somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আতিথেয়তা

০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাসায় একজন ডমেস্টিক এইড একটানা প্রায় ৭/৮ বছর কাজ করেছিলেন। তার নাম মর্জিনা বেগম। তিনি বয়স্কা ছিলেন, তবে তার সঠিক বয়সটা তিনি অনুমান করেও বলতে পারতেন না। শুধু এটুকু বলতে পারতেন যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি অনেক ছোট ছিলেন, সে সময়ের কোন স্মৃতি তার মনে নেই। বছর পরিক্রমায় তখন তার মেয়ের ঘরে নাতি নাতনিও আছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম, তখন তার বয়স হয়তো পঞ্চাশ হবে, কিংবা তার কিছু কম বা বেশি। মেয়ের সাথে তার সদ্ভাব ছিল না, তাই মেয়েকে বিয়ে দেবার পর ডমেস্টিক এইড হিসেবে কাজ করে তিনি নিজের জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নেন।

তিনি স্বল্পাহারী ছিলেন, কিন্তু প্রচুর পান খেতেন। আমাকে বাজার যাওয়ার জন্য তৈরি হতে দেখলেই তিনি তার পান-শুপারি-চূণ-জর্দার ফরমায়েশ জানিয়ে রাখতেন। বাজারে যাওয়া-আসার পথে একটি পানের দোকান ছিল, সেখানেই তার ফরমায়েশের সকল উপকরণ পাওয়া যেত। তাকে আমি জর্দাটা বাদ দিতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি সেটাতে এতটাই আসক্ত ছিলেন যে তিনি আমার অনুরোধ রক্ষা করতে পারেন নি। তার হাতে জর্দার কৌটা তুলে দিবার সময় প্রতিবারই আমি তাকে স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিতাম। তিনি তার মাসিক বেতন পুরোটাই আমাদের কাছে জমা রাখতেন। দুই এক বছর পর পর ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবার সময় তিনি একসাথে তার জমানো বেতনের সব টাকা নিয়ে যেতেন। তিনি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের থেকে একেবারে বিদায় নিয়ে বেশ ভালো একটা এমাউন্টসহ স্থায়ীভাবে থাকার জন্য নিজ বসতবাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যান।

যে দোকানটি থেকে আমি তার জন্য পান শুপারি এবং অন্যান্য উপসঙ্গ ক্রয় করতাম, বেশ ঘনঘন যাতায়াতের সুবাদে সেই পানওয়ালার সাথে আমার বেশ ভালো আলাপ পরিচয় হয়ে যায়। তার নাম মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায়। মর্জিনা বেগম চলে যাবার পর থেকে আমার আর সে দোকানে যাবার প্রয়োজন হতো না। তবুও যেহেতু তার দোকানটি বাজারে যাওয়ার পথেই ছিল, মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হলে আমি একটু থেমে দু'চারটি কথা বলে নিতাম। মাঝখানে কয়েক মাস ধরে তাকে দেখিনি, তার জায়গায় অন্য কেউ একজন দোকানে বসতো। তাদেরই একজনের কাছে আমি একদিন তার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, দোকানে বসার মত অবস্থায় নেই। এরই মাঝে এ মাসের প্রথমদিকে একদিন আমি তাকে পুনরায় দোকানে বসা অবস্থায় দেখতে পেলাম। তাকে দেখে মোটেই অসুস্থ মনে হচ্ছিল না, বরং বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল।

আমাকে দেখে তিনি বললেন, "স্যার অনেকদিন পরে আইলেন, কেমুন আছেন?" আমি ভালো আছি জানিয়ে তাকে তার অসুস্থতার কথা জিজ্ঞস করাতে তিনি একগাল হেসে বললেন, "স্যার আমার অনেক রোগ, কোনটা রাইখা কোনটার কথা কমু? ব্লাড প্রেসার, ডাইবেটিজ, বাত, চোখের অসুখ, সবই আছে। তবে একেবারে কানা হইবার লাগছিলাম, তাই সব ছাইড়া আগে চোখটারেই অপারেশন করাইলাম। এখন খুব ভালো দেখি।"

যেদিন তার সাথে আমার এই কথোপকথন হচ্ছিল, কাকতালীয়ভাবে তার ঠিক তিন দিন পরে আমার নিজের চোখেও ফ্যাকো সার্জারির দিন নির্ধারিত ছিল। তাই আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলাম। আমার আগ্রহ দেখে তিনি উৎসাহের সাথে তার পূর্বাপর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন। আমি মন দিয়ে শুনলাম। আমার আগ্রহ লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞাসু চোখে জানতে চাইলেন, "ক্যান স্যার, আপনেও অপারেশন করাইবেন নাকি?" আমি হ্যাঁ বলাতে তিনি আরও উৎসাহ নিয়ে বললেন, "স্যার, একদম সহজ অপারেশন। কিচ্ছুই ট্যার পাইবেন না। অপারেশনের পর চোখ খুইল্যা দ্যাখবেন, সবকিছু ফকফকা পরিষ্কার!"

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসার সময় তিনি আতিথেয়তার সুরে বললেন, "স্যার, অনেকদিন পরে আইলেন। আপনে তো পান খান না, খাইলে নয় ভালো কইরা একটা পান বানাইয়া দিতাম। তয় আমার কাছে ভালো শবরি কলাও আছে। না হয় দুইটা কলা খায়্যা যান?"

ঢাকা
০৪ অগাস্ট ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৫০৭


চোখের কোথায় ডাক্তার ইঞ্জেকশন দিয়েছিল, সেটা তিনি আমায় দেখাচ্ছিলেন।
ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০২৫
দুপুর ১৫ঃ০৫


আগ্রহী কথকের মনযোগী শ্রোতা
ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০২৫
দুপুর ১৫ঃ০৫


আমার কোন একটা কথা শুনে তিনি এভাবেই হেসে উঠেছিলেন....
ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০২৫
দুপুর ১৫ঃ০৫
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:২৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×