

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সর্বমহলে চলছে আলোচনা। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই। তারা আরো দাবী জানিয়েছে যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাংলার মাটিতে বিচার হওয়ার পূর্বে নির্বাচনে অংশ নেয়া তো দূরে থাক কোন নির্বাচন যাতে না হয় তার ব্যবস্থা ইন্টেরিম সরকার কে করতে হবে। তবে রিসেন্টলি ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর প্রধান একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত ইন্টেরিম সরকার নিবে না বলে জানায়। ছাত্র প্রতিনিধিরা যেহেতু এই বক্তব্যের পর কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি তাই ধরে নেয়া যায় তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
রাজনৈতিক দল যারা জুলাই অভ্যুত্থানের জন্য ধারাবাহিক ভাবে পথ তৈরি করে এসেছিল তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - বিএনপি অন্যতম। বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছিল যে তারা আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়; জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে তাদের কোন আপত্তি নেই। বিএনপি পুরো ব্যাপারটা জনগণের উপর ছেড়ে দিতে চেয়েছে। জনগণ ডিসাইড করবে যে তারা আওয়ামী লীগ কে গ্রহণ করবে নাকি বর্জন করবে! বাংলাদেশের অন্যতম আন্ডার গ্রাউন্ড পলিটিক্স করা ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল যারা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রাজনীতি করে ক্ষমতায় গিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাদ দিতে চায় সে দলের বর্তমান মহাসচিব আজ বরিশালে এক জনসভায় আজ বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভাগ্যে কি আছে সেটা জনগণ বিচার করবে। মহাসচিব সাহেব একদা ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাক্ষাতকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন তাদের দল কোন অন্য কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন যেমন জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন দেশের প্রভাব শালী রাষ্ট্রদূতেরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসার আগে থেকেই বলে আসছিল দেশে সবার অংশগ্রহণে আগামীতে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় তারা । রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে এই ব্যাপারে তাদের মতামত জানার জন্য বারবার বৈঠকে বসেছেন বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধু ও সহযোগীরা। উদ্দেশ্য পরিস্কার যে আওয়ামী লীগ যাতে বাংলাদেশে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে তার নিশ্চয়তা তারা চায়।
ইন্টেরিম সরকার দেশের ভেঙে পড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে । ১৫ই জানুয়ারি সেই কমিশন তাদের সুপারিশ গুলো প্রধান উপদেষ্টার নিকট জমা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন স্ংস্কার কমিশনের প্রধান হচ্ছে বদিউল আলম মজুমদার। দায়িত্ব গ্রহণের পর বদিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন , আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে। তবে আজ মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা তার দায়িত্ব ইন্টেরিম সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, তার কমিশন চায় না কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দূরে থাকুক। এই বক্তব্য থেকে মনে হতে পারে তিনি মনে প্রাণে চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক কোন সমস্যা নেই।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কতিপয় সুপারিশ নিয়ে এবার আলোচনা করা যাক। কমিশন সুপারিশ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কেউ নির্বাচনে দাড়াতে চাইলে কমপক্ষে পাঁচশত জনের সাক্ষর ও হলফনামা লাগবে। বিদ্যমান নির্বাচনী আইনে একজন ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাড়াতে হলে এক শতাংশ লোকের সমর্থন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করলে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিদ্যমান নিয়মে এক শতাংশ সমর্থকদের সাক্ষর সংগ্রহ করা কষ্ট সাধ্য কাজ এবং এতে সাক্ষরদাতা কাকে সমর্থন করে তা এক্সপোজ হওয়ার যেমন সম্ভাবনা থাকে ঠিক তেমনি নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সুপারিশে একই ধরণের শঙ্কা রয়েছে। সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, গুম-খুন, সাংবাদিক নির্যাতন, নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত, ফেরারী আসামী, দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য বিচারিক আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
নির্বাচন সংস্কার কমিটির সুপারিশ আগামী নির্বাচনের পূর্বে বাস্তবায়ন করতে হলে অন্যান্য সব দলের ঐক্যমত্যের প্রয়োজন। তখন দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। বিএনপি-জামায়াত-নাগরিক কমিটির সদস্যরা ফ্যাসিবাদের দোসর, গুম-খুনের অনুসারী হিসাবে মামলা ঠুকে দিলে প্রার্থীকে নিজের নিরাপত্তার জন্য হয় ফেরারী হতে হবে অথবা জেলে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের জন্য তিনি অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। স্বতন্ত্র হিসাবে দাড়ালেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিকট প্রকৃত পরিচয় জানা থাকার কারণে তীব্র বাঁধার মুখোমুখি হতে হবে।
সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে যখন আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ হবে তখন তারা উপরে উল্লেখিত সুপারিশের বিষয়ে একমত হতে পারেন কিনা তাই এখন টক অব দি টাউন । কারণ সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে তা শুধু আগামী নির্বাচনের জন্য নয় ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্যও প্রযোজ্য হবে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সরকার উপরে উল্লেখিত সুপারিশকে বৈধতা দেয় কিনা তাও দেখতে হবে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে ইন্টেরিম সরকার, বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মতানৈক্য রয়েছে। এখন যে গ্রুপ সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী তাদের উপর সম্পূর্ণ বিষয়টি নির্ভর করবে যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



