somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৌষের দিনলিপি

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বাংলা ১৪২৫ সালের পৌষের তিন তারিখ চলে গেল। পহেলা পৌষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে “শীতকাল”। প্রকৃত অভিজ্ঞতায়ও পহেলা পৌষেই অর্থাৎ ১৫ই ডিসেম্বরের সকাল থেকেই এ বছরে প্রথমবারের মত একটু শীত শীত আমেজ অনুভব করছিলাম। এর আগে শীত এসেছে বা আসছে বলে মনেই হয়নি। পরের দু’দিন সামান্য একটু একটু করে শীতের মাত্রাটা বেড়েছে। গতকাল ছিল বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয় দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী। যে এলাকায় থাকি, সেখানের নির্বাচিত পরিষদ কর্তৃক বিজয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছিল এবং এতদুপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ফিরিস্তি আগে ভাগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আগের রাতে একটা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে স্মরণিকাও দেয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও দোয়া অনুষ্ঠানে এবং বিজয় rally তে অংশ গ্রহণ করি। rally'র এক পর্যায়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। মনে মনে ভাবলাম, এই বুঝি rally টা পন্ড হয়ে যায়! তবে যাক, শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিটা আর আসেনি, ফোঁটায় ফোঁটায় কিছুক্ষণ ঝরে তা একসময় থেমে যায়।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশটা মেঘলা, চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন, শীতের আমেজও একটু বেশী। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, বড় বড় গাছের পাতাগুলো একটু একটু হেলছে, দুলছে- অর্থাৎ একটু একটু বাতাস বইছে। একটু বাইরে যাওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু আবহাওয়ার প্রভাবে কিছুটা আলস্য বোধ করায় তা স্থগিত করলাম। ইচ্ছে ছিল, এমন চমৎকার একটা আবহাওয়ায় ঘরে বসে বসেই কিছু একটা লিখবো, নয়তো ভাল একটা বই বের করে পড়া শুরু করবো। কিন্তু দুটোর কোনটাই করতে পারলাম না। কিসের যেন একটা চঞ্চলতা, একটা অস্থিরতা অনুভব করতে থাকলাম। এরকম হলে আমি সাধারণতঃ কবিতা পাঠের আশ্রয় নেই। তাই করলাম। নিজেরই লেখা কিছু পুরনো কবিতা পড়লাম। একটা ভাল লাগা কবিতা কয়েকবার আবৃত্তি করলাম। ভাল লাগলো। দুপুরের দিকে হাল্কা বৃষ্টি ঝরা শুরু হলো, ফলে শীতের মাত্রাটাও বেড়ে গেল। এমন দিনে আমার সবসময় খিচুরি খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আজ গিন্নীর দু’জন বাল্যবান্ধবী এসে ওনাকে নিয়ে তিনজন মিলে একটি পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রামে বেড়াতে যান। ফলে বাসায় খিচুরির সে বন্দোবস্ত আর হয়নি, তবে যাওয়ার আগে উনি পাবদা মাছ রান্না করে গিয়েছিলেন। খেতে বসে দেখলাম, সেটা খুবই সুস্বাদু হয়েছে। সুতরাং খিচুরির আফসোস আর থাকেনি।

ঋতু হিসেবে শীতের আনুষ্ঠানিক আগমনের মাত্র দুই দিন আগে আমার জন্ম হয়েছিল, তাই হয়তো শীতকালটা সেই ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয় ঋতু। ছোটবেলায় তা ভাল লাগার একটা বড় কারণ ছিল স্কুল ছুটি এবং লম্বা বার্ষিক ছুটিতে নানাবাড়ী দাদাবাড়ী ভ্রমণ। তখনকার দিনে এখনকার মত বার্ষিক পরীক্ষার পর কোচিং ইত্যাদির কোন প্রয়োজন ছিল না, উপরের ক্লাসের পড়াশুনা ছুটির মধ্যে কিছুটা এগিয়ে রাখারও তেমন তাগিদ ছিল না। তাই বার্ষিক পরীক্ষার পর বহুদিন ধরে কাজিনদের সাথে হৈ হুল্লোড় করে নির্ভেজাল আনন্দে নিজেকে রিফ্রেশ করার সুযোগ ছিল। শীত ভাল লাগার আরেকটা কারণ ছিল শীতের পোষাক। বিকেলে সেজে গুজে পাড়ার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলতে ভাল লাগতো। আম্মার নিজ হাতে বোনা শীতের সোয়েটার কিংবা মাফলার পরাতেও একটা ভাল লাগার অনুভূতি ছিল। এখন অবশ্য শীতের সাথে সাথে আর বাকী সব ঋতুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে আমার চোখে ধরা দেয়। এমনকি হেমন্তের মত একটা হ্রস্ব ঋতুও আমাকে তার আগমনী জানান না দিয়ে বিদেয় নেয় না।

আগাম সতর্কবাণী ছিল, এবারে শীতের প্রকোপ আগের অন্যান্য বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশী হবে। মনে হচ্ছে, তাই হবে। উত্তরবঙ্গের শীতার্ত মানুষগুলোর কথা ভেবে কষ্ট হয়। আগে যখন বয়স কম ছিল, নিজেই উদ্যোগ নিতাম শীতার্ত অথবা বানভাসি মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর। এখন আর তা সম্ভব হয় না। তবে পৌষের প্রথম দিনেই একটা পুরনো সংগঠন থেকে আবেদন পেলাম, শীতার্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য। বছর পাঁচেক আগে একবার তাদের কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়েছিলাম। খুশী হ’লাম জেনে যে ওরা আমাকে ভুলে যায়নি। আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এবারেও ওদের কাজে যতটা পারি, সম্পৃক্ত হবো।


ঢাকা
০৩ পৌষ ১৪২৫
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫
২৭টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×