আমার কাছে কেন যেন বার বার মনে হত, এই লোকটা বোধহয় কোনদিন দুটাকা দিয়ে গ্যাস ভর্তি বেলুন কিনে মুক্ত আকাশে ওড়ায় নি। তাই সে জানেও না আনন্দ জিনিসটা কি। এক টাকা দিয়ে যে লাল-সবুজ রং মিশ্রিত বিষাক্ত আইসক্রিম পাওয়া যায় সেটাও বোধহয় সে খায় নি কোনদিন। তাই তার জানাও হয়নি তুচ্ছ জিনিসের মধ্যেও কতটা অনুভুতি লুকিয়ে থাকে।
স্কুল,কলেজ শেষ করে এখন আমি ভার্সিটি লাইফেরও প্রায় শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে। ঠিক এখানে দাড়িয়ে স্যারের কিছু যান্ত্রিকতা আজ আমার মধ্যেও উপলব্দি করছি। অথচ, আমি ছোটবেলায় গ্যাস ভর্তি বেলুন অনেক উড়িয়েছি। ওড়াতে ওড়াতে স্কুলে যাবার কথা ভুলে গেছি প্রায়ই। বেলুনটা যখন ফুটে যেত তখন মন খারাপ করে বসে বসে ভাবতাম, যদি কেউ আমাকে আরো দুটো টাকা দিত তাহলে আমি আরেকটা বেলুন কিনে ওড়াতাম। কিন্তু সেই টাকাটা যখন কেউ দিত না তখন প্রচন্ড অভিমান হত। মনে মনে ভাবতাম, বড় হয়ে আমি অনেকগুলো বেলুন কিনব একসাথে,সারাদিন ওড়াব, কেউ আমাকে তখন বাধা দিতে পারবেনা। শহীদ মিনার আর দোয়েলের ছবি দেয়া দুটাকার নোট হাতে পেলে প্রায়ই রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যেতাম সেই রং মিশ্রিত বিষাক্ত আইসক্রিম কিনতে। কেনার পর মনে হত পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খাবার এখন আমার হাতে। খাওয়ার পর মনে হত, এমন আরেকটা আইসক্রিম কিনতে পারলে সত্যিই দারুন হত।
এখন আমি বড় হয়েছি, আজ বেলুন ওড়ানোর ইচ্ছেটা আর নেই। রং মিশ্রিত সেই আইসক্রিমগুলো হয়তো এখনো পাওয়া যায় তবে খাওয়ার ইচ্ছেটা শেষ।
এখন মনে হচ্ছে, এই আনন্দগুলো স্যারের জীবনেও ছিল একদিন। সময় তার সব কেড়ে নিয়ে তাকে একটা জলজ্যান্ত অংকে পরিণত করেছিল। এই জীবন্ত অংকগুলোর কোন সমাধান নেই, জীবন যতদিন চলে অংকগুলোও ততদিন চলে। হঠাৎ জীবনটা থেমে যায়, অসম্ভব কঠিন সেই অংকটা সেদিন আপনা আপনি মিলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:১৯