আগের পর্বের লিঙ্ক
মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৮
ফসল বোনা, চারা লাগানো
জমি তৈরি হবার পর ফসল বোনা হতো। ডাল জাতীয় ফসল,ধনিয়া, লাল শাক এসবের বীজ ছিটিয়ে দেয়া হতো। বেগুন, টমেটো, কপি এসবের চারা লাগানো হতো। বীজ বোনার কাজে আমাদের চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো ভূমিকা ছিলো না। কিন্তু চারা লাগানোর সময় আমরাও অংশ নিতাম। আব্বা গাছের লম্বা ডালের মাথা চোকা করে তৈরি করা খন্তা টাইপের জিনিস দিয়ে (নামটা মনে পড়ছে না) মাটিতে সেটা গেঁথে গেঁথে সরল রেখায় একটু দূরে দূরে গর্ত করতেন। আমাদের কাজ ছিলো সেই গর্তে একটা করে চারা দিয়ে চারপাশের মাটি দিয়ে চারার গোড়া আটকে দিয়ে গাছের গোড়ায় একটু পানি দেওয়া। এই কাজটি সাধারণতঃ আসরের নামাজের পর শেষ বিকালে করা হতো, যাতে পরের দিন সকালে রোদ চড়ার আগেই চারাটি নতুন মাটিতে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বীজ বোনার পর আমাদের কাজ ছিলো বীজ থেকে নতুন গাছ উঠছে কিনা সেটা দেখতে যাওয়া। খুব আগ্রহ করে দেখতাম কচি কচি ধনিয়া গাছ, লাল শাক এই সব। মাঝে মাঝে খুব আলতো করে আদর করে দিতাম নতুন চারাগুলোকে। সবাই খুব সাবধান থাকতাম কোনো চারা বা গাছ যেন নষ্ট না হয়। ছাগল বা মুরগীর দলের দিকেও নজর রাখতাম।
চারার যত্ন, ফসল তোলা
প্রতিদিন চারা দেখা ছাড়াও আমরা সারা ক্ষেতে খুঁজে দেখতাম কোন আগাছা উঠলো কিনা। সেই আগাছা তুলে আনতাম। অনেক সাবধানতার পরেও দেখা যেতো কিছু কিছু চারা আমাদের পায়ের নীচে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। তখন আমরা একে অন্যকে দোষ দিতাম চারা মাড়িয়ে দেবার জন্য। ধনিয়া পাতা, লাল শাক, পালং শাক যদি রান্নার জন্য তুলে আনার দরকার পড়তো তখন সেটা জমি থেকে তুলে আনার জন্য আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতো। তাজা তাজা শাক তোলার মজাই আলাদা। সকালে তুলতে গেলে দেখতাম শিশিরে পাতা গুলো সিক্ত হয়ে উজ্জ্বল সবুজ দেখাচ্ছে। খুব ভালো লাগতো দেখতে। নিজের ক্ষেতের তাজা শাক সবজি খাবার মজাই ছিলো আলাদা।
মটরশুটি, মূলা চুরি করে খাওয়া
বাড়ির কাছের নীচু জমিতে যখন মটরশুটি ধরে থাকতো। সেটা দেখতে খুব ভালো লাগতো। আমরা করতাম কি , চুপিচুপি মাঠে গিয়ে মাথা নীচু করে রেখে কচি মটরশুট খেতাম। কাঁচাই । কেমন জানি একটু মিস্টি লাগতো। তখন দেশি লালচে ঝাঁঝালো এক ধরনের মূলা চাষ করতেন দাদা। সাদা মূলার চাষও তখন কিছু কিছু করতেন। সেটা চাহিদা ছিলো কম। আমরা আস্তে করে লুকিয়ে মূলা তুলে নীচের অংশটা ভেঙে নিয়ে পাতাটুকু আবার মাটিতে পুঁতে রাখতাম। দু'তিন দিন পর যখন সেই পাতাগুলো শুকাতে শুরু করতো। তখন মূলা গায়েব হয়ে যাবার বিষয়টি দাদার নজরে আসতো। দাদা তখন রাগ করতেন। বলতেন, হার্মাদগুনের কারবার দেইখ্ ছোনি। (হার্মাদগুলোর কাণ্ড দেখো)। খুব রাগলে বলতেন, ইবলিশ। এর চেয়ে খারাপ কোনো কথা তাঁর মুখ থেকে কখনো শুনি নাই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬