somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডা দিলাম পাড়ি - ছবিব্লগ - ২

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*********************************************
কানাডা দিলাম পাড়ি -ছবিব্লগ - ১
*********************************************
বিমান ভ্রমন ৪/৫ ঘন্টার হলে মানায়। এর বেশী হলে, ভয়ংকর রকম বোরিং একটা ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কারন আপনি একটা সিটের মাঝে বন্দী। নড়াচড়ার জায়গা কম, আবার কারো কারো কান বন্ধ হয়ে আসে, কেউ কেউ তো মাথাঘুরে পড়েও যায়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাবেন, তো একই দৃশ্য দেখতে পাবেন ঘন্টার পর ঘন্টা - সেই বিস্তৃত ভূমি না হয় জলরাশি।



আমি ছিলাম আকাশে, হয়ত ততক্ষনে পাকিস্তান পার হয়ে গেছি। নাস্তা খেতে খেতে দেখছি বাইরের একঘেয়ে সেই দৃশ্য। উপর থেকে দেখে কিছু বোঝা না গেলেও, একটু খেয়াল করলেই জনবসতি টের পাবেন, রাস্তাঘাট, বন্দর - এসবের দেখা পাওয়া যায়। তবে প্লেন আরো উপরে উঠে গেলে অন্য কথা।



মাঝে মাঝে সূর্যের ঝিলিকে জানালার স্লাইডার নামিয়ে দিতে বাধ্য হই। কারন, এই ছোট জানালা দিয়ে যে পরিমান আলো প্লেন ঢুকছে, তাতে অন্য যাত্রীদের অসুবিধা হবার কথা। আমার পাশের সিটে বসেছিলেন একজন ব্রিটিশ ভদ্রলোক, উনি প্রায় ৬'৫", বেচারার বসতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তার পায়ের এক অংশ সিটের বাইরে পড়েছিল। আর কেউ সে পথে চলাচল করলেই, বারবার সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

আমাদের প্লেনের এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমটা কাজ করছিল না। পুরো ৮ ঘন্টার যাত্রায় আমি বেকুবের মতো কুজো হয়ে জানালার দিকে হেলে বসেছিলাম। পাশের ব্রিটিশ দেখি নাস্তা খেয়ে লম্বা ঘুম দিল। আমার চোখে কোন ঘুম নাই।

এভাবেই কয়েক ঘন্টা পর দুপুরের খাওয়া। এবারের খাবারের কোয়ালিটি একটু ভাল। চিকেন স্যান্ডউইচ, দই, ব্লুবেরী মাফিন, পানি। এর পর কফিও পরিবেশন করা হলো।



খাবার শেষ হবার পর, আবারো সেই মূর্তির মতো বসে থাকা। কিছুক্ষন মোবাইল গুতাই, আগের তোলা ছবি দেখি, গান শুনি, বাইরে তাকিয়ে থাকি। এসব করতে করতেই ৮ ঘন্টা কাটাতে হয়েছে।

তারপর একসময় দেখি তুরস্ক চলে এসেছে। উপর থেকে বোঝ যাচ্ছিল এটাই তুরস্ক, কারন ওদের সব বাড়ীগুলো উপরিভাগটাই লাল রংয়ের।



ইস্তানবুল যেহেতু একটু বন্দর নগরী, তাই তার কূল ঘেষে অসংখ্য জাহাজ, ট্রলার এসব দেখতে পেলাম। এয়ারপোর্টটাও সমুদ্রের তীরে, এই ছবিতে একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন।



প্লেন ভালোভাবেই ল্যান্ড করল। এখানে বলতে ভুলে গেছি, ঢাকা থেকে আমার প্লেন ছাড়ার কথা ভোর ৬:১০ এ, সেই প্লেন ছেড়েছে ভোর ৬:৪৫। তুরস্কে এসে নামার কথা বেলা ১১:৪০ এ (তুরস্ক সময়), এসে নেমেছি ১১:৩৫ এ। মানে ৩৫ মিনিট দেরিতে প্লেন ছাড়ার পরও ৫ মিনিট আগে এসে পৌছে গেছি। খারাপ না :)

রানওয়েতে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো, বেজায় ব্যস্ত বিমানবন্দর ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট। আমরা নামতে না নামতেই আরো কয়েকটি প্লেন এসে লাইনে দাড়াল। আমার সরে গেলে, এরা একে একে উড়াল দেবে। আমাদের পেছনেও কম করে ৫ টি প্লেন দাড়িয়ে ছিল।



প্লেন গিয়ে থামল অনেক দুরের এক টার্মিনালে, ওখান থেকে ২টি বাস এসে যাত্রীদের মূল টার্মিনালে নিয়ে এল। সাগরের হাওয়ায় ভালই লাগছিল।

মূল টার্মিনালে এসে, আমি দিলাম ছূট। যদিও আমার পরবর্তী প্লেন ছাড়বে আরো ২ঘন্টা পর, কিন্তু আমি এই অজানা অচেনা দেশে কোন কিছুই 'সম্ভাব্য' হিসেবে রাখতে চাই না। অনেক কে দেখলাম খাওয়ার দোকানে ঢুকছে, অনেকে বাথরুমে, অনেকে কেনাকাটার জন্য, কিন্তু আমি টানা ব্যাগটাকে টান দিয়ে হাটা শুরু করলাম :)

যাত্রা শেষে ক্লান্ত? হাটার কি দরকার, দাড়িয়ে থাকুন, প্লাটফর্মই আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে :)




কত্তবড় চেয়ার, কত্তছোট চেয়ার :-*



প্রায় ১৫-২০ মিনিট হাটার পর, সেই টার্মিনালে এসে পৌছলাম যেখান থেকে টরন্টোর উদ্দেশ্যে প্লেন ছেড়ে যাবে। কোথাও না থেমে সরাসরি চলে এসেছি, তাই চেকিং-এ আমার সামনে শুধু আরেকজন যাত্রী ছিলেন।

আমার চেকিং-এর সময় টার্কিশ অফিসার কিছু প্রশ্ন করলেন:

"হোয়ার আর ইয়ু কামিং ফ্রম স্যার?"
"বাংলাদেশ"
"এক্সকিউজ মি, হোয়ার?"
"ঢাকা, বাংলাদেশ"
"ও ও ডাকা ডাকা......গোয়িং টু কানাদা?"
"ইয়েস"
"হোয়াই?"
"ইমিগ্রেশন"
"অকে। ওয়েট হিয়ার প্লিজ"।

তারপর সে দেখি একটা সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে আমার ভিসার ছবি তুলল। ব্যাপারটা আমার কাছে বোকামী মনে হয়েছে। কারন যে কেউ এই ক্যামেরা থেকে ছবি গুলো মুছে দিতে পারে, বা কপি করে ফেলতে পারে। তো এভাবে ছবি তোলার মানে কি হলো! যাই হোক।

বোর্ডিং রুমে গিয়ে বসলাম। এখানে বাথরুম, পানীয় সব পাওয়া যায়। তাই আগে কোথাও সময় নষ্ট না করে ভূল করি নি। এই রুমে বসেই ইস্তানবুলের অল্প কিছু ছবি তুললাম।





দূরে সাগরের জলরাশি দেখা যাচ্ছে



বাথরুমে গিয়ে একটু চোখমুখে পানি দিয়ে এলাম। তারপর ল্যাপটপটা খুলে হুমায়ুন আহমেদের "প্রেমের গল্প" পড়া শুরু করলাম। ভয়ংকর বোরিং লাগছিল তাই আর কিছু না পেয়ে...... :|

দেখতে দেখতে আরো যাত্রীতে রুম ভরে গেল। অনেকে এসে জায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে পড়লেন। আগে এসেছি বলে আমার পথ হারানোর ভয় ছিলনা, আরাম করে বসেছি - পরে আসলে এয়ারপোর্টটা একটু ঘুরে দেখতে পারতাম - যার যেটা পছন্দ, আমার পছন্দ "প্লেন মিস হবে না এটা জানার শান্তি" তাই আমি আগেই এসেছি।

এরপর সবার বোর্ডিং পাসে লেখা ছিল এ / বি / সি - যার পাসে যা লেখা, সে ঐ লাইনে গিয়ে দাড়াল। আমার ছিল 'এ', তো আমি প্রথম লাইনেই দাড়িয়ে থাকলাম। অনেক কে দেখলাম কিছু না বুঝে-সুঝে এদিক ওদিক ঢুকে যাবার চেষ্টা করছে।

লাইন ধরে প্লেনে উঠলাম। এই প্লেনটা বিশাল বড়! জায়গাও বেশি। আরাম করে জানালার পাশেই বসলাম। এখানে এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমও কাজ করছে। আর মুভি হিসেবে "এমাজিং স্পাইডারম্যান ২", "ম্যান অফ স্টিল" সহ আরো অনেক মুভি দেখাচ্ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ টার উপর মুভি, তার সাথে ড্রামা সিরিয়াল, কার্টুন, কম্পিউটার গেমস - সবকিছুই আছে।



যাত্রা তখনও শুরু হয়নি। টরন্টো আর মাত্র ৮ হাজার ২০৮ কিমি দূরে



এবার আমার যাত্রাপথের সাথী মধ্যবয়সী দুজন আলবেনিয়ান স্বামী-স্ত্রী। তখনও অবশ্য তাদের সাথে কথা হয়নি। পরে জেনেছি।

অল্প কিছুক্ষন পর আবার প্লেন আকাশে উড়ল। এবারের যাত্রা ১১ঘন্টার।

নিচে ইস্তানবুলের লাল চাদর





ইবোলা ভাইরাস সংক্রমন থামানোর জন্য, দেখলাম প্লেনে একটা বিশেষ স্প্রে দেয়া হলো। ভয়ংকর ব্যাপার!

ইবোলা ধরে কিনা, এই ভয় নিয়ে শুরু হলো টরন্টোর দিকে যাত্রা।

(চলবে)
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×