somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তি দিবস ও জঙ্গলরাজ্যের দুঃখগাঁথা

২৬ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জঙ্গলরাজ্যে সবাই খুব সুখে আছে। সবাই পেট ভরে খেতে পারে। নিরাপদে চলতে পারে। এমনটাই দেখা যায় সেই রাজ্যের পেপার পত্রিকায়। টেলিভিশনগুলো ও সুখের সংবাদ প্রচার করায় ব্যস্ত।্রোজ সংবাদ সংযোগে জানানো হচ্ছে , রাজ্যের উত্তরপ্রান্তে বাতাবীলেবুর ব্যাপক ফলন হয়েছে, পাকা লেবুর সুগন্ধে ম ম করছে পুরো রাজ্য। বছর ঘুরে জঙ্গলরাজ্যের 'মুক্তি দিবস 'কাছে চলে এলো । এবার ব্যাপক তোড়জোড়ের সাথে মুক্তি দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছে । মুক্তি দিবস জঙ্গলের পশুদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক অনেক বছর আগে ভিনদেশী মানুষদের কাছ থেকে জঙ্গলের পশুরা মুক্তি পেয়েছিল সম্মিলিত যুদ্ধের মাধ্যমে। পশুদের ইতিহাসে সেই একবারই সব পশুরা সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়েছিল মানুষের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। কয়েকমাসের জন্য ভুলে গিয়েছিল যে সব পশু আসলে আলাদা । কেউ ঘাস খায়, কেউ মাংস খায়, কেউ দুর্বল , কেউ বা ভীষণ শক্তিশালী। বাঘে মহিষে একঘাটে পানি খেয়েছিল। সবাই এক হয়ে নিষ্ঠুর মানুষের লোভী থাবা থেকে মুক্ত করে নেয় এই জঙ্গল- সব পশুর একমাত্র এবং প্রাণপ্রিয় আবাসস্থল। মুক্তি দিবস তাই জঙ্গলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে জঙ্গলরাজ্যের সূচনা হয়েছিল তা আজও পূরণ হয় নি। কথা ছিল সব পশুর জন্য একটা নিরাপদ জঙ্গল গড়ে তোলা হবে। নিরাপদে জীবন যাপন করার জন্য সব পশু সমান সুযোগ পাবে। হোক সে দুর্বল বা শক্তিশালী। কিন্তু তেমনটা আর হয়ে উঠে নি। জঙ্গলের মুক্তির পর থেকেই জঙ্গল চলেছে বাঘ বা সিংহএর রাজত্ব। রাজা যেই হোক জঙ্গলের দুর্বল নিরীহ পশুদের দুঃখ ঘোচেনি। প্রত্যেকবার রাজা নির্বাচনের পর পরই জঙ্গলের নিরীহ , সংখ্যায় কম পশুদের উপর নেমে এসেছে নির্যাতন আর অত্যাচারের খড়গ কৃপাণ। রাজা যেই হোক , নধর হরিণের কচি মাংসের কাবাবে হয়েছে তাদের অভিষেক। আবার যখন পরের বার রাজা নির্বাচনের সময় এসেছে , তাদের সমর্থনের দরকার হয়েছে তখন তারা হরিণদের সবুজপ্রদেশে গিয়ে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছে। বলেছে এবার মসনদে বসলে হরিণদের রক্ষা করা হবে, মুক্তভাবে তৃণভূমিতে বিচরণে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করা হবে না। কিন্তু জয়ী হবার পরপরই ক্ষমতাসীন বাঘ বা সিংহ ভুলে গেছে তাদের সেই প্রতিশ্রুতি। কচি হরিণের উষ্ণ রক্তে কন্ঠ ভিজিয়ে ল্যাজগুটিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসেছে মসনদে। জঙ্গলে যে শুধু হরিণেরাই কষ্টে আছে এমনটা নয়। আসলে বাঘ-সিংহ আর তাদের পাচাটা কিছু হায়েনা-শেয়াল বাদে জঙ্গলের সব পশুই কষ্টে আছে। যখন বাঘ রাজা হয় তখন বাঘেদের অত্যাচারের সীমা -পরিসীমা থাকে না। পুরো বাঘ জাতটাই জঙ্গলের সব সুযোগ সুবিধা কুক্ষিগত করে রাখে। রাজাবাঘ, মেছো বাঘ , চিতাবাঘ , সাদা বাঘ , কালো বাঘ, গেছো বাঘ - যার নামের সামনে বা পেছনে বাঘ শব্দটা আছে তারা সবাই তখন রাজবংশ। অভিজাত শ্রেণী। কেউ তাদের সমালোচনা করতে পারে না। এমনকি বাঘ শব্দটা থাকায় বাঘঢাশ ও তখন খুব গুরুত্ব পায়। কথায় কথায় কাউকে প্রশংসা করতে ' বাঘের বাচ্চা ' শব্দটা ব্যবহার করতে হয়।
সিংহএর সময়টাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। রাজসিংহীর কেশরের মত দেখতে লোমের স্টাইল খুব পশুপ্রিয় হয়ে যায়। পা চাটা শেয়াল হায়েনারা পর্যন্ত ঘাস লতাপাতা দিয়ে সিংহীর কেশরের মত উইগ বানিয়ে পড়ে। নিজেদের অভিজাত বানানোর কি জঘন্য চেষ্টা! তখন কথায় কথায় জঙ্গলের পশুদের বলতে হয় ' সিংহের মত সাহস' কিংবা ' সিংহহৃদয় ' এসব।
আসছে মুক্তি দিবসেও জঙ্গলরাজ্যে ভীষণ জাঁকজমক হবে, বিশাল বড় পশুসমাবেশ হবে। অনেক ভাল ভালো কথা হবে। সাম্যের কথা হবে, ঐক্যের কথা হবে , ভ্রাতৃত্বের কথা হবে। কিন্তু জঙ্গলের নিরীহ পশুরা ভাবতে পারেনা তাদের এ দুঃখ থেকে কবে মুক্তি মিলবে!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গ্রামে থেকে যাওয়ার চিন্তা করছি

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৬

ঢাকা ছেড়ে গ্রামে
ঢাকা ছেড়ে আমার নিজ গ্রামে থাকছি প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ বেশ ভালোই লাগছে! যদিও শীতের রাতে বাড়ির পাশে শিয়ালদের হুক্কাহুয়া মাঝে মাঝে ছওমকে দেয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×