somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ ও সংঘর্ষ চলছে। পুরান ঢাকায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া একজন কলেজ শিক্ষার্থী কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ দীর্ঘদিন স্থানীয়রা মনে রাখবেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের ভগ্ন দশা নতুন কোনো ঘটনা নয়! জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা রেজিম কে হটিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় গেল। জনগণের প্রত্যাশা ছিলো আকা্‌শচুম্বী! কিন্তু তিনমাস পার হয়ে গেলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ চালাতে পারছে না বর্তমান সরকার! উপদেষ্টা পরিষদে কিছু অযোগ্য ব্যক্তিদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ এখন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু তে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন লোক মারা গিয়েছে। হাজার হাজার ভর্তি হাসপাতালে কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তিনি ড. ইউনূসের খুব ঘনিষ্ঠ ও গ্রামীণ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আদার ব্যাপারীকে দেয়া হয়েছে জাহাজের খবর নেয়ার দায়িত্ব! জুলাই আন্দোলনে আহতদের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নিতেও তিনি ব্যর্থ! উনার সাথে কোনো ভাবেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দের মিলমিশ হচ্ছে না। এত ব্যর্থতা নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন তাও পারছেন না। বাংলাদেশে কখনো এর আগে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কেউ পদত্যাগ করেনি। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিলে তাই নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে।

আমাদের স্বরাস্ট্র উপদেষ্টা তো আরেক কাঠি সরেস মাল! জোর গলায় উনাকে বলতে শুনলাম, দায়িত্ব নেয়ার ১০০ দিনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে তিনি সফল হয়েছেন। বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন! চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই, খুন ও রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ কিন্তু জুলাই আন্দোলনের তিনমাস পরেও পুলিশ বাহিনীর কর্মতৎপরতা নেই। পুলিশ বাহিনী সরকারের কথা শুনছে না। গ্রেফতার করতে ভয় পাচ্ছে। নিজের চাকুরি বাঁচানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ বাহিনীর নিস্ক্রিয় মনোভাবের কারণে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে কিন্তু তা সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট নয়। গতকাল যমুনা পার্ক থেকে ১৯ কোটি টাকার মোবাইল চুরি হয়েছে কিন্তু সেখানে পুলিশ বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আবার হাইকোর্টের ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করার নির্দেশে শ্রমিক দের সাথে ৩/৪ দিন ধরে সংঘর্ষ চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এমনিতেই সমাজে শৃঙ্খলা ফেরাতে নাজেহাল অবস্থা এমন সময় অটো চালকদের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অনেক শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ফলে অন্য কোনো জায়গায় পরিস্থিতি খারাপ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফোর্স পর্যাপ্ত পরিমান যেতে পারছে না। এসব ঘটনায় সরকার পক্ষ বিরোধী পক্ষকে দোষ দিচ্ছে কিন্তু সরকারের মনে থাকা উচিত ছিলো তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করে দ্রুত ইলেকশন দিয়ে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু তা না করে বর্তমানে দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উপর শক্তি ক্ষয় করছে!

শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ফিরে যাই । কলেজ পড়ুয়া ছাত্রটি মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী! তার সহপাঠীদের অভিযোগ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিলো। ছেলেটির পরিবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিতে চাইলে কতৃপক্ষ বাধা দেয়। তারা বকেয়া পরিশোধ করে তারপর ছেলেটিকে নিয়ে যেতে বলে। কিছুসময় পর ছেলেটি মারা যায়। তখন সহপাঠীরা বিক্ষোভ করে এবং পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এলাকায় বিশৃঙ্খলা দেখে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ছেলেদের ধাওয়া দেয়। আজ ঢাকা শহরের প্রায় ৩৫ টি কলেজের শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে পুরান ঢাকায় যায় মারামারি করতে! এদের মধ্যে নটরডেম কলেজ , মুন্সী আবদূর রউফ কলেজ , সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্ররাও রয়েছে। ছাত্ররা প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের গেইট ভাঙচুর করে। তখন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেয়। পরে পুরান ঢাকার দুইটি কলেজ পাল্টা ধাওয়া খেয়ে পিছু হঠে। অন্যদিক ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। কলেজের সামনে থাকা গাড়িও ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পায় না। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। প্রতিটি ক্লাসরুমের প্রজেক্টর ও কম্পিউটার ল্যাব ভাঙচুর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হলে পুলিশ বাহিনী পর্যাপ্ত ফোর্স না থাকায় আসতে অপারগতা জানায়। সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কতৃপক্ষ!

সমাজে যখন সরকারের জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং জনগণ নিজের খেয়াল খুশিমতো নিজের হাতে আইন তুলে নেয় তখন এই অবস্থাকে বলা হয় নৈরাজ্য! এই নৈরাজ্য সামনে আরো বেশি পরিমাণে শুরু হলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিবে এবং যারা দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে হবে। দেশ চালাতে না পারলে সংস্কারের অজুহাতে মানুষ দীর্ঘদিন এই সরকার কে সহ্য করবে না!

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০২
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গড়ে উঠুক ধর্মীয় সম্প্রিতীর মিলন মেলা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৩


ধর্মের নামে একি রক্তের খেলা চেতনাহীন উন্মত্ত মঞ্চে
বিবেকের প্রদীপ যেন নিভে যাচ্ছে অদৃশ্য ঘন কুটচালে
শতাব্দীর সঞ্চিত মানবতার দীপ্যমান শিখা
অন্ধকারের আবরণে ঢেকে দিচ্ছে সম্প্রিতীর গৌরব গাথা।

গোপন লালসার দাবানলে পুড়ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×