somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকার কি আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ?

০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জুলাই অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দাবী উঠেছিল পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে কোনো ভাবেই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা সহ সকল আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্নসমর্পণ ব্যতীত দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। কিন্তু সময় যত গিয়েছে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে যে ক্রেজ ছিলো তা কমে গিয়েছে। সময়ের সাথে মানুষ আস্তে আস্তে সকল দুঃখ ভরা স্মৃতি ভুলে যেতে থাকে। এভাবে ২০২৪ সালের সমাপ্তি ঘটে।

নতুন বছরে আওয়ামী লীগ কিছু তৎপরতা দেখাতে সিদ্ধান্ত নেয়। শেখ হাসিনা ভারচুয়ালি নেতা কর্মীদের সাথে আলাপ করবেন এমন বার্তা যখন দেশে ছড়িয়ে পড়ে তার রিয়াকশন স্বরূপ ধানমন্ডি ৩২ সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ হরতাল কর্মসূচি ডেকে কর্মীদের চাঙা করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ঘন ঘন কর্মসূচি দেওয়ায় সমাজের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রব উঠে। সরকারের মধ্যে এমন কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু সব হিসাব নিকেশ উল্টে যায় যখন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকার কে পরামর্শ দেন। সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের পর যারা আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরোধিতা করেছিলো তারা সবাই চুপ মেরে গিয়েছেন। সবাই এখন শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দাবী করছেন। জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করতে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনও বিরোধী পক্ষের চুপ মেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ কে তারা নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। জনগণের উপর তারা আওয়ামী লীগের ভাগ্য ছেড়ে দিতে চেয়েছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে যেন বিএনপির কথার প্রতিফলন ঘটলো। পূর্বে আওয়ামী লীগের ভাগ্য জনগণ নির্ধারণ করবে এমন আলাপ শুনলে লম্ফ-জম্প করে ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা দিতো তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা অন্য একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা সেটা তাদের কেই ভেবে দেখতে হবে। এমন বক্তব্য শুনে বিপ্লবীদের মাথায় রক্ত উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান আওয়ামী লীগের দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয়ে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে এসব উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দল গোছাতে ব্যস্ত। সরকার ব্যস্ত মব সামলানো নিয়ে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করার মতো ম্যোরাল গ্রাউন্ড নেই। তাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে যে পাহাড়সম অপরাধের অভিযোগ তার বিচার শেষ হতে এক যুগ পার হয়ে যাবে। শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ নেতা সীমাহীন অপরাধ করে এখন বিদেশে পলাতক। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে শেখ হাসিনার কোন পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা নেই। ভুল রাজনীতি করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন তিনি। কিন্তু আম্লিকের সাপোর্টার রা এখনও স্বপ্ন দেখছে ১৯৮১ সালের মতো শেখ হাসিনা আবার প্রত্যাবর্তন করবে। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। ২০১৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত ছলচাতুরি করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পরও মনের আশা পূর্ণ হয় নাই। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে এমন বয়ান দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তি করে রেখেছিলো তারা। জুলাই অভ্যুত্থানে পতনের পরও তাদের এসব প্রচারণা বন্ধ হয় নি। দেশ জঙ্গীবাদের দখলে এমন ন্যারেটিভ বিশ্বে তারা প্রচার করছে। শেখ হাসিনার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এসব জঙ্গীবাদ দমন করা। কিন্তু তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে সিরিয়া-আফগানিস্তান বানানোর ক্ষেত্র তৈরি করে গেছেন। এরকম দল আবার দেশে ফিরে কি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করবে ? শেখ হাসিনা উনার বাবার অবদান কে বাংলাদেশে এত বেশি এসটাবলিশ করতে চেয়েছিলেন যে তা সাধারণ মানুষের বদহজমের কারণে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অনেক সাপোর্টার এখন বিরোধী পক্ষের উপর নাখোশ কারণ তারা কথিত বিদেশি শক্তির সাহায্যে পতন ঘটায়েছে। কিন্তু একই কাজ তো আওয়ামী লীগ ২০১৪ সাল থেকে করে আসছে। ভারত-চীন-রাশিয়া সবাইকে ম্যানেজ করে এবং বিরোধী শক্তিকে দমন নিপীড়ন করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো। এত এত উন্নয়ন করেছে তাহলে নির্বাচনে এত কারচুপির কারণ কি ? আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো স্বাধীনতা কামীদের সংগঠন নেই তাই নিজের ক্ষতি করে আওয়ামী লীগ কে সাপোর্ট দিতে হবে। দেশের মানুষজন রাজনীতি বুঝে না, আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলে রাজনীতিবিদ নেই এবং আওয়ামী লীগের পতন হলে স্বাধীনতাবিরোধীরা কালো থাবা বসাবে তাই যে কোন মূল্যে তাদের ক্ষমতায় থাকা জরুরি। দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত করার বিপরীতে আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলো আওয়ামী লীগ।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের বিগত পনেরো বছরের স্বভাব পরিবর্তন হয় নি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা শাহাজাহান খান আশা করেন আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন। দেশ পরিচালনার ব্যর্থতা উনাকে অনুতপ্ত করেনি। এরকম ক্রিমিনাল মাইন্ডের একটি দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে যদি নির্বাচনে প্রার্থী হয় তাহলে ভবিষ্যতে ইন্টেরিম সরকার কে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:২৬
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×