তবে কী সবশেষে ‘পাপড়িকে’ বোঝাতে পেরেছেন তিনি। তবে কী তার ঘুম পেয়েছিলো। নাকি ‘মায়াভরা’ পৃথিবীর মায়া আর টানছিলো না তাকে। যদি নাই বা টানে কেনই বা একটি স্কুল গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্কুল হবে কোনো এক অজপাড়াগাঁয়ে। ঘণ্টা বাজছে। খেতের আল ধরে বই-খাতা নিয়ে দৌড়ে আসছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। ওদের মায়া মায়া চোখে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন একটি নতুন বাংলাদেশ।
নাকি সেই সাতাশ মে থেকে স্বপ্ন নিয়ে ভাবছিলেন, যেদিন থেকে তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো। না... না. না..। আমাদের পপসম্রাট সবার প্রিয় আজম খান কৃত্রিমতা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাননি। কৃত্রিমতা তার কাছে আরাধ্য নয়। কৃত্রিমতা তার ধাতে নেই।
গুরুর প্রথম কনসার্ট দেখি ১৯৯২-৯৩ এর দিকে। সালটা ঠিক স্পষ্ট মনে নেই। ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। জেলা স্কুলের সেই সাদা শার্ট আর প্যান্ট পড়ে সোজা চলে গিয়েছিলাম টাউনহলে। কুমিল্লা টাউনহল। সঙ্গে সম্বল ২৩টি টাকা। সেই সময়ে ২০টাকা ছিলো টিকিটের দাম। সেদিনের কথা লিখতে গিয়ে কান্না পাচ্ছে। সত্যি কান্না পাচ্ছে। স্টেজে উঠতে দেখেই ‘গুরু’ ‘গুরু’ চিৎকারে কানের কপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। স্বভাবমতোই তিনি তার লম্বা হাত নাড়লেন। পরনে ছিলো একটা মোটা কাপড়ের লাল শার্ট। আর সাদা প্যান্ট। কিছুক্ষণ টুং টাং শব্দের পর গাইতে শুরু করলেন। আবছা আবছা মনে আছে। কনসার্ট শেষ করেছিলেন রেল লাইনের সেই বস্তিতে জন্মেছিলো একটি ছেলে... এই গানটি দিয়ে।
আজ আমার স্মৃতিপটে থাকা সেই জীবন্ত গুরু আর নেই। তিনি চলে গেছেন। চলে গেছেন এই মায়াভরা পৃথিবী ছেড়ে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে আরো একটা কারণে, তাকে মেরে ফেলা হয়েছিলো আরো কদিন আগেই! মিডিয়া ওয়ালারা। ব্রেকিং নিউজ। ‘পপসম্রাট আজম খান মারা গেছেন।’ স্ক্রলে এমন দুঃসংবাদ দেখে বুকের মধ্যে হু হু করে উঠলো। সেদিন দেখেছিলাম মিডিয়া ওয়ালাদের কাছে একজন মানুষের মৃত্যুর চেয়ে ব্রেকিং দেওয়াটা কতোটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’। এসএমএস ব্রেকিং দিয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ও করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। তখন সত্যিই ভাবতে কষ্ট হচ্ছিলো একজন আজম খানের মৃত্যুমূল্য মাত্র দুইটাকা (ভ্যাটসহ ২টাকা ৩০ পয়সা)।
হয়তো কাল পত্রিকায় কিছুটা স্থানও হবে তার। কেউ কেউ বক্স দেবে। বিশেষ আইটেম দেবে। খুব কাছে থেকে দেখা একজনের সাক্ষাৎকার দেবে। যেমন দেখেছিলাম আজম খানকে- এমন শিরোনামে কেউ কেউ লিখবেন। আর আমার মতো স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সেই লিখা পড়ে কাঁদবে। আসলেই তো আমরা সবাই ব্যবসায়ী। ব্যবসা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আবেগ নিয়ে ব্যবসা!
আবার কেউ কেউ বলবেন, যাক বেঁচে গেলাম। হরতাল ছাড়া আজ কোনো ভালো হট নিউজ ছিলো না। আজম খান মরে গিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে গেলেন। আজম খানের মৃত্যু 'হট নিউজ', 'ভালো আইটেম'।
মিস্টার আজম খান,
মানুষ তোমাকে যতোই গুরু গুরু বলুক, তুমি নেই। তোমার না থাকা নিয়ে ‘ব্যবসা’ হবে। ব্যবসা হবে তোমার স্বপ্ন নিয়ে। তোমার ছবি নিয়ে। তোমার গান নিয়ে। উন্মাদনা হবে, আবেগের। কষ্টের নৃত্য হবে। তুমি কিছুই বলতে পারবে না। তোমার বলার কিছু নেই। কি বলবে শুনি? ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান গেয়ে তোমার হাতে যখন কয়েক হাজার টাকার একটা খাম ধরিয়ে দিতো, তখনও যেমন তুমি কিছু বলতে পারোনি, এখনও পারবে না! ওরা তোমাকে নিয়ে সব সময় ব্যবসা করেছে। এখনো করছে। ভবিষ্যতেও করবে।
আর আমরা সেই 'ব্যবসায়ীদের' প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা আর ঘৃণা নিয়ে তোমাকে জানাই হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। তুমি ছিলে, তাই হারানোর কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারিনি এতোদিন। তোমার গান দিয়েই শেষ করছি। গুরু তোমার আত্মা শান্তি পাক।
সারা রাত জেগে জেগে, কতো কথা আমি ভাবি
পাপড়ি কেন বোঝে না, তাই ঘুম আসে না
তুমি আমি কেন দূরে দূরে, খুঁজে বেড়াই ঘুরে ঘুরে
মন কী যে চায়, থাকে শুধু বেদনায়
এই মায়াভরা পৃথিবী ছেড়ে, চলে যাবো চিরতরে
সবাই চলে যায়, কতটুকুই বা পায়
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।