আমাদের দেশের সমাজটা আসলে খুব গভীরভাবে অসুস্থ… বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের সমাজের এই মহাকদর্য রূপটা ভালোভাবেই চোখে পড়ে… সমাজে একদিকে যেমন মানুষের মাঝে দুই নম্বরি, দুর্নীতি, সহিংসতা যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি বেড়ে চলেছে ধর্মান্ধ মনোভাব… আর এই ধর্মান্ধ মনোভাব ইদানিং খুব হিংসাত্মক হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জেঁকে বসছে আমাদের সমাজে… নরসিংদীতে জিন্স টপস পড়া এক তরুণীকে মারধোরের ঘটনায় মানুষজনের যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তাতে করে এদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতিবাচকভাবে না ভেবে বা আশঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই… প্রথম আলতে খবর দিয়েছিলো যে ধর্মোন্মাদ জনতার কাছে সহিংসতার শিকার ঐ তরুণী ঘুমের মধ্যেও চীৎকার করে কেঁদে উঠছে… সেটা দেখে এদেশের মানুষজন যেভাবে অট্টহাস্য দিচ্ছে আর অকথা কুকথা বলে বেড়াচ্ছে তাতে করে বোঝা যায় যে দেশের মানুষের চিন্তা ধারার লেভেল কতোটা নিচুতে নেমে গেছে… পোশাক পড়ার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা আর মানুষের কাছে অপমানিত হওয়া, তাদের হাস্যরসের শিকার হওয়া সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুঝলাম না হয় পশ্চিমা সংস্কৃতিকে না বলতে শেখার ব্যাপারটা, কিন্তু তাই বলে যারা সেটা পড়বে তাদের ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করা, পেটানো, হেনস্তা করা, আজেবাজে সমস্ত কথা বলে বেড়ানো এটা কেমনতর মানসিকতা ? আপনি পশ্চিমা সংস্কৃতি মানেন না, খুব ভালো কথা… কিন্তু যারা ঐ সংস্কৃতিতে চলে তাদের আক্রমণ করা, হেনস্তা করা আর সেই আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষটির দুঃখে সমানে হাসতে থাকা এটাই বা কেমন সংস্কৃতি? সমাজ নিয়তই পরিবর্তনশীল… সেই পরিবর্তনের হাওয়ায় ভিনদেশী অনেক কিছুই এদেশের সমাজে এসে ঢুকবে, মানুষ সেটাকে গ্রহণ করবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার এবং সেটা হচ্ছেও… মেয়েদের হিজাব, বোরখা পড়ার ব্যাপারটাও কিন্তু আদতে আমাদের দেশী সংস্কৃতি নয়… এটাও ঐ আরব দেশ থেকেই এসেছে এবং আরবও আমাদের পশ্চিমেই অবস্থিত… সে যাই হোক, সবচেয়ে বড় কথা পশ্চিমা ইউরোপীয় সংস্কৃতিকে না বলতে গিয়ে এমন সহিংস হয়ে পড়া বা তার ব্যাপারে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠা আর যাই হোক কোনও সভ্য মানসিকতা নয়… হিজাব পড়ার স্বাধীনতা যেমন থাকবে, তেমন প্যান্ট-শার্ট পড়ার স্বাধীনতাও থাকতে হবে… অবশ্য ক্রমেই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জাতিকে এসব বুঝিয়ে আসলেই কোনও লাভ হবে কি?
ইসলামী মূল্যবোধ আপনারে শিখাইছে যে ঐ তরুণী যে পোশাক পরসে সেটা অশালীন… তো সেই ইসলামী মূল্যবোধ কি আপনারে শিখাইসে যে তাদের আক্রমণ করতে হবে? তাদের সাথে অসভ্যতা করতে হবে?
নারীদের পোশাক আশাকের ব্যাপারে এদেশের মানুষের যেমন প্রতিক্রিয়া আর চুলকানি দেখা যায় তার অর্ধেকও দেখা যায় না দেশের ঘুষ- দুর্নীতির আর দুই নম্বরি সমস্ত কার্যকলাপের ব্যাপারে… এদের কথা নারীর পোশাক খারাপ হলে দেশের সমাজ খারাপ হয়ে যাবে, রসাতলে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি… তা এই যে দেশে এতো ঘুষ- দুর্নীতি, চুরি- চামারি আর দুই নম্বরি সমস্ত কাজ হয়েই চলেছে ক্রমাগতভাবে, তাতে কি এদেশ, এদেশের সমাজ রসাতলে যাচ্ছে না? হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে, ব্যাংকে ব্যাংকে অর্থ কেলেঙ্কারি, নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিষের অবৈধ মজুতদারি আর অবৈধ সিণ্ডিকেটদের তাণ্ডবে আক্রান্ত দেশের পুরো বাজার ব্যাবস্থা তাতে কি দেশের সমাজ রসাতলে যাচ্ছে না? সেসব নিয়ে এতো প্রতিক্রিয়া নাই কেন?
না, ধর্মান্ধ তৌহীদী জনতার নজর সেদিকে নাই… দেশের এতো সমস্ত সমস্যা এসব নিয়ে তাদের কোনও চুলকানি নাই, প্রতিক্রিয়া নাই, সেসবের কোনও সমাধান এরা দিতে অক্ষম… তাদের সমস্ত নজর হল নারীর পোশাক নিয়ে!!
আগে এক পোস্টে বলেছিলাম যে দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই পাকিস্তান আফগানিস্তান এর দিকে যাচ্ছে… এখন মনে হয় দেশের পরিস্থিতি আসলে ঐ পাকিস্তান-আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ হবে… কারণ ওরা আমাদের মতো এতো বেশী মিথ্যা বলে না, এতো বেশী দুই নম্বরি করে না সব কিছুতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২২ রাত ২:১৯