কাল যদি আসিফ মহিউদ্দীন কিংবা আরিফুর রহমান-এর গলাকাটা লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি বিস্মিত হবো না। খুনের মাস্টারপ্ল্যান আগেই করা হয়ে গ্যাছে, 'আমার দেশ' পত্রিকা অফিসে। 'ভয়ঙ্কর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার' শিরোনামের এই লেখাটির ভেতরে তারা শহীদ রাজীবের নামে যাচ্ছেতাই প্রোপাগান্ডাই করেই ক্ষান্ত হয়নি, সমমনা ব্লগারেরদের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি শুরু থেকেই শাহবাগ আন্দোলনের পেছনে লেগেছিল, নানা অপপ্রচারের মাধ্যমেও যখন ব্লগারদের থামানো যায়নি, তখন তারা হন্তারকের ভূমিকায় নেমেছে। এরা খুব সুকৌশলে মানুষের ধর্মানুভূতিকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, উস্কে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে। প্রথমে এরা টার্গেটকৃতদের চরিত্রহননে নেমেছে, ইনিয়ে-বিনিয়ে ধর্মানুভূতির দোহাই দিয়ে মুক্তচিন্তা ও চেতনাধারীদের বিপরীতে জনমনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। তারপরই সম্ভবত রাজীবের মত জবাই করে রাস্তায় পেলে রাখছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে; এক্ষেত্রে এরা ফারাবীর মত উগ্র হিজবুত তাহারিরের সদস্যদের সাহায্যও নিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জামাতপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত; তাই হিজবুত তাহারিরের সাথে তার গোপন কোন এজেন্ডা থাকার বিষয়টা একেবারে অমূলক হতে পারে না। প্রতিবেদনে রাজীবের ২০১০- ১১’এর কিছু ব্লগের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, যাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে যে__ রাজীবের মৃত্যুর পর এতো দ্রুত লেখাগুলোর সন্ধান তারা কীভাবে পেয়েছেন? রাজীব কোথায় কোন ব্লগে, কোন নিকে লিখত এসব তথ্য কি তারা আগেই জানতেন? আগে থেকেই সম্ভবত রাজীবের নামে ভুয়া ব্লগ আইডি খুলে স্ন্যাপশর্ট নিয়ে এই মাহমুদ-গ্যাংরা প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। তারপর রাজীবের মৃত্যু, এবং আন্দোলন যখন দাবাগ্নির মত ছড়াচ্ছিল তখন মাহমুদ-গ্যাংরা ছুড়ে দিলেন ট্রাম্প কার্ড__ ধর্মীয় অনুভূতি! অবশ্য গতকালই মাহমুদুর রহমান তার এক লেখায় ‘ট্রাম্প কার্ড’ কথাটি লিখেছিলেন। সেটা ছিল আওয়ামীলীগের ট্রাম্প কার্ড; কিন্তু আজকের লেখাটির ভাবে-সাবে তিনি বুঝিয়ে দিলেন আসল ট্রাম্প কার্ডটি কিন্তু তার হাতে। এই ট্রাম্প কার্ড ছুড়ে দিয়েই কিন্তু তিনি শাহবাগ আন্দোলনের রূপরেখা পাল্টে দিতে পারেন! প্রাসংগিক আরও কিছু কথা বলতেই হয়, ২০১০-১১ দিকে রাজীব যখন ধর্মবিদ্বেষী লেখাগুলো লিখেছিল, তখন তাদের ধর্মানুভূতি কোথায় ছিল? তৎক্ষণাৎ কেন আমার দেশ পত্রিকা হতে কোন প্রতিবেদন লেখা হয়নি কিংবা প্রতিবাদ জানানো হয়নি? রাজীবের খুনের পর পরই কেন বিষয়গুলোকে এত হাইলাইট করা হচ্ছে? কেন আজ ধর্মের জন্য এত হাপিত্যেশ! শিরোনামে শাহবাগপন্থী ব্লগারদের ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দেয়া হলেও, ফারাবী-র মত ব্লগার, যারা প্রকাশ্যে মানুষকে জবাই করে হত্যা করার হুমকি দেয়, সেইসব নরপিশাচ ব্লগারদের ব্যাপারে আমার দেশ একেবারেই নিশ্চুপ। রাজীবের খুনিদের সমালোচনা করে একটি শব্দও লেখা হয়নি, কেবল একপেশে রাজীবের সমালোচনামুখর ছিল বিতর্কিত প্রতিবেদনটি। কেন? কেন এই একতরফা সমালোচনা? কার স্বার্থে ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দেয়া? মধ্যযুগীয় মানুষ-জবাইয়ের মত বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবেদক কেন এত চুপচাপ এক্ষেত্রে? এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ধর্মানুভূতিতে না হোক, মানবিক অনুভূতিতেও কি আঘাত লাগেনি প্রতিবেদকের? এই মৌনতা কি ‘জবাই’ করে মানুষ হত্যা করার প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন? আরেকটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘সোনার বাংলা’ ব্লগে দুদিন আগে ‘মেজর রাহাত’ নামের একজন ব্লগারের একটা পোস্টে করা মুক্তমনাদের তালিকার সাথে আমার দেশের প্রতিবেদকের তালিকাটির রহস্যজনক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মাহমুদুর রহমান শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ‘শূয়রের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়ার একটা অডিও ক্লিপও সম্প্রতি নেটে এসেছে। উপরোক্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে রাজীব হত্যারহস্যের তীর কিন্তু মাহমুদ ও তার গ্যাং অভিমুখী হয়।
আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি__ রাজীব হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে অবিলম্বে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ও তার গ্যাংদের সন্দেহের তালিকাভুক্ত করা হোক। উক্ত প্রতিবেদনের সুত্র ধরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। পাশাপাশি মুক্তমনা বন্ধুদের বলছি, যাদের নাম উক্ত প্রতিবেদনে এসেছে তারা মাহমুদুর রহমানের নামে থানায় জিডি করে রাখুন। মৃত্যু হয়ত আমরা প্রতিরোধ করতে পারবো না, কিন্তু মরার আগে অন্তত খুনিদের মুখোশ উন্মোচন করে যান।
১৮/০২/২০১৩
জবাই করে মানুষ হত্যা করার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিচ্ছে দৈনিক ‘আমার দেশ’!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।