somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র সৈকতে

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সমুদ্রগামী সাম্পান
বেশ কয়েক বছর পর প্রিয় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আসলাম চারদিনের জন্য। তবে এবার পর্যটকদের ভীড়ে ভারাক্রান্ত কলাতলীতে না থেকে আমরা উঠেছিলাম ইনানীর রয়েল টিউলিপ হোটেল সি পার্ল, রিসোর্ট ও স্পাতে। হোটেলের নির্ধারিত শাটল সার্ভিস কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে গন্তব্যে নিয়ে চললো।


স্বপ্নের মত সুন্দর এই মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাবো ইনানী
কলাতলী পয়েন্টের পাশ দিয়ে ইনানী যাবার রাস্তাটি সমুদ্রের গ্রাসে পরিনত হওয়ায় আমাদের বাহন জনবসতির ভেতর দিয়ে মঙ্গল পৃষ্ঠের মতই ভয়ানক এক ভাঙ্গাচুড়া পথে চলতে শুরু করলো। ২১ কিলোমিটারের মাঝে সেই দুই কিঃমিঃ রাস্তাই আমাদের ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার রানীর মত হাড় মুড়মুড়ি ব্যারাম বানিয়ে ছাড়লো। তারপরই তো রানওয়ের মত ঝাঁঁ চকচকে মেরিন ড্রাইভ যার ডান দিকে সাগর থেকে উঠে আসা একের পর এক উর্মিমালার সৈকতে আছড়ে পরার পরিচিত দৃশ্যের দেখা পেলাম গন্তব্য পর্যন্ত ।


হোটেল টিউলিপের লাউঞ্জের ঝর্নার সাথে মিশে আছে সুনীল সাগর
দুপুর ১২টায় গিয়ে পৌছালাম হোটেল রয়েল টিউলিপের রিসেপশনে। ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে লাউঞ্জের সোফায় বসে আছি, সহ পর্যটক ডেস্কে কথা বলছে। অনেক সকালে উঠে রওনা দিয়েছি, চা খেতে পারি নি, প্লেনে নাস্তা দিয়েছিল, কিন্ত চা কফি ছিল না। অসহ্য যন্ত্রনায় মাথা ছিড়ে পরছিল, লাউঞ্জের এক পাশে দেখলাম চা /কফি স্ন্যাক্স বার, ভাবলাম এখানে এক কাপ চা খাই কিন্ত তাদের চায়ের দাম শুনেতো আমার আক্কেল গুড়ম। বললাম " গেটে ঢোকার সময় আমি বাইরে কতগুলো চা এর টং দোকান দেখে এসেছি, আমি ওখানে গিয়েই চা খাবো"। আমার কথা শুনে চমকে গিয়ে লোকটা জানালো তাদের চা নাকি ভীষন স্পেশাল, টং এর চা এর সাথে তুলনা করা ঠিক না!


সাগর সৈকত থেকে আমাদের হোটেল
যাই হোক এর মাঝেই আমার কর্তা মশাই এর ডাকাডাকি, কি ব্যপার ? গিয়ে শুনলাম দুপুর ২টায় রুম দেয়ার কথা থাকলেও তারা তখনি আমাদের রুম দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। আর রুমে আছে কমপ্লিমেন্টারি চা, কফি, পানি ইত্যাদি। শুনে আমি তাড়াতাড়ি রুমে গেলাম বেল বয়ের সাথে , প্রথমেই আমার চোখ চলে গেল ইলেকট্রিক কেটলি সাথে চা কফির আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্রে। তিনটা টি ব্যাগ দিয়ে কড়া করে এক কাপ চা খেয়ে বের হোলাম তাদের নিজস্ব বীচের দিকে।


স্বর্নালী ডাব ধরে আছে
নারিকেল বিথীর মাঝ দিয়ে বীচে যাবার রাস্তা। ছোট ছোট গাছগুলোতে স্বর্নালী ডাব ধরে আছে একেবারে হাতের নাগালে। গেট পেরিয়ে রাস্তার উলটো দিকে বীচ, তবে রাস্তার সমতল অনেকখানি জায়গা ইট বাধানো। তারপর সিড়ি নেমে গেছে সমুদ্র সৈকতে। এখন সুর্য্য মাথার উপর তাপ ছড়াচ্ছে, এ ছাড়া দুপুরের খাবার খাইনি। তাই তড়িঘরি ফিরে গেলাম রুমে বিকেলে আবার আসবো সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে।


এই বীচে ছাতা থাকলেও দৃষ্টিকে আটকে রাখেনি
লাবনী বীচে গত কয়েক বছর থেকে অসংখ্য পর্যটক আর সার সার ছাতার যন্ত্রনায় সমুদ্রের সেই বিশালতা চোখে পড়তো না। আর হকারের দৌরাত্ব তো আছেই। রয়েল টিউলিপের সংরক্ষিত বীচে সেই সব ঝামেলা না থাকায় চারটি দিন আমি মনের ভেতর আতিপাতি করে পুরনো সেই কক্সবাজারকে খুজে পেতে চেষ্টা করেছি।


লাবনী সৈকতের সেই ঝাউবন আজ বিলীন
মনে পড়ে অনেক বছর আগে একদিন আমরা তিন জোড়া সাগর প্রেমী মাত্র দুদিনের জন্য প্রথম গিয়েছিলাম কক্সবাজার। উঠেছি শহরের এক হোটেলে। বিকেল হতেই সাগর দর্শনে চলেছি, লাবনী বীচের কাছাকাছি আসতেই কানে ভেসে আসলো সাগরের উম্মত্ত গর্জন আর তার রূপ চোখে পড়লো হাতের বায়ে নিরিবিলি তিন চারটি ঝিনুকের দোকান পেরিয়ে আসার পর। জীবনে প্রথমবারের মত স্বচক্ষে দেখেছিলাম আদিগন্ত বিস্তৃত নীলাভ ধুসর এক আসল সমুদ্রকে। আভিভুত আমরা ছয় জন বিস্মাফারিত নয়নে তাকিয়ে দেখছি তার মোহনীয় রূপ। দৃপ্ত এক রাজকীয় ভঙ্গীমায় সাদা ফেনার মুকুট পরে একের পর এক ঢেউয়ের লহরী আছড়ে পরছে বেলাভুমিতে, আর সেই সাথে ফেলে যাচ্ছে নানা আঁকার আর নকশাঁর অজস্র ঝিনুক আর স্টার ফিশ। পরিস্কার নরম বালিতে হেটে বেড়ানো, খানিকটা পা ভেজানো আর পাশে ঘন ঝাউবন। কি অভুতপুর্ব সেইসব দৃশ্য আর মায়াময় পরিবেশের বর্ননা লিখে বোঝানো সম্ভব না।


সন্ধ্যার সাগরের ঢেউয়ের দোলনায়
সন্ধ্যের পর গিয়েছিলাম বার্মিজ মার্কেট বলে পরিচিত কিছু টিন শেড ঘরে। সনেকা মাখা কিছু বার্মিজ বিক্রেতা মেয়েদের কাছ থেকে কিনেছিলাম তাঁতে বোনা নকশী চাদর, হাঁঁড় দিয়ে তৈরী লবনদানী, কাঠের উপর সুক্ষ কারুকাজ করা ঘর সাজানোর জিনিস। সে সব সামান্য জিনিস নিয়ে কি উত্তেজনা আমাদের! কারটা বেশি সুন্দর কারটা ভালো হয়নি এই নিয়ে তর্ক। ঢাকায় ফিরে আসার পরও বহুদিন পর্যন্ত আমাদের মাঝে চলেছিল সাগরের সৌন্দর্য্য নিয়ে আলোচনা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সেই রূপ আজও আমার মনের গভীরে গেথে আছে।


সাগরে মিশে গেছে খাল
তারপর আর একবার শিশু পুত্রকে নিয়ে পাঁঁচদিনের জন্য এসেছিলাম কক্সবাজার। সকাল হলেই নিরিবিলি লাবনী বীচে আমাদের ছেড়ে দিয়ে ওর বাবা চলে যেত তার কাজে। প্রথম দিন থেকেই তিন চারটি ঝিনুক কুড়ানো ছেলে মেয়ে ছিল আমাদের খেলার সাথী। তাদের সাথে শুরু হতো সেই জনমানব শুন্য সুদীর্ঘ সৈকতে ছোট ছোট ঢেউয়ের গা ছুঁয়ে ছুটোছুটি খেলা, বালুকাবেলায় তখনো পরে থাকতো কিছু কিছু ঝিনুক তাই কুড়াতাম মনের আনন্দে, ভালোগুলো রেখে ভাঙ্গাগুলো ছুড়ে দিতাম সাগরের বুকে। কখনো বা বালুতে বসে চলতো বালুর দুর্গ গড়া । দুপুর হলে আস্তে আস্তে পাহাড়ের উপর সার্কিট হাউজে ফিরে আসতাম। সেই শান্ত নিরিবিলি ঝাউগাছ ঘেরা সমুদ্র সৈকত কোথায় গেল সেই সব !


ঝাউবন
এরপর আমি চৌদ্দ থেকে পনের বার গিয়েছি টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন মিলিয়ে কক্সবাজার, ভ্রমনে। আর প্রতিবারই বিষন্ন মনে দেখেছি লক্ষ পর্যটকের পদভারে দলিত মথিত সৈকতের মলিন থেকে মলিনতর রূপ। মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু তার কাছ থেকে অঞ্জলি ভরে আমরা নিয়েই গিয়েছি,ফিরিয়ে দেইনি কিছুই। তার সেই ক্ষয়ে যাওয়া দেহ আর মলিন চেহারাকে ঘষে মেজে কিছুটা জেল্লা ফেরানোর অবকাশ দেইনা তাকে। বড় স্বার্থপর পর্যটক আমরা।

বঙ্গোপসাগর ও টিউলিপ হোটেল থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে শাপলাপুর ও তার আশে পাশের কিছু ছবি রইলো যা আমার ফোন থেকে তোলা ।


টিউলিপের নিজস্ব সী বীচ


বাঁধানো সৈকত


একাকী গাছ


হোটেল রুম থেকে সাগর দেখা


হোটেলের পেছনে অগুনতি সুপারীর বন


শাপলাপুরের পথে ব্রীজ থেকে তোলা সাগর ও তার আশপাশ


রাস্তার পাশে বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে গরু মহিষের দল


মেরিন ড্রাইভ


গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ কোথায় চলে গেছে কে জানে


সাগরের কোল ঘেষে জেলেদের অস্থায়ী বসতি


গুটিয়ে রাখা জাল


সাম্পান বানাচ্ছে সাগরে যাবার জন্য


রাতের যাত্রার জন্য প্রস্ততি


রাস্তার পাশে পানের বরজ


সেই চিরপরিচিত শুটকির বাজার,শাপলাপুর


কিনেছি এখান থেকে কিছু ছুরি শুটকি


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৭
৪৩টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×