
মানুষের জীবনটা ছোটো হলেও যে কয়টি পর্বে বিভক্ত তার প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভাবে দেখলে অনেক লম্বাই মনে হয়। অন্তত এই মুহুর্তে তেমনটিই মনে করছে রাকিব। এটা তার ছোটো নাম, পুরোটা রাকিবুল হাসান। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রথম কর্মজীবন,বিয়ে,তারপর..., তার পর করতে করতে এক সময় তার আর পর নেই। এই সব নানান বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে পার্কের সরু রাস্তা ধরে প্রতিদিনের মত মর্নিং-ওয়াক করতে করতে চিন্তার গভীরে হারিয়ে যাচ্ছিল সে। আজ মনটা তার খুব বিষণ্ণ। গতরাতে ছেলের সাথে একটু, নাহ একটু না ভালই রাগারাগী হয়েছে।নিজেকে খুব অপমানিত বোধ করছে, বিশেষ করে ড্রাইভারের সামনে উঁচুস্বরে সরাসরি কথার প্রত্যাখান, যা চরম বেয়াদবি বলেই রাকিবের কাছে মনে হয়। আর এটা আজই প্রথম নয়। ছেলের বয়সটা যদি টিন-এজ হতো এতটা লাগতো না। কিন্ত সেতো বিবাহিত যুবক। দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির শিকার। তার উপর হয়ত খুব স্ট্রেসে আছে। রাকিব মনটাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতে করতে তার নিজের এই বয়সের কথাগুলো স্মৃতি থেকে টেনে আনতে চেষ্টা চালালো। “নাহ, আমি তো ওই বয়সে ছেলের চেয়ে বেশিই করেছিলাম! ”হটাৎ তার বাবার কথা মনে আসতেই চোখটা ভিজে গেল। অনেক কঠোর ব্যবহার করেছে রাকিব তার বাবার সাথে। তখন চিন্তা করার সুযোগ হয়নাই কিংবা তার বাবার কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা দেখারও সময় ছিল না। এখন স্মৃতির পাতায় যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার বাবার অসহায়,অন্ধকার গ্লানি মাখানো মুখটা। ঠিক কল্পনা করতে পারছে তার বাবা তখন কি ভাবতো, কি করত। পাশে বসে মায়ের বলা রুটিন সান্ত্বনা বাক্যগুলো শুনে যেত যেমনটি রাকিবের স্ত্রী এখন করে। কিন্তু স্মৃতির কোথাও পেলোনা তার বাবা তাকে কঠিন ভাষা প্রয়োগ করে তিরস্কার করেছে। শুধু মনে আসছে তার কথাগুলো শুনে একদম চুপ থেকে আস্তে করে মাথাটা নিচু করে ফেলেছে। তার পরবর্তী অবস্থা রাকিবের দেখার সুযোগ কখনো হয় নাই কারণ ততক্ষণে সে স্থান ত্যাগ করত। রাকিবের ভেজা চোখ আরো খানিক্ টা ভিজে উঠল।
ভাবতে ভাবতে তার মনেই নেই প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে সে হাটছে। হাটার কথা ৪৫ মিনিট। রাকিবের চিন্তায় ছিল ছেলেকে কঠিন ভাষায় কিছু বলবে। বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবলো, ছেলের এই ব্যবহার তো তার প্রাপ্য।
ছবি সুত্র নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



