somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেরাকোটা সৈন্যের দেশে (ছবি ব্লগ )

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোর পৌনে ছটায় শিয়ান স্টেশনের বাইরে আমরা দাড়িয়ে

কি অদ্ভুত সুন্দর এক তারিখ ... ১.১১.১১... এমন একটি দিনে আর এই জীবনে কখনো লেখা হবে না ...শুধু সুন্দর তারিখটা স্বরণীয় করে রাখার জন্যই এই সামান্য ইতিহাস ছোয়া ছবি ব্লগ পোষ্ট।
৬০০ বছরের পুরোনো দেয়াল ঘেরা বর্তমান চীনের সাংশি প্রদেশের রাজধানী শিয়ান চীনের প্রাচীন চারটি রাজধানীর একটি। ৭৭১ খৃস্ট পুর্ব থেকে ৯০৭ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত অনেক রাজ বংশের দ্বারাই শাসিত শিয়ানের রয়েছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন ইতিহাস। এ ছাড়াও শিয়ান চীনের অন্যতম খনিজ সম্পদ বিশেষ করে মুল্যবান জেড পাথর সমৃদ্ধ প্রদেশ।

বেজিং থেকে শিয়ান যেতে চীনের সবচেয়ে দ্রুতগামী বিলাসবহুল ট্রেন হচ্ছে 'জেড ২০ (টোয়েন্টি)'।এই 'জেড' চায়নীজ শব্দটি 'জিদাহ' থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ ননস্টপ। লম্বা টানা প্যাসেজের পাশে কি সুন্দর করে সাজানো গুছানো নরম চারটে বার্থের সেই ট্রেনের এক একটা কুপ।

এই ট্রেনে শুধু বিদেশী ট্যুরিস্টরাই ছিল, স্হানীয় কাউকে দেখিনি। সারারাত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ৯১৪ কি.মি পথ পাড়ি দিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায় পৌছালাম শিয়ানে । পৃথিবী বিখ্যাত টেরাকোটা সোলজার দেখতে।


টেরাকোটা সোলজারের মুর্তিগুলো যেখানে আবিস্কৃত সে চত্বরের উল্টোদিকেই এই পাহাড়ের সারি

চীনের প্রথম সম্রাট শিন শি হুয়ান এর মৃত্যুর পর ( খৃঃ পুঃ ২০৯-২১০) তার সমাধি সৌধের সামনে মাটির তৈরী এই সৈন্য এবং ঘোড়ায় টানা রথগুলো তৈরী করে কবর দেয়া হয়েছিল। যাতে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে রাজার জীবন রক্ষনাবেক্ষন করতে পারে !!
তাও ভালো যে ইজিপ্টের র মত জীবন্ত মানুষ কে মেরে মমি করা হয়নি মৃত ফারাওকে দেখাশোনা করার জন্য।

তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত এই টেরাকোটা সোলজারগুলো আবিস্কৃত হয়েছে ১৯৭৪ সালে। কিছু স্হানীয় কৃষকদের দ্বারা যারা কি না সেখানে একটি কুয়ো খুড়তে গিয়েছিল। তিনটি পিটে এই সোলজার গুলো সারি সারি করে সাজানো তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী।


সারি সারি দাড়ানো সাধারন সৈন্য

সেখানে ছোটো ছোটো বক্সে স্যুভেনীর হিসেবে টেরাকোটা সৈন্য আর ঘোড়া নিয়ে ফেরী করে বিক্রী করছে কেউ কেউ । তেমনি এক স্যুভেনির বিক্রেতার সাথে আলাপ হয় আমার। সে বাংলাদেশ কে চিনতে কিছুতেই পারছিল না।

কিন্ত আমার সালোয়ার কামিজ দেখে সে ভারতকে চিনতে পারলো এবং তারপরই অবধারিত ভাবে বলিউডের নাচ গান তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো। আমাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে জানালো ঐ সব নাচ গান তার ভীষন পছন্দ।

হাটতে হাটতে ফুলে উঠা পা জোড়া বিশ্রাম দেয়ার জন্য আমি এক বেঞ্চে বসলে সে মাটিতে বসে খুব উচ্ছসিত হয়ে উঠে আমাকে একটা হিন্দী গান শোনানোর প্রস্ততি নিচ্ছিল।এমন সময় আমার ছেলের ডাকে চমকে উঠলাম," আম্মু জলদি আসো সবাই চলে যাচ্ছে"।
সেই ফাকেই ইতি পুর্বে অন্য একজনের কাছ থেকে কেনা এক সামান্য সোলজার কে ছেলেটি তার নিজের কাছে থাকা এক জেনারেলের মুর্তির সাথে বদলে দিল হাসি হাসি মুখে। আমিতো, কে সোলজার! কে জেনারেল !কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ছেলেটাই চিনিয়ে দিল, মাঝখানে সিথি করা দুদিকে ফুলানো চুল সে জেনারেল। আর একদিকে ঝুটি আলা হলো সাধারণ সৈন্য। বাকীরা কে কি তা আর মনে নেই।


কাচের বক্সে সংরক্ষিত এক জেনারেলের মুর্তি

আর সেই শত শত ট্যুরিস্টদের ভীড়ে আমাদের গাইড যে কই ছিল আল্লাহই মালুম।
প্রধান প্রবেশ পথ থেকে অনেকদুর হেটে আসতে হয় প্লেনের হ্যাংগারের মত আকৃতির পিটগুলোর কাছে।

আমরা দেখলাম তিনটি পিটে মোট আট হাজার সৈন্য ১৩০ টা রথ আর ৫২০ টা ঘোড়ার মুর্তি, ১৫০ টা যুদ্ধে ব্যবহৃত ঘোড়া। তবে এদের বেশীরভাগ এখনও মাটির নীচে।

একটি পিটের এক কোনায় ছোটো মিউজিয়ামের মত করে কিছু কিছু নিদর্শন কাচের বক্সে সাজিয়ে রেখেছে। তার মধ্যে টেরাকোটা সোলজার, ঘোড়ায় টানা রথ, কিছু মুর্তির রঙ্গীন মাথার ছবি, প্রত্নতত্ববিদরা কিভাবে কাজ করছে তার ছবি ইত্যাদি।



আমাদের গাইড গিয়েছে টিকিট কাটতে আর আমাদের গ্রুপ অপেক্ষা করছে



কাচের বক্সে রাখা টেরাকোটা ঘোড়া


পিটের মধ্যে টেরাকোটা সোলজার



প্রথম পিটে সারিবদ্ধ সোলজার


প্লেনের হ্যাংগার আকৃতির একটা পিটে সামনের দিকটা খুড়ে বের করা টেরাকোটা সৈন্যদের সারি। সমান যে জায়গাটি দেখা যাচ্ছে তার নীচে এমন শত শত মুর্তি এখনও চাপা পরে আছে।


প্রত্নতত্ববিদরা এগুলো খুড়ে খুড়ে জোড়া দিয়ে সাজিয়ে রাখছে।


রথ টানা ঘোড়া কাচের বক্সে ।


বেজিং অলিম্পিকে একটি শিশুর হাত ধরা এই টেরাকোটা মুর্তিটি প্রতীক হিসেবে ছিল।


ছবিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে এ ভাবে ভেঙ্গে যাওয়া মুর্তিগুলো পুননির্মান করছে প্রত্নতত্ববিদরা।


টেরাকোটার তৈরী রথের ঘোড়াগুলো মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করে সাজানো

পিটে সারিবদ্ধ টেরাকোটা সোলজার


এমন হ্যাংগারের মত পিটগুলো


এমন রং করা মুর্তিও ছিল সেখানে,বর্তমানে এগুলো যাদুঘরে। বক্সের মধ্যে দর্শকদের জন্য ছবি রেখেছে


এভাবেই মাটি খুঁড়ে প্রত্নতত্ববিদরা বের করে আনছে ভাংগা চোরা নমুনা সমুহ


মাটির নীচ থেকে খুড়ে বের করে আনছে হাজার হাজার মুর্তি

বক্সের উপর ভর করে রাখা ঘোড়ার মুর্তি


এর অদুরে টেরাকোটা সোলজার তৈরীর এই কারখানায় আমাদের নিয়ে গিয়েছিল।

এই টেরাকোটা সোলজার নিয়ে হলিউডে একটি ম্যুভি হয়েছিল মামি থ্রী
সমস্ত ছবি আমাদের ক্যামেরায় তোলা :)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৭
৮৬টি মন্তব্য ৮৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×