somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিমটিম একটি বিড়ালের নাম

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম যখন আমি টিমটিমকে প্রায় মৃতবৎ অবস্থা থেকে বাসায় নিয়ে আসি।মাকে সম্ভবতো হারিয়ে ফেলছিলো।তারপর ক্ষুধা,পিপাসা আর ভয় বেচারাকে দুর্বল করে ফেলেছিলো।মানুষের ভয়!
কি ভাবছেন টিমটিম কে?
টিমটিম আমার পোষা বিড়াল।ওকে আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে রাস্তার পাশের ক্ষেতে।অসহায় অবস্থাই ভয়ে কিংবা ঠান্ডাই কাঁপছিলো।বাসায় এনে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর সে যেনো নবজীবন ফিরে ফেলো।আর তারজন্যে তার কৃতজ্ঞতার অন্ত ছিলোনা।তবে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণগুলো মাঝে মাঝে আমাকে বিব্রত অবস্থাই ফেলতো।
আমি সোফাই বসে পড়তাম ছোট থেকেই।টিমটিম মাঝে মাঝেই আমার পাশে এসে বসতো।আমি পড়ার ফাকে ফাকে তার মাথাই আর শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করে দিতাম।সে খুশীতে গড়গড় করতো।তবে তার খুশীর রিঅ্যাকশনটা আমি বুঝতে পারতাম যখন আমি দেখতাম সে মূত্রবিসর্জন করে সোফা ভিজিয়ে ফেলছে।মাঝে মাঝে সে দুই নাম্বার কাজটাও সোফাতেই সেরে ফেলতো।আর আম্মুর বকা খাওয়ার ভয়ে সেসব আমাকেই ধুয়ে দিতে হতো।
কাজটা আমার জন্যে কতোটা কঠিন বুঝতে পারবেন যখন জানবেন যে আমি তখন নিজের কাপড়টা পর্যন্ত নিজে ধোতাম না।আম্মু ধুয়ে দিতো।আর সেখানে এই বিড়ালের সব কাজ নিজে করতাম আমি।তাকে খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে তার ময়লা করা আসবাব ধুয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব।

তার আরেকটা স্বভাব ছিলো।সেটা হচ্ছে আমি যখন ঘুমাতাম তখন মশারি ঠাঙ্গিয়ে ঘুমাতাম।টিমটিমকে মশারির বাইরে রাখতাম কারণ রাতে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন শব্দেই ভয় পেয়ে আমাকে খাঁমছে দিতো।
টিমটিম মশারির বাইরে থাকলেও সে আমার কাছ থেকে দূরে থাকতোনা।আমি খাটের যে সাইডে ঘুমাতাম সে সেই সাইডে আমার পাশে করে ঘুমাতো।আর সকালে যেই আম্মু মশারি খুলে ফেলতো সে এসে আমার বুকের উপর উঠে বসে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকতো যতোক্ষন আমি চোখ না খুলি।চোখ খুললেই সে ম্যাও ম্যাও করে জানান দিতো যে তার খিদা লাগছে।
মাঝে মাঝে অবশ্য সে নিজেই নাশতার ব্যবস্থা করে ফেলতো এবং সেই নাশতার অর্ধেক ভাগ আমার জন্যেও রেখে দিতো। যদিও সেটা বিব্রতকর উপায়ে।অনেক দিন গেছে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই দেখেছি ডন মুখে অর্ধেক খাওয়া ইঁদুর অথবা তেলাপোকা নিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।



সে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারতোনা।আমি যখন স্কুলে যেতাম ওকে রেখে তখন নাকি সে শুধু এ ঘর থেকে ও ঘর ছুটাছুটি করতো আর ম্যাও ম্যাও করতো।ওকে একদিন রাতের বেলা ঘুমানোর সময় খাঁচাই বেধে রাখছিলাম যাতে আমরা ঘুমালে বিছানাই উঠে বিছানা নষ্ট করতে না পারে।সেদিন ঘুমাবো দূরঅস্ত!ওর চিৎকারে সবার কান ঝালাফালা।যতোক্ষন পর্যন্ত ওকে ছেড়ে দেওয়া হলো ততোক্ষন চিৎকার কন্টিনিউ ছিলো।ছেড়ে দেওয়ার পর আমার পাশে শুয়ে তারপর শান্ত হলো।

প্রতিদিনের মতোই ওকে বাসায় রেখে স্কুলে গিয়েছিলাম একদিন আমি।কিন্তু স্কুল থেকে ফিরে এসে প্রতিদিনের মতো টিনটিনকে আহলাদ করে ছুটে আসতে না দেখে বুঝে ফেলেছিলাম কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।কারণ টিমটিম কিভাবে যেনো বুঝতে পারতো আমার স্কুল থেকে ফিরে আসার টাইমটা।ছুটে এসে আমার পাশে বসে পড়তো।
কিন্তু সেদিন টিমটিমকে দেখেছিলাম আমি নিরব,নিথর মৃত অবস্থাই।আম্মু বলেছিলো কেউ তাকে খাবারের সাথে বিষ খাওয়াই দিছে।হয়তো ও ভেবেছিলো সব মানুষ একরকম।সব মানুষই ওকে ভালোবাসে।মানুষরূপী অমানুষগুলোকে ওর মতো একটা অবোধ প্রাণী বুঝবে কি করে!!সেই বিশ্বাস করার খেসারত তাকে দিতে হলো।সে হয়তো অভিযোগ জানানোর জন্যেই ছুটে এসেছিলো বাসাই।বাসার বারান্দাতেই তড়পানো অবস্থাই সে মারা যায়।
অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন।মাথায় আসছিলোনা নিরীহ আদুরেপ্রিয় এই প্রাণীটির সাথে কার কি এমন শত্রুতা থাকতে পারে!!কি এমন ক্ষতি সে করেছিলো।জানিনা আমি।
ওর পরে আরো একটা বিড়াল আর একটা কুকুর আমি পালন করেছিলাম।কিন্তু টিমটিমের মতো আমার মনে জায়গা নিতে পারেনি কোনোটাই।
টিমটিম যেখানেই আছে হয়তো ভালোই আছে।মানুষের ক্রুরতা,নিষ্ঠুরতা থেকে অনেক অনেক দূরে।ভালোবাসার মধ্যেই হয়তো অমর হয়ে আছে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×