আজ বাংলা ১৪২৫ সালের পৌষের তিন তারিখ চলে গেল। পহেলা পৌষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে “শীতকাল”। প্রকৃত অভিজ্ঞতায়ও পহেলা পৌষেই অর্থাৎ ১৫ই ডিসেম্বরের সকাল থেকেই এ বছরে প্রথমবারের মত একটু শীত শীত আমেজ অনুভব করছিলাম। এর আগে শীত এসেছে বা আসছে বলে মনেই হয়নি। পরের দু’দিন সামান্য একটু একটু করে শীতের মাত্রাটা বেড়েছে। গতকাল ছিল বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয় দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী। যে এলাকায় থাকি, সেখানের নির্বাচিত পরিষদ কর্তৃক বিজয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছিল এবং এতদুপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ফিরিস্তি আগে ভাগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আগের রাতে একটা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে স্মরণিকাও দেয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও দোয়া অনুষ্ঠানে এবং বিজয় rally তে অংশ গ্রহণ করি। rally'র এক পর্যায়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। মনে মনে ভাবলাম, এই বুঝি rally টা পন্ড হয়ে যায়! তবে যাক, শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিটা আর আসেনি, ফোঁটায় ফোঁটায় কিছুক্ষণ ঝরে তা একসময় থেমে যায়।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশটা মেঘলা, চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন, শীতের আমেজও একটু বেশী। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, বড় বড় গাছের পাতাগুলো একটু একটু হেলছে, দুলছে- অর্থাৎ একটু একটু বাতাস বইছে। একটু বাইরে যাওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু আবহাওয়ার প্রভাবে কিছুটা আলস্য বোধ করায় তা স্থগিত করলাম। ইচ্ছে ছিল, এমন চমৎকার একটা আবহাওয়ায় ঘরে বসে বসেই কিছু একটা লিখবো, নয়তো ভাল একটা বই বের করে পড়া শুরু করবো। কিন্তু দুটোর কোনটাই করতে পারলাম না। কিসের যেন একটা চঞ্চলতা, একটা অস্থিরতা অনুভব করতে থাকলাম। এরকম হলে আমি সাধারণতঃ কবিতা পাঠের আশ্রয় নেই। তাই করলাম। নিজেরই লেখা কিছু পুরনো কবিতা পড়লাম। একটা ভাল লাগা কবিতা কয়েকবার আবৃত্তি করলাম। ভাল লাগলো। দুপুরের দিকে হাল্কা বৃষ্টি ঝরা শুরু হলো, ফলে শীতের মাত্রাটাও বেড়ে গেল। এমন দিনে আমার সবসময় খিচুরি খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আজ গিন্নীর দু’জন বাল্যবান্ধবী এসে ওনাকে নিয়ে তিনজন মিলে একটি পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রামে বেড়াতে যান। ফলে বাসায় খিচুরির সে বন্দোবস্ত আর হয়নি, তবে যাওয়ার আগে উনি পাবদা মাছ রান্না করে গিয়েছিলেন। খেতে বসে দেখলাম, সেটা খুবই সুস্বাদু হয়েছে। সুতরাং খিচুরির আফসোস আর থাকেনি।
ঋতু হিসেবে শীতের আনুষ্ঠানিক আগমনের মাত্র দুই দিন আগে আমার জন্ম হয়েছিল, তাই হয়তো শীতকালটা সেই ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয় ঋতু। ছোটবেলায় তা ভাল লাগার একটা বড় কারণ ছিল স্কুল ছুটি এবং লম্বা বার্ষিক ছুটিতে নানাবাড়ী দাদাবাড়ী ভ্রমণ। তখনকার দিনে এখনকার মত বার্ষিক পরীক্ষার পর কোচিং ইত্যাদির কোন প্রয়োজন ছিল না, উপরের ক্লাসের পড়াশুনা ছুটির মধ্যে কিছুটা এগিয়ে রাখারও তেমন তাগিদ ছিল না। তাই বার্ষিক পরীক্ষার পর বহুদিন ধরে কাজিনদের সাথে হৈ হুল্লোড় করে নির্ভেজাল আনন্দে নিজেকে রিফ্রেশ করার সুযোগ ছিল। শীত ভাল লাগার আরেকটা কারণ ছিল শীতের পোষাক। বিকেলে সেজে গুজে পাড়ার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলতে ভাল লাগতো। আম্মার নিজ হাতে বোনা শীতের সোয়েটার কিংবা মাফলার পরাতেও একটা ভাল লাগার অনুভূতি ছিল। এখন অবশ্য শীতের সাথে সাথে আর বাকী সব ঋতুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে আমার চোখে ধরা দেয়। এমনকি হেমন্তের মত একটা হ্রস্ব ঋতুও আমাকে তার আগমনী জানান না দিয়ে বিদেয় নেয় না।
আগাম সতর্কবাণী ছিল, এবারে শীতের প্রকোপ আগের অন্যান্য বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশী হবে। মনে হচ্ছে, তাই হবে। উত্তরবঙ্গের শীতার্ত মানুষগুলোর কথা ভেবে কষ্ট হয়। আগে যখন বয়স কম ছিল, নিজেই উদ্যোগ নিতাম শীতার্ত অথবা বানভাসি মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর। এখন আর তা সম্ভব হয় না। তবে পৌষের প্রথম দিনেই একটা পুরনো সংগঠন থেকে আবেদন পেলাম, শীতার্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য। বছর পাঁচেক আগে একবার তাদের কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়েছিলাম। খুশী হ’লাম জেনে যে ওরা আমাকে ভুলে যায়নি। আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এবারেও ওদের কাজে যতটা পারি, সম্পৃক্ত হবো।
ঢাকা
০৩ পৌষ ১৪২৫
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫