somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কুঁড়ি আর দুটি পাতার দেশে: শেষ পর্ব

২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি কুঁড়ি আর দুটি পাতার দেশে: প্রথম পর্ব

মাধবকুন্ড ঝর্ণা দেখে মৌলভীবাজার থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে আমরা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। দুই ঘন্টারও বেশি সময় পর যখন সিলেট পৌঁছাই ততক্ষণে পেটে ইদুঁর নাচ শুরু হয়ে গেছে। সিলেটে আসার আগে মোটামুটি খোঁজ নিয়ে এসেছিলাম কোথায় কী দেখতে হবে, কোথায় কী খেতে হবে। তাই আমাদের ড্রাইভার এনাম ভাইকে জানালাম পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে। এনাম ভাইও জানালেন দেশী খাবারের জন্য এটাই সিলেটের সেরা রেস্ট্রুরেন্ট। খাবার অর্ডার করতেই প্রথমেই পরিবেশন করলো পাঁচ রকমের ভর্তা। আলু, ডাল, টাকি মাছ, শুটকি আর ধনে পাতা ভর্তা। আরো খেলাম রুই মাছ, বোয়াল মাছ, বাটা মাছ আর কবুতর। অসাধারন রান্না! সত্যিই খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি।

খেয়ে দেয়ে বের হলাম হোটেল ঠিক করতে। আমার দোস্তগুলা নানাবিধ উপায়ে অলরেডি টাকা উড়ানো শুরু করেছে (নতুন নতুন কামাইতাছে তো! পরে বুঝবো ঠেলা)। ওদের শখ হলো থ্রিস্টার হোটেলে উঠবে। একটা হোটেলে গিয়ে ভাড়া ঠিক করতে গিয়ে বিষম খেলাম। একদিনের জন্য মাথাপিছু ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ২০০০টাকা। পুরানো কথা মনে পড়ে গেলো। কক্সবাজার গিয়ে আমরা এই পাঁচজনই এক রুমে ছিলাম । মোট ভাড়া পড়েছিলো মাত্র ৬০০টাকা। আহ! কী সব দিন ছিলো! তখন ঘুরে বেড়ানোর জন্য আমাদের কত কষ্টই না করতে হত। তিল তিল করে টাকা জমাতে হত। আর দুইদিন ধইরা কামাইতে শিইখ্যা পোলাপাইনগুলা ফুটানি শুরু করছে।!যাই হোক পরে ধ্যাতানি দিয়া ওগো ঠান্ডা করলাম। থ্রিস্টার ছেড়ে উঠলাম হোটেল সুপ্রিমে । এনাম ভাইকে সেদিনের মত ছুটি দিয়ে দিলাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার দিকে হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার জিয়ারত করতে গেলাম। রাতে বন্ধু শান্তনুর ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত থাকায় খেতে গেলাম। বুঝতেই পারছেন ভুরিভোজটা কেমন হয়েছিলো ! :D

পরদিন সকাল নয়টার দিকে বের হলাম সিলেট ঘুরতে। হযরত শাহপরান (রহঃ) মাজার জিয়ারত করে লালাখালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাংলাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৩৫ কি.মি রাস্তা যার মধ্যে বেশ বড় একটা অংশ কাঁচা রাস্তা। লালাখাল যাওয়ার পথে আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। ভেবেছিলাম লালাখাল থেকে ফেরার পথে গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলবো। কিন্তু বৃষ্টির কারনে তা আর হয়ে উঠেনি। :( নাজিমগড় রিসোর্টে গিয়ে সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করলাম লালখাল ঘুরে বেড়ানোর জন্য। স্বচ্ছ নীল জলরাশি কেটে আমাদের নৌকা এগিয়ে চলছে আর বৃষ্টির ফোঁটা ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের চোখ-মুখ-গাল! মনে হচ্ছিলো এই সময় এই মুহূর্ত থেমে যাক, অনন্তকাল ধরে জীবনটা এভাবেই কেটে যাক। ও মাঝি তুমি বাইয়া যাও। আকাশের সঙ্গে আজ আমি লুকোচুরি খেলবো। এই বিস্তৃত নীল জলরাশি আমাকে বুক আগলে লুকিয়ে রাখবে। বাতাসও সঙ্গী হবে আমার খেলায়, সবুজ হবে আমার সারথি। হারিয়ে যাব আজ, যেদিকে দু চোখ যায়।
কিন্তু স্বপ্নে রেশ কাটতে সময় লাগেনা। এটাই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, জীবনের রূঢ় বাস্তবতা। ফিরে এলাম নিজ ভুবনে। মাঝখানের বেশ কিছু সময়ের জন্য সময় বুঝি সত্যিই থেমে গিয়েছিলো।







লালাখালে নাজিমগড় রিসোর্ট




আমাদের পরবর্তী গন্তব্য জৈন্তাহিল রিসোর্ট। জাফলং যাওয়ার পথে এখানে পাহাড়ি জনপদের ছোট্ট একটা জাদুঘর আছে, আছে রিসোর্ট, রেস্তোরা আর বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ আবাসস্থল। দূর ভারতীয় সীমান্তে চেরাপুঞ্জীর পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট অনেকগুলো ঝর্ণা চোখে পড়ে। জাফলং রোড ধরে পৌঁছে যাই দেশের শেষ প্রান্ত তামাবিল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থলবন্দর তামাবিল। এপারে জাফলং আর ওপারে মেঘালয় রাজ্য। যেখান থেকে হাত বাড়ালেই মেঘে ছোঁয়া যায়, হারিয়ে যাওয়া যায় মেঘের রাজ্যে। অদ্ভূত ঈশ্বরিক সৌন্দর্যে বাকহারা হয়ে যেতে হয়। ঠিক সেই মুহূর্তটাতে কী জানি কীসরেও লাগি প্রাণ হায় হায় করে উঠে! মেঘপিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা :(

জৈন্তাহিল রিসোর্ট


বাংলাদেশ সীমান্তে শেষ বাসস্থল




ভারতীয় সীমান্তের মেঘারয়ের পাহাড়ে উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট একটা ঝর্ণা


তামাবিল


মেঘ-বৃষ্টি সঙ্গী করে এবার পাড়ি জমালাম জাফলংয়ে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত জাফলং শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া- জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এবং পিয়াইন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর ঘোলা পানি দেখে মন খারাপ হয়ে গেছে। নদী থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য জায়গাটাকে দূষিত করে ফেলেছে সেখানকার মানুষজন। এখানেও নৌকায় করে ঘুরলাম কিছুক্ষণ। একটা জায়গায় গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষের জটলা, সবাই ছবি তুলছে। আমরাও ছবি তুললাম কয়েকটা। জায়গাটা নিয়ে সবার আগ্রহের কারণ জানলাম পরে। যে জায়গাটায় সবাই দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে তা মূলত ভারত সীমান্তের। এ জায়গাটায় একজন বিএসএফ আর একজন বিজিবি সদস্য পাহারায় আছেন। দুজনের মাঝে বেশ ভালো দোস্তি দেখতে পেলাম। হঠাৎ হাঠাৎ বিএসএফ সদস্যটা হন্তদন্ত হয়ে জায়গাটা থেকে বাংলাদেশী ট্যুরিস্টদেরকে সরিয়ে দিচ্ছে আর বলছে ' ভাইলোগ হাট যাইয়ে, যারা বাদ মে আইয়েগা, জালদি কীযে।' পরে বুঝলাম পাহাড়ের উপর ওয়াচ টাওয়ার থেকে যখনই কোন অফিসার এসে নজরদারি করছে তখনই বিএসএফ জওয়ানটি পর্যটকদের সরিয়ে দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিজিবি আর বিএসএফকে পাশাপাশি রেখে একটা গ্রুপ ছবি তুলে জাফলং থেকে বিদায় নিলাম।


(ফটো ক্রেডিট বন্ধু সাকিব)


ভারতীয় সীমান্তে ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ






সিলেট শহরে ফিরে বিখ্যাত 'উন্দাল' রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানী খেতে গেলাম। কিন্তু বিকেল হয়ে যাওয়াতে বিরিয়ানী পেলাম না। :( পরে পানসী-তে ভাত খেলাম। পুরাই ফাউল রেস্টুরেন্ট। এরা নাকি পাঁচ ভাইয়ের সঙ্গে কম্পিটিশনে নেমেছে!! খেয়ে দেয়ে ঢাকার গাড়িতে উঠলাম। ৬টায় সিলেট থেকে রওয়ানা হয়ে যাত্রাবাড়ির কুখ্যাত জ্যামের কল্যাণে বাসায় পৌঁছালাম রাত একটায় X((X(

যেভাবে যাবেন:
** আমরা ঢাকা থেকে প্রথমে মৌলভীবাজার গিয়েছিলাম। কল্যানপুর থেকে ছোট গাড়ি করে আমাদের ফকিরাপুল নিয়ে যায়। সেখান থেকে বড় গাড়িতে উঠি। ভাড়া ৩৫০টাকা (হানিফ)। আরে ফেরার সময় সিলেট থেকে ঢাকার গাড়িতে চড়েছিলাম। ভাড়া ৪৪০ টাকা (ইউনিক)।
** সিলেটের হোটেলগুলো ভালো মানের কিন্তু খরচ বেশি। আমরা উঠেছিলাম হোটেল সুপ্রীমে। দিনপ্রতি দু'টি সিঙ্গেল বেডের একেকটি এসি রুম ভাড়া পড়েছিলো ১২৪০টাকা। আমরা কর্পোরেট ডিসকাউন্ট পেয়েছিলাম ;) । আসল ভাড়া ১৫০০টাকা।
** দুদিনের জন্য মাইক্রোভাড়া লেগেছিলো ৭৫০০ টাকা। সাত আসনবিশিষ্ট মাইক্রোবাস। সকাল আর দুপুরে ড্রাইভারকে আমরাই খাইয়েছিলাম। মাইক্রোবাস আগে থেকে ঠিক না করলেও চলবে। মৌলভীবাজার নেমেই ঠিক করতে পারবেন। মাইক্রো বা প্রাইভেট কারে করে ঘুরলে অনেক সময় বাঁচবে। ঘুরতেও পারবেন স্বচ্ছন্দে। ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস ঠিক করতে চাইলে আমাদের ড্রাইভার এনাম ভাইকে ফোন করতে পারেন। এনাম ভাই চমৎকার মানুষ। ০১৭১২৩৮৯০৪৭
** দ্রুত সব জায়গা ঘুরতে চাইলে এভাবে ঘুরতে পারেন। আরেকটু সময় দিতে চাইলে ট্যুর প্ল্যান একদিন বাড়িয়ে নিন। লালাখাল ছাড়া আমার মনে হয়না অন্য কোন স্পটের জন্য বেশি সময় দেয়ার দরকার আছে।
** হাকালুকি দেখতে বর্ষা মৌসুমে যাবেন এবং হাকালুকির জন্য অন্ত:ত একদিন বরাদ্দ রাখবেন।
** আমরা ছিলাম মোট ৫জন। মাথাপিছু খরচ হয়েছিলো প্রায় ৪০০০টাকা
_____________________________________________
সিলেট ভ্রমণের আরো গল্প...
মাধবপুরে বন, পাহাড় আর হ্রদের মিলনমেলায়
অপরূপ লাউয়াছড়া বনে
রাজকান্দি পেরিয়ে হামহামে
____________________________________________
***আমার যত ভ্রমণ ও ছবিব্লগ*** :)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৫১
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×