
গতকাল বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভারতীয় মিডিয়া দ্যা হিন্দু তে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সে সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক প্রধান উপদেষ্টা কে প্রশ্ন করেন, আগামী নির্বাচনে কি আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে? ড. ইউনূস উত্তর দেন, ' হ্যা' আমাদের তাতে আপত্তি নেই। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আওয়ামী লীগ সহ সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বিএনপির দাবীকে পাশ কাটিয়ে সরকার ব্যতিক্রম কিছু করতে চায় না।
জাবিতে একটি অনুষ্ঠানে সমন্বয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেন কিছু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করতে চান না।বিভিন্ন দেশের দূতাবাসও আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে বলে আসিফ অভিযোগ করেছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম বারবার সরকার কে হুশিয়ারি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। একই সাথে ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের অভিযোগ বিএনপি আওয়ামী লীগ কে পুনর্বাসন করতে চায় রাজনীতিতে। বিএনপি তলে তলে আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে জুলাই বিপ্লবের শহীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে!
বিএনপি কি আসলেই আওয়ামী লীগ কে পুনর্বাসন করতে চায়? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম থেকেই আওয়ামীলিগের পলাতক এমপি ও শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে আসছেন। তবে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। মির্জা ফখরুল বলেছেন, তার দল বিএনপি আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার কেউ নন । জনগণ রায় দিবে যে তারা আওয়ামী লীগ কে চায় কি চায় না! বিএনপি ফাঁকা মাঠে গোল দিতে রাজি নয়। অন্যান্য নেতাদের মুখ থেকেও একই ধরণের কথা শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি যদি আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিতো তাহলে কি সরকার আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে আসতে বাঁধা দিতো? এর উত্তর মূলত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের কথায় পাওয়া যায়। সরকার গঠনের পরপর আমেরিকা সকল রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ইউনূস সরকার কে আহবান জানান। ব্রিটেনের প্রতিনিধি দল সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার জন্য ড.ইউনূসকে আহবান জানান। অন্যান্য দেশের দূতাবাস গুলো মনে করে সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বর্তমান সরকার তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করবে।
বিএনপি আওয়ামী লীগের হাতে বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত একটি দল। বড়ো নেতারা শেখ হাসিনার সরকারের সাথে লিঁয়াজো করে চললেও সাধারণ মাঠ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন পলাতক, মামলার আসামী ও ঘরবাড়ি ছাড়া। এমতাবস্থায় বিএনপির উদারতা দেখানোর কারণ মূলত বৈদেশিক চাপ! বিএনপি ভারত ও আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছে। সবাই কে নিজের ফেভারে রাখার জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কৌশল অবলম্বন করছে। আবার বিএনপি মাইনাস টু ফরমুলা নিয়ে চিন্তিত। বর্তমান সরকার যদি কোনো অজুহাতে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতো নিষিদ্ধ করে দেয় তবে তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী বিপদে পড়বে।
বিএনপি ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সবার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। বিএনপির ধারণা ছাত্রদের ভিন্ন কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে । যদি ছাত্ররা বিএনপির কোনো ক্ষতি করতে চায় তারজন্য বিএনপি রাস্ট্রপতি অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের প্রশ্নে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মতামত দেয়। বিএনপি মনে করে ৭২'র সংবিধান বহাল থাকলে এবং রাষ্ট্রপতি অপসারিত না হলে বর্তমান সরকার চাপে থাকবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম তার এক জনসভায় বলেছেন, এদেশে গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু চলবে না। মির্জা আব্বাস বলেছেন বিএনপি কে মাইনাস করার চিন্তা করবেন না, বিএনপির শিকড় এখন আরো গভীরে। অর্থাৎ এক ধরণের শঙ্কা বিএনপির মধ্যে শুরু থেকেই ছিলো। অথচ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল ও ছাত্রদের আন্দোলনে অভিভূত সাধারণ মানুষের একটি অংশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিএনপির উপর সব ক্ষোভ উগড়াচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের সরকারের সাথে ঘন ঘন যোগাযোগ যেন তারা দেখেও দেখেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



