somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরিয়ম এবং আমি

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯০ সাল।
ইরাক এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে বাগদাদের একটি বিমানবন্দর অবতরন।
নামার পরে বিমান বন্দরের চারপাশে দেখছিলাম অজস্র খেজুর গাছ।চারদিকে বিস্তীর্ণ মরুভূমি।

আব্বা আমাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে অজস্র বার আমার কপালে চুমু খেল।আব্বার দুটো অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আমিও রীতিমত আবেগপ্রবন হয়ে গেলাম।
তারপর একটা গাড়িতে করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম,দুপাশে উচু টিলা,মাঝখানে পাথরের রাস্তা।
বাসায় যাওয়ার সময় আব্বা আমার কাছে বাড়ির খবরাখবর জিজ্ঞাস করলো।দাদী কেমন আছে,আম্মা কেমন আছে,ফুফু কেমন আছে,বাড়ির দক্ষিন পাশে আব্বার লাগানো আম গাছে আম হয় কিনা? পুকুরে মাছ হয়ছিল কিনা,দাদী কান্নাকাটি করে কিনা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পৌছালাম আব্বার থাকার বাসায়।

ইরাকে তখন পুরোদমে উপসাগরীয় যুদ্ধ চলে ।
মার্কিনরা পারস্য উপসাগরীয় অন্ঞল এর যুদ্ধ জাহাজ থেকে টোমাহক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করতো।ইরাকীরাও মার্কিনদের অবস্থানগুলোতে নিক্ষেপ করতো স্কাড ক্ষেপনাস্ত্র।
আমরা যে জায়গাটাতে থাকতাম সেটা বাগদাদ সিটি থেকে একটু দূরে জাফরানিয়া নামক এলাকায়।

প্রথমে বাড়িতে( আব্বা যে বাড়িতে থাকতো) ঢোকার পরে চারপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখলাম বাড়ির একটা বিশাল প্রাচীরে সীমাবদ্ধ। বাড়ির উত্তর এবং দক্ষিন পাশ ঘেষে আরও বেশ বড় দুইটা ঘর। এই দুইটাতে আব্বার ইরাকী সহকর্মীরা থাকে আমার আাসার পরে তারা আমাকে দেখে মহাখুশী। দুই পরিবারের সবাই বাইরে এসে আমাকে দেখতে লাগলো। বাড়ির পুরুষগুলো এসে আমার মাথায় চুমু খেয়ে আব্বার সাথে ইরাকী ভাষায় কি যেন বলতে লাগলো।
আমি তাদের ভাষা বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
একজন আমাকে ধরে টানাটানি করতে লাগলেন,আমি কিছু না বুঝতে আব্বার চোখে অসহায়ের মত চাইলে আব্বা বললো,,"উনি কয়েকদিন তোমাকে তার বাসায় থাকতে বলছে"!
তারপর আমাকে বললো,"যাও বাবা তোমার আঙ্কেল বলছে, একটু ঘুরে আসো।"
তারপর ওনাদের রুমে ঢুকলাম।
প্রায় ৫ টা রুমের এক বাড়ি।রান্নাঘর,ডাইনিং,বেডরুম,তার মেয়েদের বেড রুম।
প্রতিটা রুমেই জাজিম বিছানো।

আব্বার এই সহকর্মীর নাম আব্দল্লাই ইবনে মাসউদ।
উনার দুইটা মেয়ে, বড় মেয়ের নাম মরিয়ম।আমার সমবয়সী। মরিয়ম কারবালা ইউনিভার্সিটিতে পলিটিক্যল সাইন্সে অধ্যয়ন রত।

ইরাকের যাওয়ার পর থেকে আমার বন্ধু বলতে মরিয়মকেই পেয়েছিলাম।
আমি ইরাকী ভাষা বুঝতাম না,,মরিয়ম আর আমি প্রায়শই ইংলিশ এ কথা বলতাম।

মরিয়ম মেয়েটা খুবই রক্ষনশীল।প্রথম প্রথম আমার সামনে আসতো মুখ ঢাকা হিজাব পরে।পরে আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্বের ঘনত্ব বাড়ার সাথে মরিয়ম আমার সম্মুখে পর্দাশীলতা কমাইতে থাকে।অবশ্য আর কারও সামনেনে মুখ খোলা অবস্থায় যেত না।
মরিয়মের মা বাবা দুইজনই অসাধারন মানুষ ছিলেন।আমি ইরাকে যতবছর ছিলাম, বেশীরভাগ সময়টুকু মরিয়ম দের ফ্যামিলির সাথেই কেটেছে।

মরিয়ম আমার ৩/৪ বছরের বড়। প্রথমদিকে ওকে "সিস্টার" সম্বোধন করে ডাকলে ও আমাকে "মরিয়ম" সম্বোধন করে ডাকতেই অনুরোধ করতো।
ইরাকে যাওয়ার কয়েক মাস পরে আব্বার কথামত মরিয়ম আমাকে কারবালার একটি স্বনামধন্য কলেজে ভর্তি করে দেয়। মরিয়মকে বরাবরই আব্বা নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করতো।
মরিয়মদের দেশের বাড়ি ছিল ইরাকের মসুল প্রদেশে। ওর বাবার চাকরির সুবাদে প্রায় ১১ বছরে ধরে ওরা এখানে বসবাস করে।

ইরাকে যাওয়ার পর থেকে মরিয়মই ছিল আমার্ বন্ধু,আমার অভিভাবক,আমার প্রিয়তমা।
বিকালে একসাথে ঘুরতে বের হওয়া। একসাথে বাসায় ফেরা,পুরো কারবালা শহরটা আমরা হুলুস্থুল বাধিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। মরিয়ম আমাকে গাড়ি ড্রাইভ করতে শিখিয়েছিল।ছুটির দিনে আমরা প্রায়ই বিকালে দজলা নদীর তীরে যেয়ে বসে গল্প করতাম। কোন কোন দিন আমরা লংড্রাইভ করে ফুরাদ নদীতে গিয়ে গোসল করে আসতাম। ড্রাইভ করার সময় মরিয়মকে বাংলা গান গেয়ে শোনাইতাম।

জীবন টা তখন স্বপ্নের মত সুন্দর ছিল....একটা ভীনদেশী মেয়ে এভাবে জীবনটা নতুন করে সজীবতা ছড়াবে,অতীত ভুলাবে,দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেকটা পদচারনায় ছিল তার স্নিগ্ধ স্পর্শ।
আমি ঠিক তখন ও বুঝিনি মরিয়ম আর আমার সম্পর্কটা এক্সাক্টলী এখন কি?

মরিয়ম আমাকে রোজ রোজ দু একটা করে ইরাকী শব্দ,বাক্য শেখাতো। ও আমার কাছে প্রায়ই বাংলা শিখার আগ্রহ প্রকাশ করতো। সেই সুবাদে মরিয়ম ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে দু একটা করে বাংলা বলতে পারতো।

ঈদের দিন গুলোতে আমরা সারা রাত বাহিরে ঘুরতাম, ছিল না কোন হ্যারাজমেন্টের ভয়,ছিনতাইয়ের ভয়। মাঝে মাঝে একটা ভয় ছিল, সেটা উপসাগর থেকে কোন মিসাইল না এসে মাথায় পড়ে।

প্রায়ি রাতে ডিনার শেষে আমি আর মরিয়ম ওদের ছাদের উপর উঠে গল্প করতাম,ম্যাক্সিমাম আমরা ইংলিশ এ কথা বলতাম।কত কথা যে বলতাম,আমার দাদার গল্প,মায়ের গল্প,দেশের গল্প।
একদিন গল্প করতে করতে বললাম,
-- Moriom,What's the relation between you and me?
মরিয়ম কপাল কুচকে অন্যদিকে তাকায়ে উত্তর দিল,
-- just friendship...
--- friedship or more than friendship?
মরিয়ম ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়া আমার পিঠে আস্তে করে আঘাত করে বললো,,-- finish this topic.

সেদিন ছিল শুক্রবার, বিকালে মরিয়মকে সাথে নিয়ে বের হলাম। দজলা নদীর তীরে একটা পার্কে বসে পাস্তা খাইতে খাইতে মরিয়ম ইরাকী ভাষায় বললো,
-- জয়,তুমি চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগবে।
আমি এক মুহুর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। ইরাকের আসার পর থেকে কখনও দেশে ফেরার কথা মনেই হয়নি।মরিয়ম,মরিয়মের বাবা মা,মরিয়মের বোন দের আমার একান্ত নিজের পরিবার মনে হত।
মরিয়মকে দেখলেই মনে হত,দুনিয়ায় আমার সবথেকে কাছের ও আপন মানুষটা হল সেই।
আজ হঠাৎ মরিয়মের মুখে চলে যাওয়ার কথাটা শুনে কোথায় যেন আকস্মিক হাতুড়ী পেটার মত আঘাত করলো।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে,মরিয়ম আবার বললো,--তোমার খারাপ লাগবে না?
আমি চুপ রইলাম,
মরিয়ম আবার বলতে শুরু করলো,-- আমারও বয়স হয়ে যাচ্ছে,গ্রাজুয়েশন শেষ করলেই হয়তে বিয়ে হয়ে যাবে। তোমারে এভাবে রেখে বিয়ে করে কারও সাথে চলে যেতে ভীষন খারাপ লাগবে জয়।

আমারে চুপ থাকতে দেখে,মরিয়ম আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,-- কি হল,জয় কিছু বলছো না যে...

আমি মরিয়মের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,-- চলো,মরিয়ম আজ বাসায় ফিরি,,কিছুই ভাল্লাগছেনা।
মরিয়ম আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললো,-- জয় তোমার বাসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফেল্লাম,কষ্ট পাইছো! সরি জয়!
আমি মাথা নেড়ে বললাম,-- না তেমন কিছু না,চলো উঠি।

সেদিন বাসায় ফিরে সোজা আব্বার রুমে গিয়ে আব্বার বেডে শুয়ে পড়লাম। রাত ১১ টার দিকে আব্বা বাসায় এসে রুমে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বললো,কিরে এভাবে শুয়ে আছিস কেন কি হয়ছে,? অসুস্থ নাকি?

আমি বললাম, "না, এমনি জার্নি করছি তাই"
সেদিন রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রতিদিনের মত আজ মরিয়ম খাওয়ার জন্য ডাকতে আসে নি।
পরদিন ভোরে উঠে শুনলাম ওর প্রচন্ড জ্বর।

১৯৯৪ সালের দিকে তখনও উপসাগরীয় যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়নি।মাঝে মাঝে আমেরিকান শিপ থেকে মিসাইল উড়ে আসতো।
সেদিন ছিল, মার্চের ৫ তারিখ আব্বার অফিসের পাশের ভবনে আমেরিকান সৈন্যরা বোমারু বিমান দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিল।
অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল আব্বা।
সেদিনের পর থেকে আব্বা বার বার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে চাইতো। ওদিকে বাড়ি থেকে বার বার চিঠি পাঠাচ্ছিল দাদুর খুব শরীর খারাপ।সারাক্ষন আব্বারে দেখতে চাই।
আব্বা যতই দেশে ফেরার কথা বলতো,আমার ভিতরটা ততই ভেঙে চুরে সন্ধ্যার মত মলিন হয়ে যেত।আব্বাকে বলতাম আমি গ্রাজুয়েশন টা শেষ করে নিই তারপরে যেও। কে শুনে কার কথা। আব্বা একদিন আমায় ডেকে বললো," বাবা আমার আর এখানে মোটেও ভাল্লাগছে না,দেশে যাওয়ার জন্য মনটা উদগ্রীব হয়ে যাচ্ছে।

তার সপ্তাহ তিনেক পরে আব্বা দেশে ফেরার সব ব্যবস্থা করলো
পরের এপ্রিলে ৮ তারিখ আমাদের ফ্লাইটের ডেট পড়লো। প্রায় সাড়ে ৪ বছরের ইরাকী জীবন,ইরাকী মায়া,ফুরাত,দজলা,কারবালা,,নুজাফ,কুফা প্রত্যেকটাই জায়গায় ছায়র মত মরিয়মের স্মৃতি ছিল।
স্মৃতির এই জাল কেটে ফেলা বড় কষ্টের।
অসহায়ের মত শেষের দিনগুলো কাটাতে লাগলাম।রাতে মরিয়মের সব কিছু বললাম। মরিয়ম খুব দূর্বল চিত্তের মেয়ে। আমার মুখে অসহায়ের মত তাকিয়ে বিড় বিড় করে কি যেন বলতেল লগলো।খুব কান্নাকাটি করলাম দুজনে। সেদিন রাতে ওকে জানিয়ে দিলাম যে কাল সকালে আব্দুল কাদের জিলানী (র.) এর রওজা জিয়ারত করতে যাবো একসাথে।
মরিয়ম মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জবাব দিয়ে বললো,
-- তুমি যাওয়ার পরে আমার ঠিকানায় চিঠি লিখবা তো?
-- হ্যা লিখবো,প্রতি ১ মাস পর পর।
-- না না ১৫ দিন পর পর দিবা।
-- আচ্ছা ঠিক আছে দিব।

দিনগুলো কেমন যেন ছোট হয়ে আসলো। ফ্লাইটের দিন ধেয়ে আসলো।

যাওয়ার আগের দিন রাতে মরিয়মের ছোট বেনটার সাথে বসে অনেক গল্প করলাম।
মরিয়ম আমাকে ডেকে ওর ঘরে নিয়ে একটা পান্জাবী,আর একটা আতরের কৌটা আমার হাতে দিয়া বললো,এটা রেখে দিও,আতর শেষ হয়ে গেলে কৌটা টাও রেখে দিও।।
তারপর আমার মাথাটা নিচু করতে বলে,মাথায় কয়েকবার চুমু খেল।
আর কান্না করতে করতে বার বার বলতে লাগলো," তুদাখার ইয়া ইয়াজীজী তুদাখার" অর্থাৎ" মনে রেখো প্রিয় আমার,মনেরেখো"।
খুব আবেগ প্রবণ হয়ে গেছিলাম,নদীর স্রোতের মত ভিতর থেকে চাপা কান্না গুলো গলার কাছে এসে ক্রমাগত আঘাত করতে লাগলো।জীবন যেন হৃদপিন্ডে ধুকপুক আওয়াজ,গলায় বেদনার ছুরিকাঘাতে আহত মৃত্যুপথ যাত্রীর মত ছটফট চিৎকার অথচ কেউ দেখতেছে না।
দাঁড়ি কমা বিহীন দুটো হৃদয়ের এক হতে চাওয়ার,কাছাকাছি থাকার তীব্র আকাঙ্খার সেদিনের সেই রাতটা জীবনের বেদনা খুঁড়ে কান্নার আয়োজনে জীবন পাতার অমলিন নক্ষত্রখচিত রাত।আর হয়তো কখন আসবে না এমন রাত,এমন মুহুর্ত...

অবশেষে সব স্মৃতি আর সব মায়ার জাল কেটে বিদগ্ধ হৃদয় নিয়ে এপ্রিলে ৮ তারিখ দেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম।

..........

দেশে আসার পরে আমরা প্রায়ই চিঠি চালচালি করতাম,ইংরেজীতে যতটুকু পারা যায় বর্ণনা করে ৩/৪ পৃষ্ঠার চিঠি আদান প্রদাণ করতাম।
প্রায় বছর দুয়েক পরে এক চিঠিতে মরিয়ম লিখছিল।
চিঠিটির অংশ বিশেষ ," আগামী হিজরী ১৩ ই শাবান আমার বিয়ে। ছেলেটা কারবালা মসজিদের খাদেম। আমার জন্য দোয়া রেখো জয়"।

মরিয়মের বিয়ের পর থেকে খুব কম চিঠি পাঠাতো।মরিয়মের শশুর বাড়ির ঠিকানা আমাকে দেয়নি।আমি চিঠি পাঠাইতাম মরিয়মের আব্বুদের ( যে বাসায় আমি থাকতাম) বাসার ঠিকানায়।
মরিয়ম প্রায় ৪/৫ মাস পর পর চিঠি লিখতো। চিঠি লিখতে দেরী হওয়ার কারন হিসেবে জানিয়েছিল, সাংসারিক ব্যস্ততা।
মেয়েরা আসলেই সংসারের কাছে চরম ভাবে হেরে যায়। সংসার হওয়ার পরে মেয়েদের মন মস্তিষ্ক ও কেমন যেন বদলে যায়। সব উপেক্ষা করতে পারলেও মেয়েরা স্বামী- সংসারকে কোন ভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না।

২০০০ সালের লাস্টের দিকে মরিয়ম একটা চিঠিতে জানিয়েছিল ওর একটা ছেলে সন্তান হয়ছে।ছেলে টার নাম রেখেছে আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ। ছেলেটার একটা ছবিও পাঠায়ছিল। ফুলের মত দেখতে ছেলেটা মরিয়মের কিছুই বাদ যায়নি। ঠিক মরিয়মের চেহারাটা ছেলেটার মুখে ভাসতো।

২০০৩ সালের মে মাসে মরিয়মের লাস্ট একটা চিঠি পেয়েছিলাম। তারপরে আর কখনও কোন চিঠি বা খোঁজ পাইনি মরিয়মের।

লাস্ট চিঠিটাই মরিয়মের শশুর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে লেখা ছিল,খুব বেদনা দায়ক ছিল মরিয়মের এই চিঠিটা।
চিঠির অংশ বিশেষ....

""জয়,আমাদের এখানে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।যেন কেয়ামত এসে গেছে। জয়,খুব কান্না পাচ্ছে, আমার আর এ দুনিয়াতো কেউ বেঁচে নাই আমার ছেলেটা ছাড়া। আব্বু আম্মু আর ছোট বোন টা মাস খানেক আগে এক নুজাফ শহর দিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিল।ওখানে এক বিমান হামলায় মারা গেছে তিন জনই।আমার স্বামী মিলিশিয়া হিসেবে যুদ্ধে গেছিল।অনেক না করছিলাম যাওয়ার জন্য,বলছিলাম আমার এ দুনিয়াতে আর কেউ নাই তুমি ছাড়া,এখন তুমি যুদ্ধে গেলে, তোমার কিছু হলে আমি কি করে বেঁচে থাকবো।কিন্তু আমার কথা শুনিনি,গত ১৫ দিন আগে সে মারা গেছে।
এখন আমি একা জয়,সম্পূর্ণ একা,জানিনা ছেলেটাকে নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবো,কোথায় যাবো,আদৌ বাঁচতে পারবো কিনা।এখন আপতত একটা আশ্রয় শিবিরে ছেলেটারে নিয়ে আছি।
সিদ্ধান্ত নিছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের গ্রামে দাদা দাদীর বাড়িতে যাবো। তোমার ঠিকানা টা আমার সাথেই আছে,যেখানে যাই চিঠি পাঠাবো।তুমি এই ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে আমাকে আর পাবে না। তোমাকে কখনও ভুলে যাবো না জয়,,,আমার দেয়া পান্জাবী আর আতরের খালি কৌটা টা রেখে দিও গুছিয়ে। যুদ্ধ শেষ হলে আবার একটা আতর পাঠাবো।
দোয়া করো জয় আমার ছেলেটার জন্য। দোয়া করো আমরা যেন বাঁচতে পারি। ভালো থেকো। "

চিঠিটা পড়ে সেদিন খুব কান্না করছিলাম।
পরে আর কখনও মরিয়মের চিঠি পাইনি।আজ এখনও অপেক্ষা করি মরিরিয়মের চিঠির জন্য।জানিনা সে আদৌ বেঁচে আছে নাকি ঠিকানা হারিয়েছে। হয়তো বা বেঁচে আছে অথবা নেই।।
যেখানেই থাকুক ইহকাল অথবা পরকাল।মরিয়ম যেন ভালো থাকে। মরিয়ম ছিল আমার জীবনে,এবং এভাবেই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৩৪
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×