somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন !

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিক্ষকতা কে মহান পেশা হিসাবে মনীষীরা বলে থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতা একটি রিস্কি পে্‌শা। এখানে আপনি যে কোন সময় পিটুনী খেতে পারেন। সম্মান পাবেন ততক্ষণ যতক্ষন আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন। আপনার পদোন্নতি নির্ভর করবে আপনি কতো বড়ো রাজনৈতিক দলের কর্মী! আপনি সাদা কে সাদা কালোকে কালো বললে আপনার প্রমোশন হবে না বরং আপনি পিটুনী খেতে পারেন। আপনি ছাত্রীদের সাথে প্রেম করেন ? আপনার যদি বেকআপ না থাকে তবে ধরা পড়লে আপনার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। আপনি ছাত্র- ছাত্রীদের শাসন করেন? তারজন্য আপনি ধোলাই খেতে পারেন । আপনি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন করেন বলে সবাই জানে? সরকার চেঞ্জ হলে আপনার কপালে অপমান অবধারিত । এর মানে হলো আপনি ভালো অথবা মন্দ যে কাজ করুন শিক্ষকতা পেশায় আপনার ধোলাই খাওয়ার রিস্ক অনেক বেশি।

জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসন কায়েম করা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের জীবনে নেমে এসেছে ঘোরতর অন্ধকার ! বিগত সরকারের আমলে অনেক শিক্ষক এত বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় যে ছাত্ররা ও বিরোধী দলীয় শিক্ষকেরা তাদের দালালি ও অপকর্মের জন্য তীব্র ঘৃণা করতো। তাই যখন সুযোগ আসে ছাত্ররা সে সব দালাল শিক্ষকদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য করে। বিষয়টি যদিও দৃষ্টিকটু দেখায় তবে এই ধরণের ঘটনা যে কোন কারণে ভবিষ্যতে আবার না ঘটতে পারে তার জন্য উচিত ছিলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পদত্যাগ করানো । জোর করে শিক্ষকদের পদত্যাগ করানোর ঘটনা যেন দাবানলের মতো সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন শিক্ষক যথাযথ ড্রেস কোড পড়ে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আসতে বলায় তাঁর উপর হামলা হয়। মাদরাসার শিক্ষক কমিটির দুর্নীতির কথা সবাইকে বলে দিবেন হুমকি দেওয়ায় তার উপর হামলা করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা দেখে দেখে লিখছে শিক্ষক তাই শাস্তি দিয়েছেন সেজন্য তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। জোর করে শিক্ষককে পদত্যাগ করানোয় হার্ট এট্যাক হয়ে মারা যান একজন শিক্ষক । কারা এসব হামলা করছে ? অধিকাংশ হামলার ঘটনার সাথে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও কোন কোন ক্ষেত্রে বিরোধী মতের শিক্ষকদের জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে । অর্থাৎ শিক্ষকদের চাইলেই পিটুনী দেয়া যায় এমন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনার আমলে শিক্ষার্থীদের কোমল মনে যাতে আঘাত না পায় তাই বেত্রাঘাত নিষিদ্ধ করা হয়। এতে শিক্ষকেরা বিপদে পড়ে যান ।ছাত্র -ছাত্রীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। কিন্তু তাদের অপরাধের শাস্তি দেয়া যাবে না তার জন্য শিক্ষকেরা জাস্ট শিক্ষার্থীদের মায়ের মমতায় বোঝাতে শুরু করেন। কিন্তু বাবার মতো শাসনও দরকার ছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের। সে রকম শাসন না পাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের দুঃসা্হস অনেক বেড়ে যায়। আবার ছাত্রদের জোর করে প্রাইভেট পড়ানোর ফলে শিক্ষার্থীরা স্যার দের অর্থলোভী ও দুর্বল মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলোর দালালি করে বাদবাকী মান সম্মান শেষ!

বরিশালের ঝালকাঠিতে একজন প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করায় অভিভাবক ও স্থানীয়দের হাতে বেধড়ক পিটুনী খেয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সাক্ষর নেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জলের সাথে স্কুলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের ঝামেলা চলছিল। তোফাজ্জল সাহেবের নামে অভিযোগ হলো তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয় বিএনপির স্কুল কমিটিতে যোগ দিতে চাওয়া লোকজন। স্কুলে জানুয়ারি মাসে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। কতিপয় ছাত্রী নাচ পারফর্ম করার জন্য প্রাকটিস করছিল। প্রাকটিসে ভুল হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাদের বেত্রাঘাত করেন। এতে অনেক ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকদের নিকট এই খবর পৌছানো মাত্র তারা স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে ধোলাই দেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধোলাইয়ের সময় অন্য কোন শিক্ষক এগিয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে প্রটেক্ট করেনি।

সমাজে একজন রিকশাওয়ালা, যানবাহনের শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে যে একতা আছে শিক্ষকদের মধ্যে নেই। তাই আপনি কারো পক্ষ নেন অথবা না নেন এবং শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে শাস্তি দেন তবে উহা আপনার জন্য জনতার আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। আর বেধড়ক পিটুনী খাওয়ার রিস্ক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাইলে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×