মাননীয় আদালত,
আমরা বেদনাহত হৃদয়ে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এই দগ্ধ শিশুদের আর্তচিৎকার, তাদের পোড়া শরীরের যন্ত্রণা আর অসহায় দৌড়ানোর ভিডিওগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া মানে শুধু তাদের শারীরিক যন্ত্রণাকেই নয়, তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের উপর এক নির্মম মানসিক অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া। এটি তাদের জন্য এক অবর্ণনীয় ট্রমা, যা সারাজীবন তাদের তাড়া করে বেড়াবে।
এই ভিডিওগুলো দেখে আমরা প্রতিটি মুহূর্তে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেসে ভুগছি। আমাদের দেবশিশুদের এই অসহায়ত্ব, অপমান আর গ্লানির দৃশ্য হৃদয় বিদারণকারী। এই নির্মমতা থেকে আমাদের মুক্তি নেই—প্রতিটি শ্বাস যেন আজ শোকের বোঝা হয়ে চেপে বসেছে।
হায়! এই দেশে জন্ম নেওয়াই কি আমাদের আজন্ম পাপ?
আমরা আপনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি—এই মর্মান্তিক ভিডিওগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য রুল জারি করুন। আমাদের শিশুদের কষ্টকে আর ভাইরাল হতে দেবেন না। তাদের যন্ত্রণাকে আর গণ-মানসিক নির্যাতনের হাতিয়ার বানতে দেবেন না।
মাননীয় আদালত, আমাদের বাঁচান।
গত কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক নিরীহ মানুষ। ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ জন যাত্রী মারা যান। এর মাত্র কয়েক মাস পর, ২০২৫ সালের ১২ জুন, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার আহমেদাবাদে একটি হোস্টেলে আছড়ে পড়ে প্রাণ কেড়ে নেয় ২৭০ জনেরও বেশি মানুষের। এর মধ্যে ছিলেন যাত্রী, হোস্টেলের শিশু শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষক, অভিভাবক, এমনকি একজন যুদ্ধবিমানের দক্ষ বৈমানিকও। এখনো অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।
প্রশ্ন জাগে: এত আধুনিক প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত কর্মী—তারপরও কেন এই মর্মান্তিক বিপর্যয়? বিমান দুর্ঘটনার কারণগুলো এখনো তদন্তাধীন, কিন্তু প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি, মানবীয় ভুল বা আবহাওয়ার প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে আসল প্রশ্ন হলো, এইসব "অভূতপূর্ব" দুর্ঘটনা কি সত্যিই রোধ করা সম্ভব ছিল না? নাকি লাভের মুখেড়ে মানুষের নিরাপত্তাকে অবহেলা করা হয়েছে?
মানবতার অবক্ষয়: দুর্ঘটনার পরের দৃশ্যগুলো আরও বেদনাদায়ক। গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে আমরা যা দেখছি, তা হলো—অবিশ্বাস্য সন্দেহ, দোষারোপের খেলা আর রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি। যাদের প্রিয়জনকে হারানোর ব্যথা এখনো তাজা, তাদের কান্নার উপর জয়ী হচ্ছে স্বার্থান্বেষী বিতর্ক। মৃত শিশুদের পরিবার, আহতদের যন্ত্রণা—সবকিছুকে затмил করেছে ক্ষমতার লড়াই। এটা কোনো সভ্য সমাজের পরিচয় নয়।
কী করা উচিত?
১. তদন্ত ও জবাবদিহিতা: দুর্ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. মানবিক সংহতি: এই মুহূর্তে প্রয়োজন শোকস্তব্ধ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো, রাজনৈতিক ফায়দা তোলা নয়।
৩. নিরাপত্তা সংস্কার: বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের নিরাপত্তা প্রোটোকল পুনর্বিবেচনা করতে হবে, যাতে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের কোথাও ফাঁক না থাকে।
শেষ কথা: জীবন অমূল্য। প্রতিটি দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—অহংকার, লোভ আর অবহেলার মূল্য কত ভয়াবহ হতে পারে। আজ শোকের দিন, বিভেদের নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



