
আসুন জানি ফ্যাসিজম কি ???
ফ্যাসিজম একটি রাজনৈতিক আদর্শ যা সাধারণত কর্তৃত্ববাদ, চরম জাতীয়তাবাদ, এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করে। ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থায় সাধারণত একটি একদলীয় সরকার বা শক্তিশালী নেতার নেতৃত্বে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন গড়ে ওঠে। এ ধরনের সরকার সাধারণত রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন করে, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত করে।
ফ্যাসিস্ট আদর্শের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
চরম জাতীয়তাবাদ: ফ্যাসিজম সাধারণত একটি জাতির শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা প্রচার করে এবং অন্য জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈরিতার মনোভাব পোষণ করে।
কর্তৃত্ববাদ: এই আদর্শে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার থাকে, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রতি অবজ্ঞা: ফ্যাসিস্ট শাসনে ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রচার ও প্রোপাগান্ডা: ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের আদর্শ প্রচার এবং জনগণের মতামত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডার উপর নির্ভরশীল।
রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন: ফ্যাসিস্ট শাসনে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করা হয়, প্রায়শই সহিংস পন্থায়।
ফ্যাসিজমের উদাহরণ হিসেবে ইতালির বেনিতো মুসোলিনি এবং জার্মানির অ্যাডলফ হিটলারের শাসনামল উল্লেখযোগ্য। তাদের শাসনব্যবস্থায় এই আদর্শের প্রতিফলন দেখা যায়। ফ্যাসিজমের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং একটি নির্দিষ্ট আদর্শ বা উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে সমাজকে পুনর্গঠন করা।
এখন আসি বাংলাদেশের বিষোয়ে
বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সময়কাল বা শাসনামলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ উঠেছে:
শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল (১৯৭৫): ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন, যা বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) নামে পরিচিত। এটি সমালোচিত হয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার কারণে।
জিয়াউর রহমান (১৯৭৫-১৯৮১): সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছিলেন বলে সমালোচিত হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন, তার শাসনের সময়ও গণতন্ত্র হ্রাসের অভিযোগ ছিল।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (১৯৮২-১৯৯০): সামরিক শাসক এরশাদও স্বৈরশাসকের অভিযোগে সমালোচিত হন। তার শাসনামল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিএনপির শাসনামল(১৯৯১-১৯৯৬) ও (বিএনপি জামাত শাসনামল) ২০০১-২০০৬)
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও দমন: বিএনপির শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস এবং বিরোধী মত দমনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন ও হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক সহিংসতা: বিএনপির শাসনামলে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের উপর নিপীড়নের অভিযোগও রয়েছে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ বারবার অভিযোগ করেছে যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং নেতাকর্মীদের উপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
নির্বাচনী অনিয়ম: বিএনপির শাসনামলে কিছু নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, বিশেষত ২০০১ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে।
নব্য ফ্যাসিস্ট আওমিলীগ আমল (১৭ বছরের কের্তন)
১. রাজনৈতিক দমন-পীড়ন:
আওয়ামী লীগের আমলে বিরোধী দলগুলোর ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা দায়ের, এবং রায় নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিরোধী দলের দাবি, এসব কর্মকাণ্ড রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা।
২. গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ:
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিকদের উপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করে যে, সরকার সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিকদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করছে।
৩. নির্বাচনী অনিয়ম:
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, এসব নির্বাচনে ভোট কারচুপি, বিরোধী দলের প্রার্থীদের হুমকি এবং ভোটারদের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৪. বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাব:
বিচার বিভাগের উপর সরকারের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রভাবিত করছে।
৫. মানবাধিকার লঙ্ঘন:
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে। বিশেষত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৬. নাগরিক অধিকার হ্রাস:
নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অধিকার সীমিত করার অভিযোগও রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনি কাঠামো ব্যবহার করে সমালোচকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়েছে বলে সমালোচকরা মনে করেন।
তো কি দাঁড়ালো? ফ্যাসিস্ট কে এবং কারা ? আপনারা যারা নিজেদের দুধে ধোয়া বলছেন বা ভাবছেন তারা সক্কলেই । আজ একজন আওমিলীগ কে সাপোর্ট করে বলে তাকে ফ্যাসিজমের রুগী আখ্যা দিয়ে কিছু লোক স্বস্তি পাচ্ছে অথচ এই কিছু লোক এক সময় নিজেরাই ফ্যসিজমের চর্চায় ব্যস্ত ছিলেন । আপনি লীগ করেন দল করেন বা জামাতের মত ঘৃণ্য কোন মতবাদে বিশ্বাসী হন ফ্যাসিজমের ক্ষেত্রে তাতে কিছুই আশে যায় না । আপনারা সবাই ফ্যাসিস্ট । আপনাদের আচরণ ফ্যাসিস্ট , আপনাদের চিন্তা ভাবনা ফ্যসিস্ট । জমাতের মতো ঘৃণ্য কোন গ্রুপের গলা ধরে ঝুলে আছেন বলে আপনি মহামানব তা কিন্তু একদম না । আপনি রাজাকার সেই সাথে ফ্যাসিস্ট সমর্থক ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



