ছাত্র প্রতিনিধি বলতে ইন্টেরিম সরকারে থাকা তিনজন সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কথা বলা হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাত মূলত জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়াকে কেন্দ্র করে। সমন্বয়করা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রক্লেমেশন ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করে; ঘটা করে তারা সেটা প্রচার করতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়াতে। ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং শফিকুল আলম কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান ছাত্ররা নিজ উদ্যোগে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করেছে। প্রক্লেমেশন ঘোষণার সাথে সরকার জড়িত নয়। নানা মহল থেকে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয় নতুন প্রক্লেমেশন ঘোষণা নিয়ে। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল উষ্মা প্রকাশ করে যে ছাত্ররা তাদের সাথে কোন যোগাযোগ না করেই জুলাই ঘোষণাপত্রে কি লেখা হয়েছে তারা কিছুই জানেন না। অন্যদিকে ছাত্রদের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে জুলাই ঘোষণাপত্রের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে অনুরোধ জানানো হয়। কেউ যদি এই ঘোষণাপত্রের সাথে একাত্মতা প্রকাশ না করলে তারা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে তকমা পাবে বলে হুশিয়ারি জানানো নয়। ৩০শে ডিসেম্বর রাতে সরকারের পক্ষ থেকে ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করে আশ্বাস দেয়া হয় যে সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সকল রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ ঘটাতে সাহায্য করা স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে। এতে ছাত্রদের ডাকা ৩১শে ডিসেম্বরের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
২০২৪ সালের ১৬ই জানুয়ারি জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধন ও সকল রাজনৈতিক দলের মতামত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একটি চমকপ্রদ তথ্য জানান সবাইকে। ছাত্র প্রতিনিধিরা জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। তিনি ছাত্রদের বলেছেন যে এই মূহুর্তে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি ছাত্রদের আরো বলেন, জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হলে তাদের ৫ই আগস্টের সময়ে ফেরত যেতে হবে। সে সময় সবাই শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। এখন জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হলে সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এতে ছাত্র প্রতিনিধিরা মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন। তবে তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রধান উপদেষ্টা সঠিক কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই প্রক্লেমেশন দেয়া হবে এমন আশ্বাসে ৩১শে ডিসেম্বরের প্রোগ্রাম স্থগিত রাখা হয়।
ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আছে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। ড. ইউনূস ও ছাত্ররা পরস্পরকে বোঝার জন্য এই সময় একেবারে কম নয়। ড. ইউনূসের মধ্যে আগের মতো ছাত্রদের নিয়ে উচ্ছ্বাস কাজ করে না। তিনি একসময় বলেছিলেন, ছাত্ররা উনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। ছয়মাস পার হওয়ার পর অবশ্যই ড. ইউনূস বুঝতে পেরেছেন যে সকল পক্ষ বা দলকে উপেক্ষা করে শুধু ছাত্রদের কৃতিত্বকে বড়ো করে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা উচিত হয়নি। সবাইকে নিয়ে চলতে না চাইলে কেবল পদে পদে হোঁচট খেতে হবে।
ইন্টেরিম সরকারের উপর বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার গুরু দায়িত্ব এই সরকারের হাতে ন্যস্ত। যেকোন সংকট মোকাবেলা করতে হলে ইন্টেরিম সরকারের মধ্যকার বিভিন্ন পক্ষকে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে একে অপরের সাথে বন্ধন অটুট রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮