এর আগের পর্বটি দেখতে পাবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপি-৯ ... ব্রাইটন বীচের বেলাভূমিতে এক সন্ধ্যায়
আলহামদুলিল্লাহ, মেলবোর্নে আসার পর থেকে খুবই প্রশান্তিময় দিন কাটাচ্ছি। সংসারের কোন ঝামেলা নেই, কোন দায় দায়িত্ব নেই, ইচ্ছেমত সময় কাটাতে পারছি আমরা দু’জন। ছেলে এবং বৌমা যতক্ষণ কাজে থাকে, আমরা ততক্ষণ ইচ্ছেমত ফেইসবুকিং করি আর ছবি আপলোড করি, আমি ব্লগিং এবং কিছু অন্যান্য লেখালেখিও করি। ওরা ফিরে আসতে আসতে কখনো বিকেল, কখনো সন্ধ্যা, কখনো রাত হয়। ওরা ফিরে এলে কখনো কখনো ওদের সাথে চা-টা খাই, সময় থাকলে আশে পাশের সৈকতে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে ঘরে ফিরে আসি। সপ্তাহান্তের ছুটিতে দূরে কোথাও যাই। অন্যান্য দিনের বিকেলগুলোতে আমরা দু’জনে হাঁটতে বের হই। এখানকার আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূল হওয়ায় (খুব বেশী শীত এখনো পড়ে না, বৃষ্টিও তেমন হয় না, হলেও বেশীক্ষণ ধরে হয় না) নিরিবিলি রাস্তা ধরে হাঁটাটাই প্রভূত আনন্দদায়ক। হাঁটতে হাঁটতে কখনো ছবি তুলি, পাখি দেখি, পাখির কাকলি শুনি। যত ছোটই হোক, প্রতিটি পথের একটা করে নাম আছে, আমি সে নামগুলোও পড়ি! ১৩ ও ১৪ জানুয়ারীতে হাঁটাহাঁটির সময়ে তোলা এরকম কিছু ছবি এখানে দিলাম।
১৪ জানুয়ারী বিকেলে আমরা মুরাব্বিন রেল-স্টেশন এর এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে ‘কিংস্টন সিটি হল’ এর আশপাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করি। এই সিটি হলগুলো অনেকটা আমাদের জেলাশহরের টাউন হলের মত। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, নগরপালের সভাসমিতি হয়, নতুন নাগরিকত্ব প্রাপ্তদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ করানোর পর এখানেই নাগরিকত্ব সনদপত্র প্রদান করা হয়। এখানে নাগরিকদের পড়াশোনার জন্য ভাল পাঠাগার রয়েছে, চিত্র প্রদর্শনীর জন্য উন্নত মানের আর্ট গ্যালারী রয়েছে। সূর্য ডোবার তখনো ৩০/৪০ মিনিট বাকি ছিল। আমরা সেই পড়ন্ত আলোতেই কিছু ছবি তুললাম। সিটি হল সংলগ্ন ওভারপাস থেকে মুরাব্বিন স্টেশনে আগমনকারী কিছু ট্রেনের ভিডিও চিত্র ধারণ করলাম।
১৫ জানুয়ারীঃ আজ আমার ভাতিজা শাহেদের জন্মদিন। জন্মদিনের কথা আমার সাধারণতঃ মনে থাকে না, কিন্তু ওরটা কেন জানি সকালেই মনে পড়লো, তাই ওকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানালাম। আমার ফোন পেয়ে ও মনে হয় একটু অবাকই হলো। আকাশটা তখনো ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। দাবানলের ধোঁয়া এ পর্যন্ত চলে এসেছে। কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে টেবিলে ফিরে এসে লিখতে বসলাম। দুপুরে বেশ গরম ছিল, তবে সহনীয়। বিকেল চারটার পর মেঘের গর্জন ও সেই সাথে বিজলি চমকানো শুরু হলো, তারপর বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা অনেকটা কমে এলো। এখানে এমনই হয় তা আসা অবধি দেখছি। সকাল-দুপুরে কিছুটা গরম থাকলেও, বিকেল নাগাদ শীত শীত ভাব চলে আসে। বাতাসও থাকে প্রায় সময়। বাতাস থাকলে একটা সোয়েটার কিংবা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে বের হতে হয়।
বিকেল সাতটার দিকে ব্যালকনিতে বসে আমরা চারজনে মিলে নাগেটস আর কফি খেলাম। তখনও হাল্কা বৃষ্টি ঝরছিলো, বিদ্যুৎও চমকাচ্ছিল। আমরা বাংলাদেশের বৈকালিক বৈশাখী ঝর বৃষ্টির আমেজ অনুভব করছিলাম। আগামীকাল সকালে বেয়াই-বেয়াইন ঢাকার উদ্দেশ্যে মেলবোর্ন ছেড়ে চলে যাবেন। ওনারা বেশ বিচক্ষণতার সাথে মোট ১৮ দিন ছুটিকে সমানভাবে দু’ভাগ করে ওনাদের মেয়ের বাসায় ৯ দিন আর ছেলের বাসায় ৯ দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর ছেলে ও বৌমা ওনাদের সাথে দেখা করার জন্য তুষার (বৌমার ভাই) এর বাসায় যাবে, তার প্রস্তুতি কিছুটা আগে থেকেই নেয়া শুরু করলো। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে বের হই। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেদিন আর হাঁটতে যাওয়া হলো না।
ঢাকা
৩০ মে ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৪৭২
যত ছোটই হোক, প্রতিটি পথের একটা করে নাম আছে, আমি সে নামগুলোও পড়ি!
১৪ জানুয়ারীর পড়ন্ত বিকেল
মুরাব্বিন স্টেশনের এ্যাপ্রোচ লাইন
স্বব্যাখ্যাত
স্বব্যাখ্যাত
মুরাব্বিন বোলিং ক্লাব
বিকেলের আলোয়
'কিংসটন সিটি হল' এর সম্মুখে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০৮