somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ বিদেশের টুকরো কাহিনী

০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহান টাঙ্গাওয়ালা আবু কারিম
মিশরের লুক্সরের ঘটনা। আমাদের গাইড বলে দিয়েছিল আমরা যেন ভোর সকালে উঠে নিজে থেকে এডফুর মন্দিরটি দেখে নেই। কারন সকালের নাস্তার পর আমাদের জাহাজ আসোয়ানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। হুটোপাটি করে ভোর ভোর উঠে জাহাজ থেকে নিজস্ব জেটিতে নামতেই এক টাঙ্গা। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন শুনলাম চালকের নাম আবু কারিম । কারন সারা মিশরে যত লোকের সাথে পরিচিত হয়েছি তার আশি ভাগ লোকের নামই আহামাদ না হলে মোহাম্মাদ । যাই হোক টাঙ্গায় আমরা দুজন উঠে বসলাম। কুয়াশা কুয়াশা ঘেরা নীল নদীর পাড়, দুপাশে বাগান করা একতালা বাংলো বাড়ী, নিরিবিলি রাস্তা। এদিকে বেশ শান্তশিষ্ট মনে হলো আমাদের শকটের ইঞ্জিনটিকে। আবু কারিমকে বললাম, "আমাকে তোমার টাঙ্গাটা একটু চালাতে দিবে"? সে সোৎসাহে রাজী হলো আর আমার হাতে দড়িটা তুলে দিল। অল্প দুরেই গন্তব্যে পৌছানোর পর আবু কারিম আমাকে ইংরাজীতে বল্লো ' ইউ আর দ্যা ফাস্ট লেডী হু ড্রোভ মাই হর্স, দ্যা কুইন অফ দ্যা নাইল তার চোখের ভাষায় যুগপৎভাবে ফুটে উঠছে এক অহংকার সেই সাথে আমার প্রতি তার এক অগাধ দাক্ষিন্য বর্ষন। আমি ভালো করে চেয়ে দেখলাম তার টাঙ্গার ইঞ্জিনটা একেবারেই ঘোড়ার মত লাগলো না, লাগলো ঠিক একটি গাধার মত !


কিংস ভ্যালির পাশ দিয়ে যাওয়া এই প্রানীটির মতই অবিকল আবু কারিমের ঘোড়াটা !!


আমাদের কেবিনের সামনে এই সিড়ি দিয়ে উঠলেই ডান দিকে ডাইনিং
মাছ ভাজা ঃ-
এটাও সেই মিশরের নৌ বিহারের ঘটনা । সমস্ত বেলার খাওয়া দাওয়া ছিল বুফে। আমি দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি যেই মাছ ভাজাটা আমি পছন্দ করি সেটা শেষ । আমি অন্যান্য খাবার নিয়ে খাচ্ছি তখনি মাস্টার সেফ আমার জন্য এক প্লেট মাছ ভাজা এনে আমার টেবিলে এসে আমার হাতে তুলে দিল বিশাল এক হাসি দিয়ে। কখন সে খেয়াল করলো আমি মাছ ভাজা খুজেছি। আমি বিস্মিত হয়েও তাকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছি শুধুমাত্র আমার একার জন্য এতটা করেছে জেনে। নাহলে আমাদের সাথে হলিউডের এক নামজাদা অভিনেতাও তো ছিল।


দূরে ঘুমানোর আয়োজনে ব্যাস্ত আমি, অদুরে জাপানী দম্পতি
শীতের কম্বলঃ-
মিশরের বাহারিয়া মরুভুমিতে রাত, অত্যন্ত ক্লান্ত আমি খেয়ে দেয়ে বালুর উপর ফোম বিছিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। মাঝরাতে সেই গভীর ঘুম ভেঙ্গে গেল শীতের দাপটে । কুকড়ি মুকরি দিয়ে যখন আবার ঘুমানোর চেষ্টা করছি সেসময় অনুভব করলাম কে যেন আমার পাশে দাঁড়ানো। অল্প চোখ মেলতেই দেখি আমাদের সাফারীর ড্রাইভার কাম গাইড আহামাদ হাতে একটা কম্বল নিয়ে দাঁড়িয়ে, তারপর আস্তে আস্তে আমাদের ঢেকে দিয়ে গেল উষ্ণ এক বালুময় কম্বল দিয়ে । সে কিন্ত আমাদের থেকে অনেক দূরে ছিল তারপরও তার স্নেহ দৃষ্টি সবার উপরেই ছিল ।


রামা ১ ব্রীজের পাশে রাজা ভুমিবলের চিতার রেপ্লিকা
হাত বাড়ানো ঃ- থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে । সারাদেশ জুড়ে সেই চিতাপীঠের অনেকগুলো রেপ্লিকা তৈরী হয়েছিল, তার একটি ছিল চাও-প্রায়া নদীর ধারে প্রথম রামা ব্রীজের কাছে। সেটার পাশেই ব্যংককের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজারের ফুল বিক্রেতারা অনিন্দ্য সুন্দর ভাবে ফুল দিয়ে সেখানে রাস্তাঘাট সাজিয়েছে । আমি এটা দেখার জন্য বাসে করে রওনা দিয়েছি । গন্তব্যের আগের বাস স্টপেজে বাস থামলে আমি একজনের কাছে জানতে চাইলে সে বল্লো না পরের স্টপেজ যেটা লাস্ট স্টপেজ। সেখানে আসতেই মেয়েটি আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে বাস থেকে নামিয়ে আনলো তারপর ধরে ধরে রাস্তা পার করালো ( বিশ্বাস করেন হাত ধরে খালি রাস্তা পার করে দেবার মত এত বুড়ো হইনি আর সেই রাস্তায় গাড়ী চলাচল বন্ধ ছিল, আমি সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও গাড়ীর নীচে পড়তাম না এইটা শিওর কইলাম) :`> তারপর নির্ধারিত যায়গায় এসে আমার হাত ছেড়ে মাথা ঝুকিয়ে বল্লো আমার কি আর কোন সাহায্যের দরকার আছে? আমি কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানিয়ে হাসি মুখে বললাম "এখন আমি নিজেই সব দেখে শুনে নিতে পারবো"।

বিপরীত চিত্রঃ- হাত বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনার কিছু দিন পরে এক শপিং মলে দোতলা থেকে একতালায় শেষ ছোট সিড়িটি নজরে না আসায় সোজা পপাত ধরনীতল । করিডোরের পাশেই একটা ট্যুর অপারেটরের দোকান সেখানে চার পাচজন কর্মী তো ছিলই এছাড়া গোটা বিশেক লোক আমার পাশ দিয়ে এপার ওপার করলো । আমি পরে আছি খবর নেই। কেউ জিজ্ঞেশ পর্যন্ত করলো না কি হয়েছে। একটু পরে অসহ্য ব্যথা নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে সামনে বসার যায়গায় গিয়ে বসলাম। হাটুর হাড়টা মনে হয় ভেঙ্গেই গিয়েছে এই অবস্থা, করকর করছিলো। মনে মনে ভাবছিলাম যখন আমার সাহায্যের দরকার ছিলো না তখন আমার হাত ধরে রাস্তা পার করে দাও আর এখন যখন আমার সত্যি সাহায্যের দরকার তখন :(
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬
৩৯টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×