somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবন

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দরবনের আস্তানা ঘিরে সশস্ত্র বনদস্যুবাহিনী সুন্দরবন ও তত্সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ওই এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে মুক্তিপণ আদায়সহ জেলেদের জাল, মাছ, ডিজেল, ট্রলারের যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিচ্ছে। মুক্তিপণের দাবিতে জেলে অপহরণ এমনকি হত্যার ঘটনা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কাছে বাওয়ালি, মৌয়ালি ও বনবিভাগ পর্যন্ত জিম্মি হয়ে পড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বনদস্যুরা জেলেদের ওপর সাত দফা হামলা চালিয়ে শতাধিক জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ ও কোটি টাকারও বেশি মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। দস্যুদের হামলায় এ সময় আহত হয়েছে ২৫ জন ও নিহত হয়েছে একজন। গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু বাহিনী প্রধানসহ ১৯ জন সদস্য নিহত হলেও থেমে নেই তাদের দস্যুবৃত্তি। কোনো বনদস্যু নিহত হলে বেঁচে থাকাদের মধ্যে গডফাদারদের সহযোগিতায় আবারও দল প্রধান তৈরি করে নেমে পড়ে দস্যুতা কর্মকাণ্ডে। যার কারণে মত্স্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে সব সময়। সাগর তীরবর্তী সুন্দরবন এলাকায় বনদস্যু প্রতিরোধে কোস্টগার্েডর তিনটি স্টেশন ও একটি আউট পোস্ট স্থাপন করা হলেও সশস্ত্র বনদস্যু বাহিনী তাদের সুযোগমত জেলে বহরের ওপর হামলা ও অপহরণ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগে সুন্দরবন এবং তত্সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সাতটি বনদস্যু ও জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। সুন্দরবন ও তত্সংলগ্ন সাগরে ত্রাস সৃষ্টিকারী বাহিনীগুলো হচ্ছে— রাজু, বাঘা, নাছির, সোহাগ গামা, আলামিন ও রুস্তুম নামে পরিচিত। বাহিনীপ্রধান জুলফিকার ও মোতালেব সম্প্রতি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর বাহিনী দুটির দায়িত্ব নেয় যথাক্রমে গামা এবং আলামিন। এদের কাছে রয়েছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। এসব দস্যু বাহিনীকে গডফাদাররা লোকালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার কারণে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দস্যু সর্দাররা মারা পড়লেও গডফাদাররা ফের তাদের দল সক্রিয় করে দস্যুতায় নামিয়ে দেয়। উপকূলীয় এলাকা বাগেরহাটের শরণখোলা, বরগুনার পাথরঘাটা, পিরোজপুরের পাড়েরহাট, বাগেরহাট সদর ও খুলনায় গডফাদারদের প্রতিনিধি রয়েছে। এসব প্রতিনিধি দস্যুদের কুপন বিক্রি করে থাকে জেলেদের কাছে। অপহৃত জেলেদের মুক্তিপণের টাকা অনেক সময় প্রতিনিধিদের কাছে পরিশোধ করলেই জেলেরা দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পায় বলে জেলেরা জানায়।
শরণখোলা জাতীয় মত্স্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, গত জুলাই মাসে দস্যুরা জেলেদের ওপর সাত দফায় হামলা চালিয়ে দেড়শ’ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ ও কোটি টাকার জাল, মাছ, ডিজেল ও ট্রলারের যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ সময় দস্যুদের হাতে এক জেলে নিহত ও কমপক্ষে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই রাত ৯টায় বনদস্যু গামা বাহিনী সুন্দরবনের নাড়িকেলবাড়িয়া এলাকায় এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে হামলা চালিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক জেলেকে কুপিয়ে তিন টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এ সময় দস্যুদের রামদায়ের এলোপাতাড়ি কোপে ১২ জেলে গুরুতর আহত হয়। আহতদের বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিত্সা দেয়া হয়। এদের বাড়ি পিরোজপুরের জিয়ানগর ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় বলে জানান তারা। ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়ার অদূরে ১২-১৪ জনের একদল জলদস্যু সশস্ত্র অবস্থায় ভারতীয় একটি ট্রলারে এসে এফবি রাজিয়া ট্রলারে হামলা চালায়। এ সময় তারা ১৩ জেলেকে মারধর করে তিন লাখ টাকার ইলিশ মাছ, ট্রলারের ব্যাটারি, ডিজেল, সার্চলাইট, মোবাইল ফোন, ঘড়িসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নেয়। হামলার ঘটনাটি ওই ট্রলারের মালিক শরণখোলার রাজৈর এলাকার আবদুর রহিম আড়তদার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ২৫ জুলাই রাতে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন সংলগ্ন পক্ষিরদিয়াচর এলাকায় বনদস্যু বাঘা বাহিনী মাছ ধরা অবস্থায় ১২টি ট্রলারে হামলা চালিয়ে ১৭ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় ট্রলারের যন্ত্রাংশ, জাল, মাছসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। দস্যুদের হামলায় ৪ জেলে আহত হয়। এদের মধ্যে মামুন নামের এক জেলেকে হাত-পা ভাঙা অবস্থায় পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বনদস্যু ও জলদস্যু বাহিনীগুলোর কাছে সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনবিভাগও জিম্মি হয়ে পড়েছে। দস্যুদের হামলার ভয়ে বন পাহারায় নিয়োজিত অনেক টহল ফাঁড়ি গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে বনবিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তাদের ফাঁড়িতে মাত্র চারজন বনরক্ষী রয়েছে। তাই দস্যুদের ভয়ে তাদের নামে ইস্যু করা অস্ত্র রেঞ্জ কার্যালয়ে জমা রেখে আসতে হয়েছে। তাছাড়া বনরক্ষীদের গুলিতে দস্যুরা মারা পড়লে পুলিশি হয়রানির ভয়ে সাধারণত তারা বনদস্যুদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেন। বনবিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১ জুন বনদস্যু জুলফিকার বাহিনী শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা টহল ফাঁড়িতে হামলা চালায়। এ সময় দস্যুদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বনরক্ষী আফছার আলী (৫০) ঘটনাস্থলেই নিহত এবং ফাঁড়ি ইনচার্জ শাহআলম চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। একই বছরের ৩১ মার্চ খুলনা রেঞ্জের দোবেকি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের টহল নৌকায় বনদস্যুরা হামলা চালিয়ে ২টি চাইনিজ রাইফেল ও ৮০ রাইন্ড গুলিসহ বিএম জহির উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার ৫ দিন পর গভীর বন থেকে জহিরের লাশ উদ্ধার করে বনবিভাগ। ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি একই রেঞ্জের হলদেবুনিয়া টহল ফাঁড়িতে বনদস্যুরা হামলা চালিয়ে ৩টি অস্ত্র ও ১৮৩ রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে যায়। গত ১৯৯১ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে বনদস্যুরা হামলা চালিয়ে বনপ্রহরী আবুল কালাম আজাদ ও নৌকা চালক আবদুর রহিমকে কুপিয়ে আহত করে ৪টি রাইফেল ১১৫ রাউন্ড গুলি ও অন্যান্য মালামাল লুট করে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সুন্দরবনের ১৯ দস্যু নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দস্যু দমনে অভিযান অব্যাহত রাখলেও তাদের নির্মূল করা যাচ্ছে না। দস্যুরা তাদের নির্মম পরিণতির কথা জেনেও এ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। নতুন নতুন নামে বাহিনী গঠন করে চালাচ্ছে দস্যুতা। উপকূলীয় পেশাজীবীদের দাবি, এসব বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি এদের গডফাদার ও অস্ত্রের যোগানদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে। গডফাদার ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের নির্মূল করতে পারলে দস্যুতাও বন্ধ হবে বলে তাদের অভিমত।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো জানান, বনবিভাগে লোকবল কম থাকায় বনরক্ষীদের দুই চারজনের দল নিয়ে অনেক ছোট-বড় খালে টহল দিতে হয় তাই বনদস্যুদের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া দস্যুরা মারা পড়লে আইনগত অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। বনরক্ষীদের কোনো ঝুঁকি ভাতা না থাকায় তারা আহত হলে চিকিত্সা বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো টাকা পান না তাই দস্যুদের সঙ্গে সংঘর্ষ সাধারণত এড়িয়ে চলেন। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার শরীফ জানান, বর্তমানে সমুদ্রকেন্দ্রিক দস্যুতা হচ্ছে। তাই কোস্টগার্ডের সমুদ্র অভিযানের সামর্থ্য না থাকায় নৌবাহিনী টহল দিচ্ছে। তবে সুন্দরবনে কোস্টগার্ডের তিনটি স্টেশন ও একটি আউটপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত অভিযান চালানোর ফলে সুন্দরবনে দস্যুতা অনেক কমে গেছে। তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুল হক জানান, তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছরে পুলিশ ২৮ জন বনদস্যুকে গ্রেফতার করেছে। তবে দস্যুদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও তারা জামিন পেয়ে পুনরায় দস্যুতায় নেমে পড়েLink:
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×