somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৮

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব-
মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৭

জমি চাষ, মই

তখন সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো এক দিন। রবিবার। শনিবার সন্ধ্যায় আব্বা বাড়ী আসতেন। সোমবার ভোরে চলে যেতেন। ধানের মৌসুমে আব্বা রবিবারের সাথে দু'একদিন ছুটি নিতেন। মাঠের বেশিরভাগ জমি বর্গা দিতেন। বাড়ির সামনে পেছনের ভিটি জমিগুলো আর বাড়ির পাশের জমিগুলো আব্বা নিজেই চাষ করতেন। এটা ছিলো তাঁর শখের কাজ। এক জোড়া বিশালাকৃতির ষাঁঢ় ছিলো হালের জন্য। দু'টোই টকটকে লাল। দৈহিক আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে মেজাজও ছিলো সেই রকম। কাউকে পছন্দ না হলে তাড়া করতো শিং নামিয়ে। আমরা রীতিমতো সমঝে চলতাম তাদেরকে। ষাঢ়, গাভী, বাছুর সবমিলে ছয়/সাতটি গরু ছিলো আমাদের। তারজন্য ছিলো একজন বছর-চুক্তির রাখাল। জমিজমার জন্য ছিলো আরো একজন। ওরা থাকতো বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে। সেই কাচারির দুটি অংশ। একটায় খাট, টেবিল, চেয়ার দিয়ে সাজানো ছিলো বিশিষ্ট মেহমানদের জন্য। আরেকটা অংশে বাড়ির কাজের লোকেরা থাকতো।

আব্বা যেদিন জমি চাষ করতেন আমরা ভাইবোনের দল ক্ষেতের কাছে দাঁড়িয়ে মজা দেখতাম। সেই ভাইবোন বাহিনীতে আমি বড়ো ছিলাম বলে আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব ছিলো। কাঠের হাতলওয়ালা একটা ছোট কোদাল ছিলো। সেটা দিয়ে চাষের ফলে উল্টে আসা মাটির বড়ো টুকরাগুলো ভেঙে ছোট করে দেওয়া। এই কাজ করার সময় বেখেয়ালে একটু দেরি করে ফেলেছিলাম। আব্বা ততক্ষণে লাঙল নিয়ে ঘুরে চলে এসেছেন। আমি পড়ে গেলাম হালের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ষাঁঢ় আমাকে পেটের নীচ দিয়ে শিংয়ের মাথায় তুলে দূরে ছুঁড়ে ফেললো। ব্যথা যতোটা না পেলাম তার চেয়ে ভয়ে প্রায় অজ্ঞান হবার দশা। হাল ফেলে আব্বা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। এর পরে কিছু দিন হালের কাছে ঘেঁষা আমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।

হালের পরে মই দেবার জন্য আমরা পিচ্চিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষ করে থাকতাম। কারণ মই দেবার সময় আমরা দল বেঁধে মইয়ের ওপর বসে পড়তাম মইয়ের দড়ি ধরে। গাড়ি তো ছিলো না। ওটাই আমাদের কাছে গাড়ির বিকল্প ছিলো।

এসব জমিতে তখন বছরে তিন ফসল হতো। দুই বার ধান (আউশ, আমন) আর শীতকালে রবি শস্য। জমিতে ভাগ ভাগ করে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ফেলন পাল, মটর, খেসারী, মূলা, লাল শাক, ধনিয়া পাতা, পালং শাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, শালগম এসব চাষ করা হতো। আর করা হতো আলু চাষ। দেশি আলু। শুধু শীতকালে পাওয়া যেতো। এখনকার মতো বড়ো আলুও চাষ করা হতো। ষাটের দশকে আউব খান ইপিএডিসির (বর্তমান বিএডিসি) মাধ্যমে উচ্চফলনশীল পালং শাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, শালগম এসব চাষ চালু করেন। আমাদের পরিবার প্রথম থেকেই এইসব চাষ করতে শুরু করে।

আমার দাদা খুব সৃজনশীল চাষী ছিলেন। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন। ফসল এবং গাছগাছালির খুব যত্ন করতেন। সন্তানদেরও। সব ছেলে মেয়েকে পড়িয়েছেন। বড়ো জ্যেঠা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছেন বৃটিশ আমলে। দাদা সব ভিটি জমির চারপাশে সারবেঁধে খেজুর গাছ লাগিয়েছিলেন। খেজুর গাছের গোড়ায় লাগাতেন সীম বরবটি গাছ। খেজুরগাছে বেয়ে উঠতো সেগুলো। জমির আইলে বুনে দিতেন মাসকলাই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×