
জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৫ই আগস্ট সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের মধ্যে দিয়ে! এরপর নতুন ইন্ট্রাম সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এত কম বয়সে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তারুণ্যের! আসিফ মাহমুদ কে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপর আসিফ মাহমুদের সামনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশের হয়ে খেলা নিয়ে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়। সাকিব আল হাসান বিগত স্বৈরাচার সরকারের একজন এমপি ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। লাখো তরুণের আইডল মূহুর্তে মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। যদিও আন্দোলনের পুরো সময়টা সাকিব দেশের বাইরে ছিলেন তবুও ছাত্র-জনতার মধ্যে সাকিব ইস্যুতে তীব্র বিভক্তি শুরু হয়। বিতর্ক আরো বাড়ে যখন সাকিব দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলার জন্য অনুমতি পেয়েও শেষ সময়ে তাকে নিরাপত্তার কারণে আসতে মানা করা হয়। এতে সাকিব লাভারস ও হেটারস দের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে না পারলেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়াতে সক্ষম হন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করার পর অর্থাৎ শেখ হাসিনার পতনের ৩/৪ দিন পর থেকে দেশের গার্মেন্টস শিল্পে অশান্তি শুরু হয়। বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতনের দাবীতে সাভার, গাজীপুর, মিরপুরে অসংখ্য শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে; মহাসড়ক অবরোধ করে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কারখানার অনেক মালিক বিদেশ পালিয়ে যান৷ কেউ কেউ গ্রেফতার হন ও ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে টাকা তুলতে না পারাকে মূলত শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ধরা হয়। গার্মেন্টেস মালিকদের দাবী বিগত সরকারের দোসর, কিছু এনজিও এবং শ্রমিক সংগঠন গুলো নিরীহ শ্রমিক দের রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি বাড়ানোর জন্য তার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায় নি। গার্মেন্টস কারখানা গুলোর সংগঠনের নেতারা বলছেন পূর্বে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রমিক-মালিক দের নিয়ে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধান করা হতো। বর্তমানে সমন্বয়হীনতার কারণে সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কে অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক ঠিকমতো কাজে আসেন না, মিটিংয়ে নিদিষ্ট সময়ে উপস্থিত হন না। আসিফ মাহমুদ কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের শাস্তির হুমকি দিলেও পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না।
আসিফ মাহমুদ দাবী করেছেন, গত তিনমাসে প্রায় ৮৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আগামী দুই বছর পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু বিগত তিনমাসে কারখানা বন্ধ হয়ে, আগুনে পুড়ে কতজন লোক চাকুরি হারিয়েছেন সে ব্যাপারে কোনো ডাটা তার কাছে পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকুরির পরীক্ষা গুলো স্থবির হয়ে আছে। শ্রমিক অসন্তোষের পরিস্থিতি আশানুরূপ উন্নতি না ঘটায় আসিফ মাহমুদ কে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পল্লী ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা দের নিকট মানুষের প্রত্যাশা অনেক । তাই মন্ত্রণালয় বন্টনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার রাজনীতি পরিহার করে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



