সমালোচনা – বলা হয় জীবনানন্দ দাশের অতি বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’-এর উৎস এডগার অ্যালেন পো’র কবিতা ‘টু হেলেন’ থেকে এবং অনেক সাহিত্য বোদ্ধা দুটি কবিতার মধ্যে বেশ মিল পেয়েছেন। তাদের মতে পো’র ‘হেলেন’ থেকে হয়েছে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’। দেশে দেশে অনেক কবি সাহিত্যিক পো’র লেখায় প্রভাবিত হয়েছিলেন যেমন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘একই গাঁয়ে’ আর এডগার অ্যালেন পো’র ‘অ্যানাবেল লি’ একই কবিতা। এক লেখকের প্রতি অন্য লেখকের এসব প্রভাব বা ছায়া বিস্তার করার এসব জটিলতার অবসান পো নিজেই দিয়ে গেছেন, একবার তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, একজন বড় লেখক হতে হলে কী লাগে? পোর মতে, একটা বড় ডাস্টবিন লাগে। লেখা নামক যেসব আবর্জনা তৈরি হবে তা ফেলে দেয়ার জন্য। লেখকরা ক্রমাগত আবর্জনা তৈরি করেন। নিজেরা তা বুঝতে পারেন না।
—————————————————-
স্বকীয় বৈশিষ্টে সর্বকালের সেরা নান্দনিক কবিতা – -হেলেনের প্রতি
মূল- এডগার অ্যালেন পো
Eng- To Helen
——————————————————-
হেলেন, তোমার সৌন্দর্য আমার কাছে-
দূরবতী কোনো এক সময়ের নিশিয়ান জলযানের মতো ।
সুরভী মাখা সাগরের তীর ঘেঁষে
ক্লান্ত,হতাশ ভ্রমণকারীকে পৌঁছে দেয় নিজ তীরভূমে’
বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে দীর্ঘ ভ্রমণ করা
তোমার বাদামী চুল, চিরায়ত মুখশ্রী
তোমার শীতল চাহুনি নিয়ে যায়-
গ্রিসের রূপ মহিমায়,
আর প্রাচীন রোমের গৌরব ভূমিতে।
নিশ্চয় ! তোমার উজ্জ্বল জানালার কুলুঙ্গিতে
আমি তোমাকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি,
তোমার হাতে আগুনের বাতি!
আহ, রাজকুমারী পরমাত্মা, সে অঞ্চলগুলি থেকে পৌঁছে দেবে –
পবিত্র ভূমিতে !
———————————————————————-
ফুটনোটঃ অ্যাডগার অ্যালান পোর (জন্ম ১৯ জানুয়ারি, ১৮০৯ : মৃত্যু ৭ অক্টোবর, ১৮৪৯) পো একাধারে কবি, গল্প লেখক, প্রকাশক, সমালোচক ও গোয়েন্দা গল্পের জনক। ‘টু হেলেন, পনের লাইনের এই কবিতা চাইল্ডহুড বন্ধুর মাকে সম্মান জানিয়ে লেখেন। পোর মা এলিজাবেথ আরনল্ড পো ও বাবা ডেভিড পো জুনিয়র। দুজনই ছিলেন অভিনেতা। দুজনেরই অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। তাঁর মা ২৪ বছর বয়সে ১৮১১ সালের ৮ ডিসেম্বর যক্ষ্মা রোগে মারা যান। এর তিন দিন পর ২৭ বছর বয়সে (১১ ডিসেম্বর) মারা যান বাবা। পোর তখন বয়স দুই বছর। এরপর পো অন্য এক ধনাঢ্য পরিবারে দত্তক ছাড়াই পালকপুত্র হিসেবে বড় হন। এই পরিবার তাকে স্কুলে ভর্তি করায়। ১৮২৩ সালের কোনো একদিনের ঘটনা। পো সহপাঠী রবার্টের বাসায় গিয়েছিলেন। অনাথ পো সহপাঠীর বাসায় গিয়ে তার মা জেনের আদর-স্নেহ পেয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন। জেন ঘরে ঢুকে পোর হাত দুটি ধরে মৃদু ও মোলায়েম কণ্ঠে অভ্যর্থনা জানান। হৃদয়নিংড়ানো এই অভ্যর্থনাবাক্য পোর মতো বঞ্চিত অনাথ বালকের সংবেদনশীল মনের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল, যাকে বলে চেতনায় গেঁথে যাওয়া। তিনি ঘোরের মধ্যে বাড়ি ফেরেন। তাঁর জীবনে একটাই চিন্তা,একটাই আশা—আবার কখন তিনি সেই মধুর ও অমায়িক কথাগুলো শুনবেন। যে কথাগুলো তাঁর নিরানন্দ পৃথিবীকে মধুর করে তোলে এবং হৃদয়ের একাকিত্বকে নতুন আনন্দে ভরিয়ে দেয়।জেনের মৃত্যুর পর ১৯৩১ সালে পো টু হেলেন কবিতা লেখেন। মৃত্যুর আগে নিউইয়র্কের কাছাকাছি ছোট্ট এক কুটিরে পো একা একা বাস করতেন। ১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর হঠাৎ তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের রাস্তায়। জোসেফ ওয়ালকার নামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে ওয়াশিংটন কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তাররা তাঁকে বাঁচাতে পারেন নি, অনন্তের পথেই যাত্রা করেন তিনি। ঠিক কী কারণে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তার কারণ আজও জানা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, মৃত্যুর আগে অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন তিনি। যার কারণে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৪১