যাইহোক, আমি যদি কোনদিন পথ ভুল করে সেই “ভূত এফ এম” এর স্টুডিওতে ঢুকে যাই তাহলে, ভূতের যে গল্পটি বলবো তা ঘন্টা দুয়েক আগে রেডি করলাম। এসব গল্প আগে থেকে রেডি থাকাই ভালো। নাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চাপাবাজি করতে গেলে গ্যাঞ্জাম লাগার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
ঘটনাটি এভাবে উপস্থাপিত হবেঃ
আমিঃ আজকে এই স্টুডিওতে আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এমন ভৌতিক স্টুডিওতে এর আগে আমি কখনো আসিনি। I is so Lucky.
উপস্থাপকঃ জী অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের এখানে আসার জন্য। আপনার ইংলিশ অনেক সুন্দর এবং বিশুদ্ধ। আমরা এখন আপনার কাছ থেকে আপনার জীবনের বাস্তব ভৌতিক অভিজ্ঞতা জানতে চাইব।
আমিঃ আমি যে গল্পটি বলব সেটি পুরোটাই ভূতের, পেত্নীর উপস্থিতি এখানে অবান্তর। গল্পটি খুবই ভূতের হওয়ায় যারা দুর্বল চিত্তের তারা কানে তু্লা দিয়া রাখতে পারেন। আর যারা আন্ডার ১৮ তারাও এটি শুনবেন না দয়া করে। তারা বরং কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন অতি শীঘ্র। কারণ, গল্পের ভূতটির চারিত্রিক রেকর্ড খুবই একটি আশাব্যাঞ্জক নয়।
উপস্থাপকঃ জী তবে শুরু হোক। আপনার গল্পের মাধ্যমে আজ আবার আমরা জানতে পারব, ভূত আসলেই আছে এবং এরা মানুষের মতই। এদের সুখ আছে, দুঃখ আছে, ঘৃণা আছে আবার বালুভাষাও আছে।। এমনকি এরাও “মানুষ এফ এম” নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করে এদের রেডিওতে যা শুনে ভূত সমাজের অনেক ভূতই হার্ট অ্যাটাক করেছে। ওকে, শুরু করুন তবে আপনার বাস্তব জীবনের সেই রোমহর্ষক ভৌতিক কাহিনীটি।
আমিঃ শুরু তো অবশ্যই করব, করতেই হবে। এই গল্পটি বললে আমি নিজেও অনেক হালকা অনুভব করব। তবে তার আগে আমি স্টুডিওর সবাইকে আবারো ধন্যবাদ দিতে চাই। স্পেশালী আপনাদের এই রেডিওতে যত মেয়ে “আর জে” আছে আমি তাদেরকে অন্তর থেকে আন্তরিক ভালোবাসা জানাতে চাই। আমাকে দয়া করে আপনাদের মেয়ে “আর জে” দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন কি?
উপস্থাপকঃ ইয়ে, মেয়ে “আর জে” দের সাথে পরিচয় পরে হবে। তাছাড়া সবাই ম্যারিড। আসুন আমরা মূল গল্পে চলে যাই।
আমিঃ ওওও। ঠিক আছে শুরু করছি। ঘটনাটি অনেক আগের, সম্ভবত বাংলাদেশে তখন ২০১৩ সাল চলছিল, অন্যদেশেরটা জানিনা। পুরোনো ঢাকার নিঝুম রাস্তা। রাত তখন পৌনে তিনটার মত বাজে। ঘুটঘুটে আমাবশ্যার রাত। পূর্নিমার চাদের আলো থৈ থৈ করছে চারদিকে। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু হেটে আসছি। মাথার উপর ঈগল পাখির মত ডানা ঝাপটে কিছু চামচিকা উড়াউড়ি করছে। ছম ছমে পরিবেশে গমগমে ভাব। :-&
উপস্থাপকঃ ওয়াও, রিয়েল্লি অ্যামেজিং। দারুন পরিবেশ। আমি নিজেও অনুভব করতে পারছি। কিন্তু আপনি বললে, ঘটনা পুরোনো ঢাকার অথচ আপনি হেটে আসছেন গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে। আবার একবার বললেন আমাবশ্যার রাত, পরে আবার বললেন পূর্ণিমার চাঁদ।
আমিঃ ভূতের গল্প তো ভূতের গল্পই। এইখানে আবার পুরোনো ঢাকা, নতুন ঢাকা কি? শুনলে শুনেন নাহলে চলে যাই, অন্য চ্যানেলে ইন্টারভিউ আছে। এইসব ভূত ফূত নিয়া সময় নষ্ট করার টাইম নাই।
উপস্থাপকঃ না না ওকে, আমরা গল্পের বাকিটা শুনি।
আমিঃ তো সেই মেঠো পথে আমি আর আমার বন্ধু হেটে আসছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা শ্যাওড়া গাছ। শ্যাওরা গাছ তো চেনেই, অনেকটা বট গাছের মত। পাতা থাকে, মূল থাকে, ডালাপালাও থাকে। মোটকথা একটা গাছের যা যা থাকে তার সবই থাকলে তাকে শ্যাওড়া গাছ বলে। আমি তো শ্যাওড়া গাছ দেখেই ঝেড়ে দৌড় দিলাম। আমার দেখাদেখি আমার বন্ধুও দৌড় দিল। তবে সে তার বাড়ির দিকে দৌড় দিল, আমি আমার বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম।
উপস্থাপকঃ দৌড় দিলেন কেন? শ্যাওড়া গাছে কি ভূত ছিল?
আমিঃ ভূত থাকতে হবে কেন? শ্যাওড়া গাছে কি ভূত থাকে? এতদিন ধরে ভূতের প্রোগ্রাম করেন, কোন গাছে কি থাকে তাও জানেন না। শ্যাওড়া গাছে থাকে পেত্নি। আর আমি তো দৌড় দিয়েছি অন্য কারণে। বাসা থেকে জরুরি ফোন এসেছিল সেজন্য।
উপস্থাপকঃ ও, তারপর?
আমিঃ তারপর আর কি ! বাসায় গিয়ে ডিনার করে লেপ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর এক ঘুমে রাত পার।
উপস্থাপকঃ কিন্তু আপনার গল্পে ভূতটা কোথায় সেটা কিন্তু বললেন না।
আমিঃ ভূত কিসের?
উপস্থাপকঃ আমাদের অনুষ্ঠান তো বাস্তব ভূতের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
আমিঃ ভূত তো আমার সামনেই বসে আছে।
উপস্থাপকঃ আপনি ক্কি-কি বলতে চাচ্ছেন? আপনি কি আমাকে মিন করছেন?
আমিঃ ভূত বলতে কিছু নেই জেনেও যে বাস্তব ভূতের গল্প শুনতে চায় তারচেয়ে বড় ভূত তো আর দেখিনা।
উপস্থাপকঃ আই উইল কিল ইউ। হেই মুকলেস, প্লিজ ক্যামেরা অফ কর। এই লোকেরে আনছে ক্যাডা এই অনুষ্ঠানে? মান-ইজ্জত তো সব লুট কইরা নিয়া গেল। বাইর কর এরে গলা ধাক্কায়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


