somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"তোরে বারো" একটি অনগ্রসর গোষ্ঠীর টিকে থাকার সংগ্রাম...

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পঞ্চাশ-ষাট দশকের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে স্পেনের আন্দুলুশিয়া থেকে পাশ্ববর্তী প্রদেশ কাতালুনিয়ার বার্সেলোনা শহরে এসে  আশ্রয় নেয় কিছু শরনার্থী । পাহাড়ে বেষ্টিত অন্ধলটি বার্সেলোনার শহর থেকে কিছুটা দুরে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল দুর্গম। শরণার্থীদের অবাধে আশ্রয় ঠেকাতে তৎকালীন কাতালুনিয়া সরকারের এক অদ্ভুত আইন  পাশ‌ করে। কোন‌ শরনার্থী পরিবার যদি এক রাতের মধ্যে ঘরসহ উপরে ছাদ তুলতে পারে কেবল তখন তাকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে।

কিছু অধিবাসী সারারাত পরিশ্রম করে ঘর বানানোর চেষ্টা করলে ও সকাল এসে পুলিশের টহলে ছাদ না থাকার অযুহাতে বাড়িগুলো ভেংগে দিতো।।এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন......

শরণার্থীদের অসহায়ত্বের সুযোগ  নিয়ে কাঠ, সিমেন্ট, ইটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে ব্যবসায়ীরা।‌ এই শরনার্থীদের মধ্যে ছিল মনলো ভিটাল আর তার দুই বছরের শিশু কন্যা জোয়ানা। বারংবার বাড়ি উঠতে ব্যার্থ হওয়ায় পর মনলো বুদ্ধি করে সবাই মিলে একটি একটি বাড়ির কাজ শেষ করার!!!

মনলোর  এই পরিকল্পনা কাজে দেয়; ধীরে ধীরে গড়ে উঠে  "তোরে বাড়োতে" আশা শরনার্থীদের ঘর। ৭০ দশকের শেষের দিকে তোরে বারো হয়ে যায় বেশ বড় একটি কমিউনিটি, কিন্তু নাগরিক সকল রকমের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত একটি অঞ্চল। ছিল না পানি, ইলেকট্রিসিটি, যানবাহন, স্কুল বা কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা...

মনলো কাজ করতে থাকে বার্সেলোনার শহরে পাবলিক বাসের ড্রাইভার হিসেবে; শহরে EL-47 বাসটি একটি নির্দিষ্ট রুটে......

প্রতিদিনের ৩-৪ মাইল পাহাড়ি উঁচুনিচু রাস্তা দিয়ে হেটে শহরে আসতে হয় তোরে বারো অধিবাসীদের; সাথে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে কষ্টের মাত্রার তীব্রতা। এরমধ্যেই তোরে বাড়াতো আগুন লেগে জ্বলে যায় কিছু ঘর। খাবার বিরতিতে বার্সেলোনার একটি ধনী এলাকায় মিউনিসিপ্যালিটি কলে বাচ্চাদের পানী দিয়ে খেলার করার দৃশ্য ভীষণ দাগ কাটে মনলোর!! এই পানির অভাবে চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখতে হয় বন্ধুর বাচ্চাকে.....

একটি সাক্ষাৎকারে মনলো ভিটাল।

শুরু হয় মনলোর নতুন সংগ্রাম। তোরে বারোতে পাবলিক বাসের রুট স্থাপনের জন্য সে দৌড়াতে থাকে বার্সেলোনার এই অফিস সেই অফিস! বার্সেলোনা টাউনহল কর্মকর্তা, শ-খানেক আবেদন করে ব্যার্থ হয় মনলো। তোরে বারোর রাস্তা সরু, বাস চলাচলের অনুপযোগী নানা অযুহাতে এক এক করে ফিরিয়ে দেওয়া হয় মনলোকে.....

এক রুটিন কাজের দিন EL-47 বাসটি কিছু যাত্রীসহ হাইজ্যাক করে মনেলো নিয়ে আসে তোরে বারোতে; হাইজ্যাকের খবর সারা বার্সেলোনাতে ছড়িয়ে পড়ে। তোরে বারোবাসী মনলোকে বাস নিয়ে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে মনলোকে থানায় নিয়ে যায়; আর তার কেস উঠে আদালতে..

আর হাইজ্যাক না করার শর্তে মনলোকে জামিন দেওয়া হয় বিপরীতে জনতার শ্রোত, পপুলিষ্ট মুভমেন্টের কারনে তোরে বারোসহ বার্সেলোনার দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা সহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা চালু হয়। মনলোর একটি পদক্ষেপ গোটা বার্সেলোনার জরাজীর্ণ অঞ্চলের চিত্র চিরতরে পরিবর্তন হয়ে যায়।

১০ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে বার্সেলোনা টাউনহল থেকে মনলোর কৃতিত্বকে সম্মান জানিয়ে স্বর্নপদক দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২০১০ সাল পর্যন্ত মনলো তোরে বাড়োতে এ ছিলেন। তোরে বারোর এই সংগ্রাম নিয়ে EL-47 একটি জনপ্রিয় সিনেমা বানানো হয়েছে।




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×