


আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখে গণ আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।। ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে।বিভিন্ন সম্মেলনে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিদের সাথে ড. ইউনূসের বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যায়। তারই প্রেক্ষিতে এনবিআর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেয়া হয় লাল তালিকা থেকে পাকিস্তানের সব ধরণের পণ্য অবমুক্ত করে দেয়ার জন্য। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের অধিকাংশ পণ্য কে রেড লেনে যুক্ত করে আ্যাসাইকুডা পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হত। মাদক দ্রব্য সহ নিষিদ্ধ পণ্যে কঠোরতা রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও খালাসের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেয়া হয়েছে।
নভেম্বর মাসের বারো তারিখে ১৯৭১ সালের পর প্রথম বারের মতো করাচি থেকে কন্টেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড় করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।করাচি থেকে কন্টেইনার ভর্তি জাহাজ আসার ঘটনা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে আলোচনা হচ্ছে।দুই দেশের বাণিজ্য বিলিয়ন ডলারের কম। গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল, সুতা-কাপড় ও প্রস্তুতকৃত চামড়া। এছাড়া সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শূটকি ও মেয়েদের থ্রি পিস আমদানি হয়েছে। রপ্তানি শিল্পের মধ্যে রয়েছে কাঁচাপাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক। মোট ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দুবাই ভিত্তিক কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা 'ফিডার লাইন্স ডিএমসিসি' এই কন্টেইনার জাহাজ সেবা চালু করেছে যাদের পাকিস্তানের করাচির সাথে ব্যবসা আছে। বাংলাদেশের কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান 'রিজেনসি লাইন্স লিমিটেড ' স্থানীয় প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হয়েছে যার মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
পানামার পতাকাবাহী জাহাজটির নাম ' উয়ান জিয়াং ফা ঝান'। জাহাজটি দুবাই বন্দর হয়ে আসার পথে একাধিক বন্দরে ভিড়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে আসার আগে করাচি বন্দরে ভিড়ে। পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম জাহাজ চলাচলের দুইটি রুট আছে। করাচি থেকে রওনা হয়ে সেগুলি কলম্বো অথবা সিংগাপুরে মাল খালাস করে ফিরে যায়। সেখান থেকে অন্য জাহাজে চট্টগ্রাম পৌছায়।এইবার প্রথম ভারতের সমুদ্রসীমা এড়িয়ে চট্টগ্রাম পৌছায় জাহাজটি। ফলে সেটিতে কি রয়েছে জানে না শ্রীলংকা বা সিংগাপুর কতৃপক্ষ। চট্টগ্রামে ককন্টেইনার খালাসের সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের নৌপথে সরাসরি যোগাযোগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের নিরাপত্তা সংস্থা উদ্বিগ্ন! ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য এবং মায়ানমার চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দের মতে চোরাচালান ও মাদকের বিস্তার ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বিচ্ছিন্ন বাদী সংগঠন কে অস্ত্র সরবরাহ করে মায়ামমার ও ভারতের রাজ্যগুলো কে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করতে পারে পাকিস্তান। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাতের জমানায় চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা হয়েছিল। সেবার পাকিস্তানের একটি জাহাজ কলম্বো থেকে মায়ানমার হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশ করেছিল। সেটিতে প্রায় দেড় হাজার চাইনিজ অস্ত্র ছিল। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রামে আসা মানেই চোরাচালানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া।
ড. ইউনূস ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ভারতের সাথে সম্পর্ক অবনতি ঘটেছে। সরকারের ভিতর অনেক শক্তি রয়েছে যারা ভারত বিদ্বেষী। বিগত বছর গুলোতে ভারতের সাথে শেখ হাসিনার অসম চুক্তির কারণে বাংলাদেশ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ! শেখ হাসিনার পতনের পর ক্রমাগত প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ভারতের কিছু মিডিয়া। অনেকে মনে করছেন ভারতকে চাপে রাখার জন্য হয়তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



