান কথা। জীবন যাবে কিন্তু পদ ছাড়া খুবই লজ্জার। কি বলিস?

পিএঃ পাগল নাকি স্যার মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন। এক হাজার একটা বেত্রাঘাত খাইলেও আমি ছাড়তাম না স্যার।



মন্ত্রীঃ উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, যুদ্ধের থেকেও রাজনীতি কঠিন। যুদ্ধে মৃত্যু হয় একবার, রাজনীতিতে মরতে হয় বারবার। আজ আমার প্রথম মৃত্যু হল। 

পিএঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।

মন্ত্রীঃ ফাইজলামি করস আমার সাথে?

পিএঃ সরি স্যার!



গাড়ি ঘুরে গেল উল্টো দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৩:১৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×