somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদা আর কালো মরুভুমি প্রথম পর্ব

১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদা মরুভুমিতে এক অপুর্ব সৃস্টি চুনা পাথরের মাশরুম


আচ্ছা মরুভুমি কি কখনো সুন্দর হয় বলুনতো !
এ প্রশ্নটা অনেকের মত আমারও মনে ছিল সবসময়।
যদিও মরুভুমি আমি আগেই দেখেছি ভারতের জয়সলমীরে, মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে, কই ভালো তো লাগেনি তাকে একটুকুও।

কি তার রুক্ষ শুস্ক প্রকৃতি, আগুনের হল্‌কার মত বাতাস নামের এক ভয়ংকরের স্পর্শ।এক নি:শ্বাসে শরীরের সমস্ত আদ্রতা যেন শুষে নিচ্ছে আমার। শরীরের চামড়া এমন কেন ! পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এটা কি আমি !
এমনই এক অনুভুতি হয়েছিল আমার।
লু হাওয়ার সাথে ধুলো উড়ে চোখমুখ ভরে যাচ্ছে, কিচ কিচ করছে সব কিছু।
প্রচন্ড গরম, ভালোলাগার কি থাকতে পারে এখানে !

কিন্ত পশ্চিম মিশরের হোয়াইট ডেজার্টে এসে আমি কেমন অভিভুত হয়ে গেলাম এও কি সত্যি।অপার্থিব সৌন্দর্যের এই রূপ কি কখনো মরুভুমির হয়ে থাকে! চমকে গিয়েছিলাম আমি তার পর যখন শুনলাম তাও আবার সাদা কালো !

মিশরে পৌছানোর পর ট্যুর অপারেটর যখন বার বার বাহারিয়া ডেজার্ট সাফারীর কথা বলছিল তখন আমার পুরোনো অভিজ্ঞতার পুঁজি নিয়ে আমি কিন্ত কিন্ত করছিলাম। এখন মনে হয় আমি যদি আবার কখনো মিশরে যাই তবে শুধু এই বাহারিয়া ডেজার্ট সাফারীতেই যাবো।


পশ্চিম মিশরের মরুভুমির দিকে ছুটে যাচ্ছে আমাদের বাস


ভোরবেলা রওনা হোলাম কায়রো থেকে ৩৬০ কিমি দুরত্বে ফারাফ্রা আর বাহারিয়া মরুদ্যানের মধ্যে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে অবস্হিত সাদা মরুর উদ্দেশে। পাঁচ ঘন্টা লাগবে বাসে যেতে বাহারিয়া মরুদ্যানে। আজ যাবো, মরুর বুকে রাত্রিবাস করে কাল বিকেলে ফিরে আসবো।

আড়াই ঘন্টার মত চলেছি। বাইরে প্রচন্ড গরম।শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসও বিন্দুমাত্র তাপমাত্রার কোনো হেরফের করতে পারছেনা। একবার পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছি একবার হীম শীতল ফান্টার বোতলে চুমুক কিন্ত তৃষ্ঞা মেটার কোনো লক্ষনই নেই।তারপরও ঝিমুনি কাটানোর জন্য ভীষন চা খেতে ইচ্ছে করছে। ভাবতেই হঠাৎ করে আলাদীনের চেরাগের মত সামনেই দেখি একটি ছোট্ট ফুড কোর্টের সামনে আমাদের যাত্রা বিরতি।


ভেতরে বসে চা খাচ্ছি আমরা

দুপুর বারোটার সময় বাহারিয়া মরুদ্যান শহরে পৌছালাম। মরুদ্যান হলে কি হবে ছাড়া ছাড়া কিছু খেজুর আর ঝাউ টাইপের গাছ আর তেমনি প্রচন্ড খরতাপ। এলোমেলো বাড়ীগুলো মনে হয় ধুলোয় ঢাকা মলিন চেহারা। দারিদ্রতার ছাপ সর্বত্র।

যাক এসব কথা। ট্যুরের কথায় আসি।
আমাদের সাফারী ট্যুরের আয়োজক ছিল মিশরের বিখ্যাত আহমেদ সাফারী ক্যাম্প। বাস থেকে নামতেই তাদের জীপ সাথে সাথে আমাদের পৌছে দিল তাদের বিখ্যাত আহমেদ সাফারী হোটেলে । আমরা ষোলোজন পর্যটক ছিলাম। তার মধ্যে আমেরিকান, কলম্বিয়ান, জার্মান, জাপানিজ, ইজিপশিয়ান আমেরিকান আর আমরা দুজন।

সেদিন ছিল শুক্রবার। সেখানে সবাই সুন্নি মুসলমান। আমাদের এজেন্ট, গাইড, ড্রাইভার সবাই জুমার নামাজ পড়ে আসলো।হোটেলে খেলাম রুটি পনির, কাবাব, টুনা ফিস শসার সালাদ আর কি সব চিনলাম না।মনের মত খাবার পরিবেশন করতে না পারায় তারা বেশ দু:খ প্রকাশ করতে লাগলো।


হোটেলের বাইরের চিত্র

খাবার শেষে আমি হোটেলটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম।আধুনিক এবং ঐতিহ্য এই দুটোর সংমিশ্রনে তৈরী হোটেলটায় পাথর আর খেজুর গাছের কান্ড ব্যাবহার করা হয়েছে।মোটা পাথরে তৈরী বলে ভেতরটা তুলনামুলক ভাবে বেশ ঠান্ডা। পাথরের বেন্চ দেয়ালে খোদাই করা তাতে পাতলা কার্পেট জাতীয় দড়ি বিছানো, সেই ঠান্ডা আরামদায়ক পাথরের বেন্চে বসে রইলাম কিছুক্ষন এর মধ্যে জীপের ছাদে মাল পত্র উঠানোর কাজ চলছে। রাতের খাবার এবং সকালের নাস্তা পরিবেশন করার দায়িত্ব তাদের।

আহমেদ সাফারী ক্যাম্প হোটেলের ভিতরে।

এজেন্ট মাহমুদ এসে জানালো আমরা প্রত্যেকে যেন কমপক্ষে দুই লিটারের দুই বোতল পানি সাথে নেই। কায়রো থেকে পাচ ঘন্টা ধরে আসতেই ছয় লিটার পানি আর দুই লিটার ফান্টা শেষ। আবারো চার লিটার পানি আর দুই লিটার ফান্টা কিনলাম। ফান্টা আমি খুব কম খাই কিন্ত টক স্বাদের জন্য ওটা আমি ওখানে খুব খেতাম, ভালোলাগতো।

আমরা আরো জানতে পারলাম তারা আমাদের প্রথমে ব্ল্যাক ডেজার্ট এবং সেখান থেকে হোয়াইট ডেজার্টে নিয়ে যাবে।
আর ওখানেই রাতে থাকার জন্য ক্যাম্প করবে।

ঠিক তিনটায় চারটা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারে করে তাবু, কম্বল পানি, পেট্রোল ক্যাম্প ফায়ারের জন্য কাঠ আর খাবার দাবার হাড়ি পাতিল চুলা মোট কথা যা যা দরকার সব কিছু নিয়ে রওনা দিলাম দুশ দশ কিলোমিটার দুরে সেই ভয়ংকরের উদ্দেশ্যে।
আমাদের গাইড কাম ড্রাইভার আহমাদ একশ চল্লিশ কিলোমটার বেগে সেই মরুর বুক চিরে বয়ে যাওয়া সোজা রানওয়ের মত মসৃন রাস্তা দিয়ে ছুটে চল্লো গন্তব্যের উদ্দশ্যে।



আমাদের জীপ যাত্রার জন্য প্রস্ততি নিয়ে
চলবে...

সাদা আর কালো মরুভুমি ২য় পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

চারটি পর্বের সব ছবি আমাদের ক্যামেরায় তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
৬১টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×