আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি প্রযোজ্য! আপনার কোনো দলের কার্যক্রম ভালো লাগা শুরু হবে এবং যখন আপনি তাদের আসল রূপ প্রকাশ পাইবেন হতাশ হয়ে যাবেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা গুলো বরাবরই পক্ষপাতি । এরা বিভিন্ন দলের স্লিপার সেল হিসাবে কাজ করে। সময় সময় এরা তাদের পছন্দের দলের বিপক্ষে কথা বলে সাধারণ মানুষ পক্ষ নিলেও আদৌতে এরা সবসময় তাদের পছন্দের দলকে রক্ষা করা মিশনে একটিভ হন যখন দল বিপদে পড়ে। এই যেমন ধরেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার জেড আই পান্নার কথা বলি।ভদ্রলোক তরুণ বয়সে ছাত্রলীগ করতেন; মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্রদের পক্ষে আদালতে রীট করেন পুলিশ যাতে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলি না করে তার জন্য ! তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালের পর এত তরুণ তিনি মারা যেতে দেখেন নি; এটা বন্ধ হওয়া উচিত। জুলাই আন্দোলনের সময় যারা রাস্তায় সক্রিয় ছিলো তাদের কাছে এই রীট কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল। তাই যখন জুলাই আন্দোলনের সময় হুকুম দাতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছিল তখন কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হোক অথবা ভুলে করে হোক জেড আই পান্নার বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে সমালোচনার ঝড় উঠে। জুলাই ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকা একজন ব্যক্তির নামে মামলা কিভাবে হয় তা নিয়ে সবখানে সমালোচনার মুখে জেড আই পান্নার নাম প্রত্যাহার করা হয়।
জুলাই আন্দোলনের পর থেকে অনেক নিউজ মিডিয়া জেড আই পান্নার সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকার গুলো ইউটিউবে এভেইলেবেল আছে।সাক্ষাৎকারে উনাকে আওয়ামী লীগের কম কিন্তু জুলাই আন্দোলনের বেশি সমালোচনা করতে দেখা যায়। বিষয়টি যদিও জুলাইয়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছাত্র-জনতার পক্ষে মেনে নেয়া কষ্টকর তবুও সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে সবাই চুপচাপ পান্না সাহেবের বক্তব্য শুনে যায়। পান্না সাহেব বলেছেন, "স্বাধীনতার পর তিনি এত থানা জ্বালিয়ে দিতে দেখেননি, এত অস্ত্রলুট হতে দেখেন নাই ও এত পুলিশ মারা যেতে দেখেন নাই"। কারা পুলিশ মারলো তাদের সঠিক তদন্ত চান তিনি। তার এই মন্তব্যের সাথে অনেকেই একমত প্রকাশ করেছিলেন।
গত ২১শে নভেম্বর জেড আই পান্না সাহেব উনার মন্তব্যের জন্য আবার আলোচনায় আসেন। তিনি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, সুযোগ পেলে ট্রাইবুনালে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন। এই কথা শুনে সাংবাদিক রা থতমত খেয়ে যান। তারা পুনরায় প্রশ্ন করেন, আপনি জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন ; এখন কেন শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন? পান্না সাহেব বলেন, " আমি নিপীড়িতের পক্ষে "। সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, " শেখ হাসিনা কি নিপীড়নের শিকার "? পান্না সাহেব উত্তরে বলেন, "হ্যাঁ, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন"। পান্না সাহেব দাবী করেন জুলাই আন্দোলনে জড়িত না থাকলেও অনেকের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার পরে নাকি এত গণমামলা হয় নাই। সামনে নাকি গণ গ্রেফতার শুরু হবে। একই ঘটনা বারবার উল্লেখ করে নাকি অসংখ্য জায়গায় মামলা হচ্ছে।
পান্না সাহেবের আসল রূপ ২১শে নভেম্বর বের হয়ে গিয়েছে। তিনি একজন আওয়ামী লীগের স্লিপার সেল যারা দলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটিভ হন। বিগত ১৫ বছর বিএনপি-জামাতের অসংখ্য নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। কোট কাচারিতে ছোটাছুটি করেছেন। কারো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। কেউ কেউ টিকতে না পেরে বিদেশে চলে গিয়েছেন। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ার পিছনে এটিও একটি কারণ! যারা দেশে ছিলেন তারা লীগের সাথে সমঝোতা করে চলতেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে হুকুমের আসামী করে অসংখ্য মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব ঠাকুরগাঁও সমাবেশ করছেন এদিকে উনার বিরুদ্ধে ঢাকায় ময়লার গাড়ি পোড়ানো মামলায় হুকুমদাতা হিসাবে মামলা হয়েছে।
গত নির্বাচনের আগেও জেলে গিয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জঙ্গী নাটক সাজিয়ে অসংখ্য জামাত শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রশাসন কে ব্যবহার করে। তাহলে বিগত ১৫ বছরে কারা প্রকৃত নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন? আওয়ামী লীগ নেত্রীর নির্দেশে এবং কারো কারো মতে ভারতের মদদে বিডিআর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। এর জন্য বিচার শুরু হলেই কি তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে যাবেন? বিচার শুরু হলো না এখনই কেন এমন আলাপ মাঠে ছাড়া হচ্ছে? শেখ হাসিনার মদদে পুলিশ বাহিনী কিলার বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। যে পুলিশ যত নিপীড়ন করতে পারবে তার পুরস্কার তত বড়ো ঘোষণা করা হয়েছিল। বিএনপি-জামাত কি শেখ হাসিনা কে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে? কখনোই না। আসলে শেখ হাসিনা ভয় পাচ্ছেন উনার বিচারের সময় যদি গণজাগরণ মঞ্চের মতো গণ দাবী উঠে উনাকে ঝুলিয়ে দেওয়ার তাই শেখ হাসিনা উনার স্লিপার সেল ব্যবহার করে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ন্যারেটিভ জেড আই পান্না বাংলাদেশে পুনরাবৃত্তি করছেন। ভারতের মিডিয়া রাত দিন আশঙ্কা করে শেখ হাসিনা নিপীড়নের শিকার হবেন; ট্রাইবুনাল নিরপেক্ষ নয়।
জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি-জামাত প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করে। জামাতের স্ট্রং লবিংয়ের জেরে ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ পান জামাত পন্থী তাজুল ইসলাম। বিসমিল্লাতে গলদ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাজুল ইসলাম পূর্বে যুদ্ধপরাধীদের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে লড়েছেন। সে কারণে তিনি জামাতের খুব আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। পান্না সাহেবের মতো বর্ণচোরাদের জন্য বিচারব্যবস্থা কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অস্ত্র হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
অনেক কে দেখি সামনের নির্বাচনে আওয়ামী-বিএনপি/জামাত কে ক্ষমতায় দেখতে চান না। কেহ কেহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন কে ক্ষমতায় দেখতে চান। তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলার আছে, যারা অনেক পুরান দল তাদেরকে ঠিকভাবে চিনতে পারেন না, মাত্রই যারা আত্নপ্রকাশ করলো তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত যে ভুল হবে না কি করে বুঝবেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৩