somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“কৃতজ্ঞতা”

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একবার এক লোক মরুভূমির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় মরুঝড়ে পথ হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ল। হঠাৎ বাতাস আর বালির আস্তরন ভেদ করে কিছুদূরে তাঁবুর মত কিছু একটা তার চোখে পড়ল। কোনক্রমে হামাগুড়ি দিয়ে সে তাঁবু পর্যন্ত পৌঁছে ভেতরে ঢুকে পড়ল। তাঁবুতে প্রবেশ করে সে বুঝতে পারল শতছিন্ন তাঁবুর ভেতর ধূলিঝড় আর প্রচন্ড বাতাস অনায়াসে আনাগোনা করছে। তাঁবুর সর্বত্র চরম দারিদ্রের চিহ্ন দৃশ্যমান।

এর মধ্যেই মাটিতে মাদুর পেতে শুয়ে আছে এক বৃদ্ধ। দেখাই যাচ্ছে বৃদ্ধের সম্পূর্ন শরীর প্যারালাইজড এবং তার চোখ দু’টো অন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ একটানা বলে চলেছে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি তাঁর অনেক বান্দার ওপর আমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাঁর রাহমাতের জন্য আমাকে নির্বাচন করেছেন’। বৃদ্ধের কথা শুনে লোকটি এত আশ্চর্য হোল যে সে বলল, ‘আমি এসেছিলাম আপনার কাছে দিকনির্দেশনা চাইতে। কিন্তু আগে আমি জানতে চাই কোনদিক থেকে আপনি মনে করেন আল্লাহ আপনাকে তাঁর অন্যান্য বান্দার ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন? অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার অবস্থা সবদিক থেকেই শোচনীয়!’

বৃদ্ধ বললেন, ‘আল্লাহ কি আমাকে একটি সুস্থ মস্তিষ্ক দেননি, ফলে আমি তার প্রশংসা করতে পারছি? তুমি কি দেখনি কত নারীপুরুষ রয়েছে যাদের আল্লাহ এই নিয়ামতটি দেননি?’
লোকটি বলল, ‘জ্বী, আপনি ঠিক বলেছেন’।
বৃদ্ধ বললেন, ‘আল্লাহ কি আমাকে তাঁর পছন্দনীয় দ্বীন বোঝার ক্ষমতা দেননি? অথচ তাঁর কত বান্দা তাঁকে চেনেই না!’
লোকটি বলল, ‘আপনি নিঃসন্দেহে সত্য বলেছেন!’
বৃদ্ধ এবার বললেন, ‘আমি তোমাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে দেব, কিন্তু তোমাকে আগে আমার একটি কাজ করে দিতে হবে। আমি আমার সকল সম্পদ এবং স্ত্রী সন্তান হারিয়ে ফেলেছি আমার কনিষ্ঠ পুত্রটি ছাড়া যে আমার দেখাশোনা করে। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ আমার পক্ষে নিজের কোন কাজই করা সম্ভব নয়। আমার ছেলেটি কাল বেরিয়েছে কিন্তু এখনো ফিরে আসেনি, তুমি কি যাবার আগে তাকে খুঁজে দিয়ে যেতে পারো?’

লোকটি তাঁবু থেকে বের হয়ে দেখতে পেল অদূরেই শকুনের দল চক্কর দিচ্ছে। তার হৃৎপিন্ড ধক করে উঠল। যখন সে সেই স্থানে পৌঁছুল তখন দেখতে পেল বালকটির মৃতদেহ অর্ধভুক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নেকড়ের দল যা ফেলে গিয়েছে তা সাবাড় করার জন্যই শকুনের আগমন। লোকটি একবার ভাবল ‘পালিয়ে যাই’, কারণ বৃদ্ধকে তার জীবনের শেষ অবলম্বনটিও হারানোর খবর দেয়ার মত সাহস তার ছিলোনা। কিন্তু সে পারলোনা। সে বৃদ্ধের কাছে ফিরে গেল। বৃদ্ধকে খবরটি জানানোর পরিবর্তে সে তাকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনি কি মনে করেন আল্লাহ আপনাকে বেশি ভালোবাসেন নাকি আইয়ুব (আ) কে?’
বৃদ্ধ বললেন, ‘অবশ্যই আইয়ুব (আ) কে’।
সে বলল, ‘আপনি কি মনে করেন আল্লাহর পথে আইয়ুব (আ) বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন নাকি আপনি?’
বৃদ্ধ বললেন, ‘অবশ্যই আইয়ুব (আ)। তিনি আল্লাহর পথে সকল কিছু ত্যাগ করেছিলেন, আমার তো একটি পুত্র অবশিষ্ট রয়েছে’।
এবার আর কোন উপায় রইলোনা, লোকটির জানাতেই হোল যে বৃদ্ধের এখন আর কেউ অবশিষ্ট নেই। কিন্তু সংবাদটি শুনেই বৃদ্ধ বললেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি আমাকে আইয়ুব (আ) এর ভাগ্য দান করেছেন!’
অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই তার হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগল, তার শ্বাসপ্রশ্বাস কমতে লাগল এবং অবশেষে তিনি মারা গেলেন। লোকটি চিন্তায় পড়ে গেল কিভাবে তাকে কবর দেবে। কিন্তু কিছুক্ষণের ভেতর সেখানে একটি বাণিজ্য কাফেলা এসে পৌঁছুল, তারাও মরুঝড়ের কারণে পথ থেকে সরে এসে এখানে উপস্থিত হয়েছে। সবাই মিলে বৃদ্ধকে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে, কবর তৈরী করে, দাফন দিয়ে দিল। জানাজার পর লোকটি ঐ কাফেলার সাথেই ঐ স্থান ত্যাগ করল। সে রাতে বৃদ্ধ তার স্বপ্নে দেখা দিল। কিন্তু এ কি? সে তো এক তাগড়া নওজোয়ানে রূপান্তরিত হয়েছে! তাকে সম্পূর্ন সুস্থ এবং অত্যন্ত আনন্দিত দেখাচ্ছিল। সাথে ছিল তার সম্পূর্ন পরিবার। সে বলল, ‘আমি তোমাকে জানাতে এসেছি যে আল্লাহ আমাকে জান্নাত উপহার দিয়েছেন কেননা আমি তাঁর রাহমাতের জন্য তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং কৃতজ্ঞ ছিলাম’।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×