পূর্বে ভাগ-১ এবং ভাগ-২ এ হজ্ব ফরজ জওয়া এবং ভাগ-৩ এ ইহরম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আজ হজ্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মিকাত সম্পর্কে কিছু তথ্য উল্লেখ করা হলো
১। যুল হুলাইফা:
এটা হল মদীনাবাসি এবং যারা তাদের এ পথ দিয়ে আসবে তাদের সকলের মীকাত। মাসজিদে নববী ও এ স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্ব হল তের কিলোমিটার। এটি মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মীকাত। মক্কা ও এর মধ্যকার দূরত্ব হল চারশত বিশ কিলোমিটার। বর্তমানে এ স্থানের নাম হল ‘‘আবইয়ার আলী’’।
২। আল জুহফা:
এটি রাবেগ শহরের নিকটবর্তী একটি গ্রাম। লোকজন এখন রাবেগ থেকেই ইহরামের নিয়্যাত করে, কেননা রাবেগ জুহফার সামান্য একটু আগে অবস্থিত। এ স্থান ও মক্কার মধ্যবর্তী দূরত্ব হল দুইশত আশি কিলোমিটার। এটা মিশর ও সিরিয়াবাসীদের মীকাত এবং সউদি আরবের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার দেশসমূহের অধিবাসী এবং যারা এ পথ হয়ে আগমন করবে তাদের সকলের মীকাত।
৩। কারনুল মানাযেল :
একে বলা হয় ‘আস্সাইল আল কাবীর’। মক্কা ও এর মধ্যকার দূরত্ব হল আটাত্তোর কিলোমিটার। এটা নাজদবাসী, আরব উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক ও ইরান সহ সকল পূর্বঞ্চলীয় লোকদের এবং যারা এ পথে আগমন করবে তাদের মীকাত। বর্তমানে এ মীকাতের সমান্তরালে রয়েছে ‘‘মীকাতে ওয়াদী মুহরিম’’ যা তায়েফের পশ্চিমে আল হাদা রোডে অবস্থিত। মক্কা থেকে এর দূরত্ব পঁচাত্তর কিলোমিটার। এটা তায়েফবাসী ও তাদের পথ দিয়ে আগমনকারীদের মীকাত। এটা আলাদা কোন মীকাত নয়।
৪। ইয়ালামলাম:
আজকাল এ স্থানটিকে বলা হয় সা‘দিয়া, যা মক্কা থেকে একশত বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটা হল ইয়ামানবাসী ও তাদের পথ দিয়ে যারা আসবে তাদের মীকাত।
৫। যাত-’ইর্ক:
এ স্থান হল ইরাকবাসী ও পূর্বাঞ্চলের লোকদের মীকাত। বর্তমানে এ স্থান পরিত্যাক্ত; কেননা সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। স্থানটি মক্কা থেকে একশত কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ইরাক ও পূর্বাঞ্চলের হাজীগণ ‘আস সাইল আল কাবীর’ থেকে কিংবা যুল হুলাইফা থেকে ইহরামের নিয়্যাত করে থাকে।
আর মক্কাবাসীগণ হজের জন্য নিজ নিজ বাসস্থান থেকেই ইহরামের নিয়্যত করবে। আর উমরার জন্য তারা তান‘য়ীম কিংবা হারাম সীমানার বাইরে যে কোন স্থান থেকে ইহরামের নিয়্যত করবে। হজের সংকল্প নিয়ে যে সকল মুসলিম এ মীকাতসমূহ অতিক্রম করবে তাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব হল সেখান থেকে ইহরামের নিয়্যাত করা। যদি হজের ইচ্ছা নিয়ে ইহরাম করা ছাড়াই কেউ স্বেচ্ছায় মীকাত অতিক্রম করে তবে তার উপর ওয়াজিব হবে মীকাতে ফিরে এসে সেখান থেকে ইহরাম করা। তা না করলে তাকে দম দিতে হবে। আর তা হল -মক্কায় একটি ছাগল যবেহ করে সেখানকার দরিদ্র লোকদের মধ্যে তা বন্টন করে দেয়া। যদি কেউ ভুলে কিংবা নিদ্রাবস্থায় ইহরাম না করেই মীকাত অতিক্রম করে, তার উপর ওয়াজিব হল স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে ফিরে গিয়ে মীকাত থেকে ইহরাম করা। তা না করলে তাকেও দম দিতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান হতে হাজীগণ পূর্বে যখন জাহাজে করে হজ্বে যেত তখন তাদেরেকে ইয়ালাম্লাম মিকাত অতিক্রম কতে হতো। পূর্বে “ইয়ালাম্লাম” মিকাত ছিল আমাদের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে বিমানযোগে হজ্বে যাওয়ার কারণে সোজা পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে হয় বিধায় আমাদের নির্ধারিত মিকাত হচ্ছে আস্সাইল আল কাবীর। চলবে ----------
হজ্বঃ (ভাগ-১)
হজ্বঃ (ভাগ-২) হজ্বের মাস সুনিদৃষ্ট এবং হজ্বের জন্য তোমরা পাথেয় সঙ্গে নাওঃ
হজ্ব (ভাগ-৩): ইহরাম সংক্রান্তঃ